জীবনে মনের আশা পূরণের অনেক উপায় খুঁজে বেড়িয়েছেন। মনের আশা পূরণ করতে অনেকের কাছে গিয়েছেন। গলায় তাবিজ পর্যন্তও ঝুলিয়েছেন। পীরের পা ধোয়া পানি খেয়েছেন। অনেক কষ্টে অনেক সাধন করেছেন। সবকিছু থেকে বিফল হয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছেন। অথচ এটা ভাবেননি যে, মহান আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে কী বলেছেন?
হাদিসে রয়েছে- একবার হজরত আনাস (রা.) রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামাজ আদায় করল এবং নিচের এ দোয়াটি পাঠ করল-
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা-ইলাহা ইল্লা আংতাল মান্নান, বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্, ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়্যুম।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি। তুমিই তো সব প্রশংসার মালিক, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি দয়াশীল। তুমিই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা! হে মহান সম্রাট ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।’
তখন নবীজি (সা.) বললেন, এ ব্যক্তি ‘ইসমে আজম’ পড়ে দোয়া করেছে, (‘ইসমে আজম’ মহান আল্লাহর এমন নাম) যে নামে ডাকলে মহান আল্লাহ সাড়া দেন এবং যে নামে তার কাছে চাওয়া হলে তিনি সব চাওয়া পূরণ করেন। (আবু দাউদ) অর্থাৎ এই দোয়াটি হল ‘ইসমে আজম’।
দোয়াটি পাঠ করলে মহান আল্লাহ মুমিন বান্দার মনের সব ইচ্ছা পূরণ করবেন।
মনের আশা পূরণ হওয়ার নামাজ
সালাতুল হাজাত এটি আরবি দু্টই শব্দ। সালাত মানে নামাজ আর হাজাত মানে হলো প্রয়োজন। অর্থাৎ সালাতুল হাজাত মানে হলো প্রয়োজনের নামাজ। মানুষের বিশেষ কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে বা ইচ্ছা পূরণের জন্য যে বিশেষ নামাজ পড়তে হয় তাকেই সালাতুল হাজাত বা ‘প্রয়োজনের নামাজ’ বলা হয়।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া যায়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
অর্থঃ হে ইমানদাররা, তোমরা স্বীয় প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে’ নিশ্চই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।(সূরা-বাক্বারাহঃ ২/১৫৩)।
হযরত হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى
অর্থঃ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হ’তেন’।( আবুদাঊদ হা/১৩১৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৩১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০৩; ঐ, মিশকাত হা/১৩১৫)
সালাতুল হাজাত অনান্য নামাজের মতই এটি একটি নফল নামাজ। শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে মনের নেক ইচ্ছের বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দোয়াটি পাঠ করবেন।
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-
(আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র)।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’।
এভাবে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে বসে বসে জিকির করবেন, দরুদপাঠ করবেন, তারই সাথে হাদিসে বর্ণীত দোয়া পাঠ করবেন। নিন্মোক্ত দোয়া পাঠের বর্ণনা আছে।
দোয়াটি হলো-
لا إله إلا الله الحليم الكريم سبحان الله رب العرش العظيم الحمد لله رب العالمين. أسالك موجبات رحمتك وعزائم مغفرتك والغنيمة من كل بر والسلامة من كل إثم لا تدع لي ذنباً إلا غفرته ولا هما إلا فرجته ولا حاجة هي لك رضا إلا قضيتها يا أرحم الراحمين
উচ্চারণ :
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হা-জাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমীন। [তিরমিজি, ইবনে মাজা ও নাসায়ি]
আল্লাহর খলিল হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারা যখন মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে অপহৃত হয়। সম্রাট যখন আম্মাজান সারা’র নিকটে দিকে এগিয়ে যায়, তখন আম্মাজান ওযূ করে ছালাতে আল্লাহর নিকটে লুটিয়ে পড়েন এবং প্রার্থনা করে এই বলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান-
اَللَّهُمَّ لاَ تُسَلِّطْ عَلَىَّ هَذَا الْكَافِرَ
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা’। (বুখারী হাদিস নং/২২১৭ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-৩৪, অনুচ্ছেদ-১০০; মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং/৯২৩০, সনদ ছহীহ।)
সাথে সাথে উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে জমিনে পড়ে যায় । এভাবে তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে আম্মাজান সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদি হাদিয়া হিসেবে দেন।
যে নিয়মে নামাজ পড়লে মনের আশা পূরণ হবে
দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করিলে যে কোনো আশা পূর্ণ হবে। ইনশাআল্লাহ ইহা বহু পরীক্ষিত ও অত্যন্ত ফলপ্রদ একটি আমল যে কেউ শুদ্ধাচারে বিধিমত এই নামাজ আদায় করলে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত তার ফল পাবেন।
নিয়ম: নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার সঙ্গে দশবার সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহার সঙ্গে দশবার সুরা ইখলাস পাঠ করে নামাজ শেষ করতে হবে এবং নামাজ শেষে সালাম ফিরাইবার পর পূণরায় একটি সিজদায় গিয়ে যে কোনো দরুদ দশবার পাঠ করবে এবং উপরোক্ত দুয়াটি ১০ বার পাঠ করিবে। এতে আপনি এক, তিনি, সাত দিনের মধ্যে আপনার মনের আশা পূরণ হবে।
মনের আশা পূরণ হওয়ার আরও কিছু আমল নিচে দেয়া হলো-
- যেকোনো দিন রাতে ১.০০-২.০০ টার মধ্যে দারিয়ে নিন্মের যে কোন দোয়া পাঠ করে আল্লাহর কাছে যা চাইবেন তেই পাইবেন।
- ৩ হাজার বার ” ইয়া মুনতাক্বিমু” ১ হাজার ২০০ বার ” ইয়া ক্বাদের“” ১০০ বার ” ইয়া সামিউন”।
- রবিউল আউয়াল মাসে ৭৭৪১ বার আস-সালাতু আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহী-এই দুয়া পড়লে মনের আশা পূরণ হবে।
- ঘুমানোর সময় পাক পবিত্র বিছানায় শুয়ে ডান হাত বুকের উপর রেখে আগে-পরে ১১ বার দরুদ শরিফ পাঠ করার পর ”আল আ’লীমুল্লাযী ইয়া লামুল জাহরা ওয়াল আখফা” এই দোয়াটি ৭০ বার পাঠ করবেন।
দোয়া কবুল না হওয়ার কারণসমূহ:
- হারাম থেকে বেঁচে থাকা: দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা।
- আল্লাহপ্রদত্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া : হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎ কাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগির তোমাদের ওপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৯)
- আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা: আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ। এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
- দোয়ায় পূর্ণ মনোযোগ না থাকা: দোয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করতে। আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না।
Photo By: observerbd.