সূরা আত-ত্বীন পবিত্র কুরআন শরীফলের ৯৫ তম সূরা। এর মোট আটটি আয়াত বা বাক্য রয়েছে। সূরা ত্বীন শব্দের অর্থ আঞ্জির বা ডুমুর। এই সূরাতে আল্লাহর উপর ঈমান (বিশ্বাস) এবং সৎকর্মশীলতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই সূরাতে আল্লাহ প্রদত্ত কয়েকটি নিয়ামত বা অনুগ্রহের দোহাই দিয়ে ঈমান ও সৎকাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেহেতু মানবজাতি অনেক অনুগ্রহ দ্বারা ধন্য হয়েছে, সেহেতু তাদের উচিত আল্লাহর উপর ঈমান রাখা এবং সৎকাজ করা; নচেৎ তারা নীচ ও শাস্তিযোগ্যরূপে গণ্য হবে।
আরবি: بِّسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ
উচ্চারণ: ওয়াততীন ওয়াঝঝাইতূন।
বাংলা অর্থ: শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,
আরবি: وَطُورِ سِينِينَ
উচ্চারণ: ওয়া তূরি ছীনীন।
বাংলা অর্থ: এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
আরবি: وَهَـٰذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ
উচ্চারণ: ওয়া হা-যাল বালাদিল আমীন।
বাংলা অর্থ: এবং এই নিরাপদ নগরীর।
আরবি: لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
উচ্চারণ: লাকাদ খালাকনাল ইনছা-না ফীআহছানি তাকবীম।
বাংলা অর্থ: আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
আরবি: ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ
উচ্চারণ: ছু ম্মা রাদাদ না-হু আছফালা ছা-ফিলীন।
বাংলা অর্থ: অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে।
আরবি: إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ أَجْرٌ غَيْرُ مَمْنُونٍ
উচ্চারণ: ইল্লাল্লাযীনা আ-মানূওয়া‘আমিলুসসা-লিহা-তি ফালাহুম আজরুন গাইরু মামনূন।
বাংলা অর্থ: কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
আরবি: فَمَا يُكَذِّبُكَ بَعْدُ بِالدِّينِ
উচ্চারণ: ফামা-ইউকাযযি বুকা বা‘দুবিদ্দীন।
বাংলা অর্থ: অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে?
আরবি: أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَحْكَمِ الْحَاكِمِينَ
উচ্চারণ: আলাইছাল্লা-হু বিআহকামিল হা-কিমীন।
বাংলা অর্থ: আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্টতম বিচারক নন?
সূরা ত্বীন এর মূল বক্তব্য ও ফজিলত
সূরা ত্বীন এর শুরুতে আঞ্জির (ডুমুর), যয়তুন (জলপাই), সিনাই পর্বত এবং মক্কা শহরের কসম বা দোহাই দেয়া হয়েছে। আরবে সেই যুগে আঞ্জির ও জলপাই অত্যন্ত গুরুত্ববাহী দুটি ফল ছিল; খাদ্য ও অর্থকরী ফসল হিসেবে এর গুরুত্ব ছিল অসীম। সিনাই পর্বত হলো নবী হযরত মুসা এর স্মৃতিবিজড়িত স্থান। আর মক্কা ছিল নবী হযরত ইব্রাহিম এবং ইসমাইল -এর স্মৃতিবিজড়িত জায়গা।
তদুপরি পবিত্র কাবা ঘরের মর্যাদার কারণে এই শহরটি নিরাপদ শহর হিসেবে তৎকালে গণ্য হত; সেখানকার অধিবাসীরা যুদ্ধ ও লুন্ঠনের আশঙ্কামুক্ত ছিল।
এসকল বিষয়ের দোহাই দেওয়ার পর বলা হয়েছে, মানুষ অত্যন্ত সুন্দর গড়নে সৃষ্ট হয়েছে কিন্তু এদেরকেই আবার অত্যন্ত নিচে নামিয়ে দেয়া হবে যদি এরা স্রষ্টা ও প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস না রাখে এবং ভাল কার্যকলাপ না করে।
তদুপরি শেষ বিচারের দিন এদেরকে কঠিন বিচারের মুখোমুখিও হতে হবে। সমাপ্তিতে এও মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মহান প্রভু কখনো কারো উপর অবিচার করবেন না; শুধুমাত্র সুবিচারই করবেন।