ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রেরক থেকে গ্রাহক পর্যন্ত যে সব সংযোগ স্থাপন করা হয় তাদেরকে ডেটা কমিউনিকেশন মাধ্যম বা চ্যানেল বলা হয়। অথবা উৎস থেকে গন্তব্য পর্যন্ত যার মধ্য দিয়ে তথ্য প্রবাহিত হয় তা-ই ডেটা কমিউনিকেশন চ্যানেল বা মাধ্যম। এই চ্যানেল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন প্রকার মাধ্যম বা মিডিয়া থাকে। রেডিও, টি.ভি, ডিশ চ্যানেল ইত্যাদি গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য তারযুক্ত বা তারবিহীন যে সংযোগ প্রদান করা হয়, তা হলো মাধ্যম বা মিডিয়া।
তার মাধ্যম-Wired Media: এ পদ্ধতিতে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে খাত তার ব্যবহৃত হয়। নির্দিষ্ট কোনো পথে বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠনোর জন্য মাধ্যম হিসেবে কপার বা অ্যালুমিনিয়ামের ভার বা ক্যাবল ব্যবহার করে ডেটা কমিউনিকেশনের ব্যবস্থা করা হয়। এটি ক্যাবল গাইডেড মিডিয়া। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহারের ভিন্নতার উপর তার বা ক্যাবলের ভিন্নতা রয়েছে, নিচে এগুলো ব্যাখ্যা করা হলো :
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল-Twisted pair cable: দুটি পরিবাহী ভারকে পরস্পর সুষমভাবে পেঁচিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দুধরনের হয়ে থাকে, আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (UTP : Unshielded Twisted Pair) এবং শিন্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (STP: Shielded Twisted Pair)। সাধারণ কপার নির্মিত এ সব ক্যাবলে মোট চার ঘোড়া তার প্রতিটি পৃথক অপরিবাহী পদার্থের আবরণে (ইন্সুলেটর) আবৃত থাকে। প্রতি জোড়া ভারে একটি কমন রঙের (সাদা রঙের) আরেকটি ভিন্ন রঙের (যেমন : নীল, সবুজ, কমলা ও বাদামি) তারের সাথে প্যাঁচানো থাকে। প্রতি জোড়া তার পৃথক অপরিবাহী আবরণে আবৃত করা থাকে। এ ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করে 100 মিটারের বেশি দূরত্বে কোনো ডেটা প্রেরণ করা যায় না। ক্যাটাগরির ভিত্তিতে এর ব্যান্ডউইথ 10 Mbps থেকে 1 Gbps পর্যন্ত হতে পারে, তৰে দুরত্ব ৰাড়তে থাকলে ডেটা ট্রান্সফার রেট কমতে থাকে। বাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
ফো-এক্সিয়াল ক্যাবল-Co-andal Cable: কো-এক্সিয়েল ক্যাবল ভাষা বা কপার নির্মিত মূলত তিনটি স্তর বিশিষ্ট তারের ক্যাবল, কেন্দ্রস্থলে একটি শক্ত তামার তারের কঙ্কাক্টর, সেটিকে বৃত্তাকারে ঘিরে প্লাস্টিকের অপরিবাহী স্তর এবং এই স্তরকে ঘিরে ভাষার তারের একটি জাল বা শিক্ষ (Braided Shield)। অনেক সময় শিক্ষ এবং প্লাস্টিক অপরিবাহী স্তরের মাঝে একটি মেটালিক ফয়েলও থাকে। সবশেষে রাবারের অপরিবাহী পুরু স্তর এই ক্যাবলটিকে আবৃত করে রাখে। তামার তারের জালি এবং মেটালিক ফয়েলটি একসাথে আউটার কন্ডাক্টর (Outer conductor) হিসেবে বাইরের সকল প্রকার বৈদ্যুতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে। বাইরের শিশু এবং কেন্দ্রীয় তামার তারের অক্ষ (axis) একই থাকার দরুন এর নামকরণ কো-এক্সিয়েল করা হয়েছে। কো-এক্সিয়েল ক্যাবলে ডেটা ট্রান্সফার রেট টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে। কো-এক্সিয়েন ক্যাবলের ডেটা ট্রান্সমিশন স্ অপেক্ষাকৃত কম এবং সহজে বাস্তবায়নযোগ্য। ডিজিটাল এবং এনালগ উভয় ধরনের ডেটা এই ক্যাবলের মাধ্যমে প্রেরণ করা যায়। ক্যাবল টি.ভি. নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে ব্যাপকভাবে ব্যাবহৃত হয়। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল দুধরনের হয়- জ্বিননেট (Thinnet) এবং থিকনেট (Thicknet)।
বিননেট -Thinnet : থিননেট হালকা ও নমনীয় তার। এই তার 1OBASE-2 নামেও পরিচিত। এ ক্যাবলটি দ্বারা রিপিটার (দূর্বল সংকেতকে শক্তিশালী সংকেতে বিবর্ধিত (Amplity) করা) ছাড়া সর্বোচ্চ 185 মিটার দূরত্বে প্রতি সেকেন্ডে 10 মেগাবাইট ডেটা আদান-প্রদান করা যায়।
