নরেন্দ্র মোদির পুরো নাম কি: নরেন্দ্র মোদির সম্পূর্ণ নাম হলো-নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী
(नरेंद्र दामोदर दास मोदी)
নরেন্দ্র মোদির জন্ম: নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বম্বে প্রেসিডেন্সির (বর্তমান গুজরাত রাজ্যের) মহেসানা জেলার বড়নগর নামক স্থানে ঘাঞ্চী তেলী সম্প্রদায়ের এক নিম্নবর্গের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
নরেন্দ্র মোদির বাবা-মায়ের নাম কি: নরেন্দ্র মোদির বাবা-মায়ের নাম হলো-দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদি ও হীরাবেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদির বাবা-মায়ের বয়স কত: নরেন্দ্র মোদির বাবা দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদি ১৯১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মারা যান ১৯৮৯ সালে। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। নরেন্দ্র মোদির মা হীরাবেন মোদির জন্ম ১৮ জুন ১৯২৩ সালে। তিনি মারা যান ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর।
নরেন্দ্র মোদির বাড়ি কোথায়: নরেন্দ্র মোদির জন্ম স্থান হলো বম্বে প্রেসিডেন্সির (বর্তমান গুজরাত রাজ্যের) মহেসানা জেলার বড়নগর নামক স্থানে। তিনি তার পিতামাতার চার সন্তানের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তার পিতার নাম দামোদারদাস মূলচাঁদ মোদি ও মায়ের নাম হীরাবেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদির স্ত্রীর নাম কি: নরেন্দ্র মোদির স্ত্রীর নাম হলো-যশোদাবেন নরেন্দ্রভাই মোদি। চারটি নির্বাচন প্রচারে মোদি নিজের বিবাহিত জীবন নিয়ে নীরবতা অবলম্বন করলেও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তিনি যশোদাবেনকে নিজের আইনতঃ বৈধ পত্নী রূপে স্বীকার করে নেন।
নরেন্দ্র মোদির কয়টি সন্তান ও তাদের নাম কি কি: নরেন্দ্র মোদির স্ত্রী কোনো সন্তান নেই।
নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা: বড়নগর রেলস্টেশনে তিনি তার পিতাকে চা বিক্রি করতে সহায়তা করতেন এবং কৈশোরে বাস স্ট্যান্ডের কাছে ভাইয়ের সাথে চা বিক্রি করুতেন। পুরো পরিবার একটি ছোট ৪০ ফুট X ১২ ফুট মাপের একতলা বাড়িতে বসবাস করতেন।তিনি এই শহরেই একজন সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে তার বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন। পরে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
নরেন্দ্র মোদি কততম প্রধানমন্ত্রী: নরেন্দ্র মোদি ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী। এই রাজনীতিবিদ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত ষোড়শ সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে বহুমতের দ্বারা জয়লাভ লাভ করেন এবং ২৬ মে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি গুজরাতের চতুর্দশ মুখ্যমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদি আগে কি করত: বড়নগর রেলস্টেশনে মোদি তার পিতাকে চা বিক্রি করতে সহায়তা করতেন এবং কৈশোরে বাস স্ট্যান্ডের কাছে ভাইয়ের সাথে চা বিক্রি করতেন। পুরো পরিবার একটি ছোট ৪০ ফুট X ১২ ফুট মাপের একতলা বাড়িতে বসবাস করতেন। তিনি এই শহরেই একজন সাধারণ মানের ছাত্র হিসেবে তার বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত কিশোর মাকওয়ানা রচিত কমন ম্যান নরেন্দ্র মোদি গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৭ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর তিনি রাজকোট শহরে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন ও তারপর বেলুড় মঠ যাত্রা করেন। এরপর তিনি আলমোড়া শহরে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে যোগ দেন। দুই বছর পরে তিনি বাড়ি ফিরে এসে আমেদাবাদ শহরে নিজের কাকার চায়ের দোকানে যোগ দেন। এসময় তিনি পুনরায় লক্ষ্মণরাও ইনামদারের সংস্পর্শে আসেন। এরপর তিনি গুজরাত রাজ্য মার্গ বাহন ব্যবহার নিগমের ক্যান্টিনের কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন, যত দিন না তিনি ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন পূর্ণসময়ের প্রচারক হিসেবে যোগ দেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি: ছোটবেলায় নরেন্দ্র মোদির একটাই স্বপ্ন ছিল- ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করা। তাঁর সময়ের অনেক যুবকের কাছে সেনাবাহিনীকে ভারত মাতার সেবা করার চূড়ান্ত উপায় হিসাবে দেখা হতো। ভাগ্যক্রমে, তার পরিবার এই ধারণার বিরোধিতা করেছিল।
