আরবি: إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ
উচ্চারণ: ইযা জা- আনাসুরুল্লহি ওয়াল ফাতহু।
অর্থ: যখন এসে গেছে আল্লাহর সাহায্য ও (মক্কা) বিজয়
আরবি: وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا
উচ্চারণ: ওয়ারা আইতান্না-সা ইয়াদখুলুউনা, ফি দ্বীনিল্লাহি আফওয়া-জা।
অর্থ: এবং আপনি মানুষকে দেখবেন তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে (ইসলামে) প্রবেশ করছে।
আরবি: فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
উচ্চারণ: ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগ ফিরহ্; ইন্নাহু কা-না তাও-ওয়া-বা।
অর্থ: তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।
সূরা ফজিলত:
একদা এক ইহুদী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের ওপর জাদু করেছিল। যার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল (আ.) মহানবী (সা.)-কে বলেন যে, এক ইহুদী তাকে জাদু করেছে এবং যে জিনিস দিয়ে জাদু করা হয়েছে তা একটি কুপের মধ্যে পাথরের নিচে আছে। মহানবী (সা.) সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠালেন। সেখানে গিয়ে কয়েকটি গিরা পাওয়া গিয়েছিল। তখন তিনি সূরা নাস ও ফালাক দুইটি একসঙ্গে পড়ে ফুক দেন এবং গিরাগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে ওঠেন।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। (সহি বুখারি)
ফজর আর মাগরিবে এই দুই ওয়াক্তে ফরজ সালাতের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি সূরা তিনবার করে পড়া সুন্নত। অন্যান্য ফরজ সালাতের আদায় করে একবার করে এই তিন সূরা পড়তে হবে। (আবু দাউদ হা: ১৩৬৩)
সূরা নাস পড়লে শয়তানের অনিষ্ট ও যাদু থেকে হেফাজতে থাকা যায়। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা ( সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়বে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। ’ (জামে তিরমিযী, হাদীস: ২৯০৩)
ব্যাখ্যা: সূরা আন নাসর এর তফসীর। সূরা আন নাসর কুরআন কারীমের এক চতুর্থাংশের সমতুল্য। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উবাহ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করেনঃ- সর্বশেষ কোন সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তুমি জান? উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, সূরা ইযাজাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু’ (সর্বশেষ অবতীর্ণ হয়েছে।) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তখন বললেনঃ “তুমি সত্য বলেছো।” (এ হাদীসটি ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আইয়ামে তাশরীকের (১১ই, ১২ইও ১৩ই যিল হজ্ব তারিখের) মধ্যভাগে সূরা আন নাসর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হলে তিনি বুঝতে পারেন যে, এটা বিদায়ী সূরা। সুতরাং তখনই তিনি সওয়ারী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) সওয়ারীতে আরোহণ করলেন। তারপর তিনি তার সুপ্রসিদ্ধ খুৎবাহ প্রদান করলেন। (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর বাযার (রঃ) এবং হাফিয বারহাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন সূরা নাসর অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “আমার পরলোক গমনের খবর এসে গেছে।” এ কথা শুনে হযরত ফাতিমা (রাঃ) কাঁদতে শুরু করলেন। তারপরই তিনি হাসতে লাগলেন।
তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমার আব্বার (সঃ) পরলোক গমনের সময় নিকটবর্তী হওয়ার খবর শুনে আমার কান্না এসেছিল। কিন্তু আমার কান্নার সময় তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি ধৈর্য ধারণ করে। আমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে তুমিই সর্ব প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে।”