থিকনেট-Thicknet : থিকনেট ভারী ও নন-ফ্লেক্সিবল ক্যাবল। এই তার 10BASE-5 নামেও পরিচিত। এ ক্যাবলটি দ্বারা সর্বোচ্চ 500 মিটার দূরত্বে প্রতি সেকেন্ডে 10 মেগাবাইট ডেটা সহজেই আদান-প্রদান করা যায়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল-Fiber Optic Cable: ফাইবার অপটিক ক্যাবল বিশেষভাবে পরিশুদ্ধ কাচের তৈরি অত্যন্ত সুক্ষ্ম তন্তু, যদিও বিশেষায়িত কাজের জন্য প্লাস্টিক বা অন্য কোনো স্বচ্ছ মাধ্যমের তৈরি ফাইবার অপটিক ক্যাবলও পাওয়া যায়। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি ইনফ্রা রেড আলোর একটি রেঞ্জের ভেতর (1300- 1500nm ) অবিশ্বাস্য রকম স্বচ্ছ, তাই শোষণের কারণে বিশেষ কোনো লস ছাড়াই এর ভেতর দিয়ে সিগন্যাল দীর্ঘ দূরত্বে নেয়া যায়। ফাইবার অপটিক ক্যাবলের কেন্দ্রের অংশটুকুর প্রতিসরাংক বাইরের অংশের প্রতিসরাংক থেকে বেশি। যে অংশের প্রতিসরাংক বেশি তাকে কোর (Core) ৰলে, এবং যে অংশের প্রতিসরাংক কম তাকে ক্যাড ( Clad) বলে। প্রতিসরাংকের পার্থক্যের কারণে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে কোনো লস ছাড়াই কোরের ভেতর দিয়ে আলো যেতে পারে। (তবে কোরের ভেতর আলো আটকে থাকার প্রক্রিয়াটি সাধারণ পূর্ণ অভ্যন্তরীপ প্রতিফলন থেকে ভিন্ন প্রকৃতির) ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন্সে ব্যবহৃত কাচের তবু অত্যন্ত ভঙ্গুর বলে এটি তৈরি করার সময়েই পাতলা প্লাস্টিকের আবরণে আবৃত করে ফেলা হয়। ব্যবহারের আগে কেডলারের জালি এবং পলিমারের আবরণে ঢেকে নেয়া হয়। ক্যাবল তৈরি করার সময় বেশ কয়েকটি ফাইবারকে একত্র করে পলিমারের আবরণে ঢেকে নেয় হয় । ফাইবার বাঁকা করলে সেখানে লস হতে পারে বলে ক্যাবলের ভেতর একটি সরু ধাতব রড ঢুকিয়ে রাখা হয়।
সিঙ্গেল মোড এবং মানটি মোড ফাইবার : অণ্টিক্যাল ফাইবারের ব্যাস ১৫০ মাইক্রনের মতো হয়। ফাইবারের কোরের ব্যাস ৮ থেকে শুরু করে ১০০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। কোরের ব্যাস যখন ৮ থেকে ১২, মাইক্রন হয় তখন সেটিকে সিঙ্গেল মোড ফাইবার বলে, কারণ তখন শুধু একটি মোড ফাইবারের কেন্দ্র দিয়ে যেতে পারে। দূরপাল্লার হাই স্পিড ট্রান্সমিশনে সব সময় সিঙ্গেল মোড ফাইবার ব্যবহার করা হয়। কোরের বাস অত্যন্ত কম হওয়ায় এই ফাইবারের প্রযুক্তি ভুলনামূলকভাবে ব্যয়সাধ্য। ফাইবারের কোরের ব্যাস যদি ৫০ থেকে ১০০ মাইক্রনের মতো হয় তখন তার ভেতর অসংখ্য মোড যেতে পারে, একেকটি মোড একেকভাবে যায় বলে আলোর সিগন্যালে বিকৃতি হয় বলে এই ফাইবার শুধু স্বপ্ন দূরত্বে কম স্পিডের কাজে ব্যবহার হয়। কোরের ব্যাস বেশি বলে প্রযুক্তি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং মুল্য সাশ্রয়ী।
লেজার : ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন সত্যিকার অর্থে কাজ করার জন্য 1300nm থেকে 1500nm লেজার উদ্ভাবনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এলইডি (LED)-এর আলোতে ভরঙ্গ দৈর্ঘ্য সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় ফাইবারের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় বিচ্ছুরণের (Dispersion) কারণে সিগন্যালের বিচ্যুতি ঘটে, সেজন্য এটি দীর্ঘ দুরত্বে ব্যবহার করা যায় না। লেজারের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সুনির্দিষ্ট ৰলে এটি দূরপাল্লার কমিউনিকেশনে ব্যবহার করা যায়। যদিও 1300 nm এবং 1500nm এই দুই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশন করা সম্ভব কিন্তু 1500 nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের জন্য ফাইবার এমপ্লিফায়ার উদ্ভাবনের কারণে দূরপাল্লার কমিউনিকেশনে বর্তমানে প্রায় একচেটিয়াভাবে 1500nm তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।