পড়াশোনার করার টাকাও ছিল না: নরেন্দ্র মোদি নিকটবর্তী জামনগরে অবস্থিত সৈনিক স্কুলে পড়ার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন কিন্তু যখন ফি দেওয়ার সময় এল, তখন বাড়িতে কোনও টাকা ছিল না। নরেন্দ্র নিশ্চয়ই হতাশ। কিন্তু, জওয়ানের ইউনিফর্ম না পরতে পেরে হতাশ এই যুবকটির জন্য ভাগ্যের আলাদা পরিকল্পনা ছিল। বছরের পর বছর ধরে তিনি একটি অনন্য পথে যাত্রা করেছিলেন যা তাকে মানবতার সেবা করার বৃহত্তর মিশনের অন্বেষণে ভারত জুড়ে নিয়ে যায়।
১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন মোদি: মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি বাড়ি ছেড়ে ভারত পরিক্রমায় বেরিয়ে পড়েন। দু’বছর ধরে তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হন। বাড়ি ফিরে আসার পর তিনি এক পরিবর্তিত মানুষে পরিণত হন। যে মানুষটির মধ্যে জীবনে যা তিনি অর্জন করতে চান তার একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য তৈরি হয়েছে।
মোদির রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হলে মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে যোগ দেন। নাগপুর শহরে প্রশিক্ষণের পর তাকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত জরুরীকালীন অবস্থায় বিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হলে এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে মোদী গ্রেপ্তারী এড়ানোর জন্য কখনো শিখ, কখনো বয়স্ক ব্যক্তির ছদ্মবেশে গোপণে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারপুস্তিকা বিতরণ ও বিক্ষোভ সমাবেশ সংগঠিত করতেন। তিনি জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জরুরীকালীন অবস্থা আন্দোলনে সামিল হন। এই সময় তিনি গুজরাত লোকসংঘর্ষ সমিতি নামক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে গুজরাতে বিভিন্ন আন্দোলনকারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। এসময় তিনি গুজরাতী ভাষায় সংঘর্ষ্ মা গুজরাত (গুজরাতের সংঘর্ষ) নামক একটি পুস্তক রচনা করেন যেখানে তিনি এই সময়ে ঘটিত বিভিন্ন ঘটনার নিরিখে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ মোদীকে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করায়। এই সময় শঙ্করসিনহা বাগেলা ও কেশুভাই পটেল ভারতীয় জনতা পার্টির গুজরাত শাখার উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ হলেও নরেন্দ্র মোদী মুরলী মনোহর যোশীর কন্যাকুমারী-শ্রীনগর একতা যাত্রা সংগঠিত করে রাজ্য শাখায় উল্লেখযোগ্য সংগঠক হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় জনতা পার্টির গুজরাত শাখার কার্যনির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এই পদে তার ভূমিকায় ভারতীয় জনতা পার্টি ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভে সহায়তা করে।
১৯৯৫ সালে নভেম্বর মাসে মোদি ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় সম্পদক হিসেবে নির্বাচিত হন। এই সময় তিনি হরিয়াণা ও হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে পার্টির সাংগঠনিক কাজকর্মের দায়িত্ব সামলান। ১৯৯৬ সালে লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর শঙ্করসিনহা বাগেলা পার্টি থেকে বেরিয়ে যান। ১৯৯৮ সালের মে মাসে তিনি পার্টির কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে অনুষ্ঠিত গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের নির্বাচনী কমিটিতে তিনি বাগেলার সমর্থকদের পরিবর্তে কেশুভাই পটেলের সমর্থকদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করলে পার্টির মধ্যেকার বিচ্ছিন্নতাবাদী বিরোধিতা থেমে যেতে বাধ্য হয় এবং ভারতীয় জনতা পার্টি ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করে।