জার্মানির যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে IELTS ছাড়াই ভর্তি হতে পারবেন: জার্মানির কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। পড়তে গেলে বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস (IELTS-International English Language Testing System) চায়। জার্মানির এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আইইএলটিএস ছাড়াই ভর্তি হতে পারবেন। তবে আইইএলটিএসের বিকল্প একটি পরীক্ষা নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভর্তির পর মিলতে পারে বৃত্তিও। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শেষে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগটা বেশি। পড়াশোনা শেষে অডি, বিএমডব্লিউ, ভক্সওয়াগন ও মার্সিডিজের মতো কোম্পানিগুলোয় চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
যে কারণে আপনি জার্মানিতে পড়তে যাবেন:
জার্মানিকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে বেছে নেয়ার কিছু আছে। সেগুলো হলো—
- শীর্ষস্থানীয় জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৃত্তির সুযোগ ও স্নাতকের পর কর্মসংস্থান অনেকটাই নিশ্চিত করে।
- ডেন্টাল, মেডিসিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার, আর্কিটেকচার, ব্যবসা ও আইনে পড়ার সুযোগ।
- আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিক পাঠ্যক্রম।
- জার্মানিতে নিজ খরচে পড়ার সুযোগ। জার্মানিতে এসে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কারণ, এতে DAAD বৃত্তিও পেতে সুবিধা পেতে পারেন।
- জার্মান ভাষা বিনা মূল্যে শেখার সুযোগ। আর এতে জার্মানিতে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।
আইইএলটিএস (IELTS) ছাড়াই কোন কোন জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া যাবে
বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণের জন্য আইইএলটিএস প্রয়োজন। তবে ইউরোপের দেশ জার্মানিতে এমন অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা আইইএলটিএস বা অন্য কোনো ভাষা–দক্ষতা পরীক্ষা না দিয়েই শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ করে দেয়। এমন জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—
- ইউনিভার্সিটি অব কাইসারস্লটার্ন
- ইউনিভার্সিটি অব সিয়েজেন
- ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন
- ইউনিভার্সিটি অব গিজেন
- ইউনিভার্সিটি অব কোবলেঞ্জ অ্যান্ড ল্যান্ডউ
- ব্রাউনচেইইউগ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি
- এসলিনজেন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স
আইইএলটিএসের বিকল্প পরীক্ষা কী?
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আইইএলটিএস ছাড়া ভর্তির সুযোগ আছে। তবে আইইএলটিএসের বিকল্প একটি পরীক্ষা নেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ভাষা–দক্ষতার প্রমাণ হিসেবেই তারা এ পরীক্ষা নেবে। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণের জন্য পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোর্সে সম্পূর্ণরূপে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয়েছিল এমন একটি সনদ জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হবে।
অর্থাৎ সর্বশেষ পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব কোর্স যদি সম্পূর্ণরূপে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয়, সেটির সনদ জমা দিতে হবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রমাণের জন্য। শিক্ষার্থী স্নাতকে সব কোর্স সম্পূর্ণভাবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়লে আইইএলটিএস লাগবে না।
শিক্ষার্থী যদি পিটিই (PTE), টোয়েফল (TOEFL), ডুয়োলিঙ্গো (Duolinguo) বা সিএই (CAE) পরীক্ষার সনদ থাকে, তবে আইইএলটিএস পরীক্ষা দিতে হবে না। কিছু জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা যাচাই করে।
জার্মানি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ
জার্মানিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে কম, কারণ বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি নেয় না। তবে কিছু খরচ ও ব্যয়ের বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
১. বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি:
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি নেয় না। তবে প্রতি সেমিস্টারে একটি সেমেস্টার ফি (Semester Fee) দিতে হয়, যা €150 থেকে €350 এর মধ্যে হতে পারে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি বেশি, সাধারণত প্রতি বছরে €10,000 থেকে €20,000 বা তার বেশি হতে পারে।
২. জীবনযাপনের খরচ:
জার্মানিতে জীবনযাপনের খরচ শহরের ওপর নির্ভর করে। প্রধান খরচের তালিকা:
আবাসন (Accommodation):
ছাত্রাবাস: €250–€400 প্রতি মাসে।
ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট: €500–€800 প্রতি মাসে।
খাবার (Food): মাসিক খরচ: €150–€300।
স্বাস্থ্য বীমা (Health Insurance): বাধ্যতামূলক এবং প্রতি মাসে €110–€120।
পরিবহন (Transportation): শিক্ষার্থীদের জন্য সেমেস্টার টিকিট থাকে, যা €25–€50 প্রতি মাসে।
অন্যান্য খরচ (ইন্টারনেট, বিনোদন, ইত্যাদি): €100–€200 প্রতি মাসে।
৩. মোট মাসিক খরচ: জার্মানিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনযাপনের গড় খরচ €850–€1,200 প্রতি মাসে হতে পারে।
৪. ব্লকড অ্যাকাউন্ট (Blocked Account): জার্মানিতে শিক্ষার্থী ভিসার জন্য একটি ব্লকড অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়, যেখানে প্রথম বছরের খরচের জন্য €11,208 (প্রতি মাসে €934) জমা রাখতে হয়।
বৃত্তি এবং সুবিধা: DAAD Scholarship এবং অন্যান্য বৃত্তি পাওয়া যেতে পারে, যা টিউশন ফি এবং জীবনযাপনের খরচ কমাতে সহায়তা করে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে, যা জীবনযাপনের খরচ বহনে সহায়তা করতে পারে। শহর অনুযায়ী জীবনযাপনের খরচ আলাদা হতে পারে। ছোট শহরগুলোতে খরচ কম, যেমন মাগডেবার্গ বা লাইপজিগ, আর বড় শহরগুলো যেমন মিউনিখ বা বার্লিনে খরচ বেশি।