নক আউট ভিত্তিক প্রাথমিক বাছাই পর্ব বা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মূলত টিকে থাকার লড়াই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহ রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ার লম্বা রেসে লাখে পরীক্ষার্থীকে টপকে টিকে থাকতে পারলেই কেবল ইয়েসকার্ড পাওয়া সম্ভব।
এজন্য প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হরো গেটওয়ে। এ পর্ব পার হওয়ার জন্য পরিকল্পনা মাফিক পড়েশোনার পাশাপাশি কিছু প্রস্তুতি কৌশল জানা থাকা ভালো।
প্রশ্নকাঠামো কেমন, কী ধরনের প্রশ্ন হয়, কোন বিষয় থেকে কতগুলো আসে তা আগে বিশ্লেষণ করে নিতে হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কে যত ভালোও স্বচ্ছ ধারণা থাকবে প্রস্তুতি নেওয়া তত সহজ হবে।
বাংলা ও ইংরেহি উভয় অংশ থেকেই ২০টি কর প্রশ্ন আসে। বাংলর ক্ষেত্রে সাহিত্য অংশ থেকে অর্ধেক সংখ্যক প্রশ্ন আসওে ইংরেজিতে সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দসহ ব্যাকরণ অংশের প্রাধান্য থাকে। ইংরেজি অংশে বিগতনিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো অনুশীলনের পাশাপাশি Synonyms, Antonyms, Group Verbs, Appropriate prepositons, Idioms and phrase, Spelling Mistakes, One word substitutions টপিক পড়তে হবে।
বাংলায় বানান বা বাক্য শুদ্ধিকরণ, প্রবাদ-প্রবচন, বাগধারা, সন্ধি, সমাস, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, এককথায় প্রকাশ থেকেও প্রশ্ন আসে। লেখকদের জীবনী, রচনা উপাধি বা বিশেষ খ্যাতির বিষয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।
আনুপাতিকভাবে গণিতে বেশি সময় লাগে। গণিত ও অ্যাপটিটিউট টেস্ট মিলে এ অংশে মোট ২৫টি প্রশ্ন থাকে। সাধারণ গণিতের পাশাপাশি গাণিতিক বিশ্লেষণ ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য অ্যাপটিটিউট টেস্ট অংশে গ্রাফ, ছক, টেবিল বা বর্ণনা দেওয়া থাকে-তা থেকে উত্তর দিতে হয়।
যাদের গণিতে মোটামুটি ভালো প্রস্তুতি আছে, তারাও নিয়মিত চর্চা করে যান। যাতে পরীক্ষার হলে কম সময়ে বেশি অঙ্কের সমাধান করতে পারেন। গণিতে দুর্বলতা থাকলে পর্যায়ক্রমে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির গণিত বই অনুশীলন করতে পারেন।
এছাড়া বাজারের প্রচলিত গাইড বই থেকে পর্যায়ক্রমে সহজ থেকে কঠিন টপিকের গণিতগুলো অনুশীলন করতে পারলে ভালো। তবে প্রস্তুতি যেমই হোক গণিতে অনেত প্রশ্ন থাকে যেগুলো সাধারণ মানের ও সহজসাধ্য। জটিল বা অপরিচিত অঙ্ক নিযে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট না করে ছেড়ে দিতে পারেন। ক্রিকেটে সব বলতে খেলতে যাওয়ার মতো প্রিলিতে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাওযা আত্মঘাতী হতে পারে।
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি অংশ থেকে ৫টি প্রশ্ন থাকে। অনেকেই এ অংশটি নিযে দুশ্চিন্তায় থাকেন। বিষয়ভিত্তিক একাডেমিক পড়াশোনা ছাড়াও এ অংশে ভালো করা সম্ভব। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারলে পূর্ণ নম্বর ওঠে। বিগত পাঁচ বছরের প্রশ্ন-সমাধান অনুশীলন করলে ভালো ফল পাবেন। এছাড়া নির্ভরযোগ্য বইপড়া সহ দৈনিক পত্রিকার প্রযুক্তি পাতায় নিয়মিত চোখ রাখলে উপকারে আসে।
সাধারণ জ্ঞান অংশে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবালি থেকে সাধারণত ১০টি প্রশ্ন থাকে। এ অংশে ভালো করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। সমসমায়িক নানা বিষয় নিয়ে সম্যক ধারণা থাকলে কাজে আসে।
তথ্যসমৃদ্ধি বই, মাসিক চাকরির পত্রিকা সহ কয়েকটি দৈনিকে চোখ বুলানোর অভ্যাস করুন। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের সংবিধান, মুজিববর্ষ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত তথ্যগুলো জেনে নিতে পারেন।
এছাড়া দেশের অর্থনীতিবিষয়ক তথ্য যেমন-জিডিপি, মাথাপিছু আয়, মুদ্রা, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক সহ এদের অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক চুক্তি সহ সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন আগ্রাসন, মূল্যস্ফীতি ও ডলারের দাম প্রভৃতি বিষয়েও ধারণা রাখতে হবে।
কোনো প্রশ্নের কাছাকাছি উত্তর দেখে দ্বিধান্বিত হয়ে বৃত্ত ভরাট করা চলবে না। ঠাণ্ডা মাথায় তা করতে হবে। যাতে নম্বর কাটা না পড়ে। এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রতিটি নম্বর মূল্যবান, প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাতে হবে। তাহলেই সাফল্য ধরা দেবে।
পরিশেষে বলব, ১০টা বই একবার করে না পড়ে একটা বই ১০বার করে পড়ুন, সেটা বেশি কাজে আসবে।
Photo by: samakal