সূরা লাহাব এর বাংলা উচ্চারণ-অর্থ-ফজিলত-ব্যাখ্যা-Surah Lahab Bangla

সূরা লাহাব এর বাংলা উচ্চারণ-অর্থ-ফজিলত-ব্যাখ্যা-Surah Lahab Bangla

আরবি: تَبَّتْ يَدَآ أَبِى لَهَبٍ وَتَبَّ
উচ্চারণ: ১.তাব্বাত ইয়াদাআবী লাহাবিওঁ ওয়া তাবব।
অর্থ: আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে,

আরবি: مَآ أَغْنَىٰ عَنْهُ مَالُهُۥ وَمَا كَسَبَ
২. মাআগনা-‘আনহু মা-লুহূওয়ামা-কাছাব।
অর্থ: কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে।

আরবি: سَيَصْلَىٰ نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ
৩. ছাইয়াসলা-না-রান যা-তা লাহাব।
অর্থ: সত্বরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে

আরবি: وَٱمْرَأَتُهُۥ حَمَّالَةَ ٱلْحَطَبِ
৪. ওয়ামরাআতুহূ; হাম্মা-লাতাল হাতাব।
অর্থ: এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে,

আরবি: فِى جِيدِهَا حَبْلٌ مِّن مَّسَدٍۭ
৫. ফী জীদিহা-হাবলুম মিম মাছাদ।
অর্থ: তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।

সূরা লাহাব-এর ফজিলত:
সূরা লাহাব হল মক্কার সূরা, যেটি মহানবী (সা.)-এর প্রতি উন্মুক্ত দাওয়াতের শুরুতে অবতীর্ণ হয়েছিল, এতে ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর অন্যতম শত্রুর নাম রয়েছে। সেই সময় আবু লাহাবের জন্য। যাকে কড়া সতর্কবার্তা দেয়া হয়।

সূরার বিষয়বস্তু দেখায় যে তিনি রসূলের প্রতি একটি বিশেষ শত্রুতা পোষণ করেছিলেন এবং তিনি এবং তাঁর স্ত্রী উভয়েই তাঁর বিরুদ্ধে যা কিছু করতে পারেন তা করেছিলেন।

কোরান স্পষ্টভাবে বলে যে তারা উভয়েই জাহান্নামে প্রবেশ করবে যা থেকে তারা পালাতে পারবে না। এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে ঘটেছিল এবং অবশেষে তারা ইসলামে বিশ্বাস না করেই মারা যায়। এটি পবিত্র কোরআনের একটি সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী।

একটি রেওয়ায়েতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, মহানবী (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি এটি (সূরা লাহাব) পাঠ করবে, আমি আশা করি আল্লাহ তাকে এবং আবু লাহাবকে একই আবাসে একত্র করবেন না”।

(অর্থাৎ সে জান্নাতে থাকবে আর আবু লাহাব থাকবে জাহান্নামে)।

এটা স্পষ্ট যে, এই গুণটি সেই ব্যক্তির, যে এটি পাঠ করার সাথে সাথে আবু লাহাবের থেকে ভিন্ন পথে চলে যায়, যে ব্যক্তি জিহ্বা দিয়ে এটি পাঠ করে তার নয়, বরং আবু লাহাবের মতো কাজ করে।

ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন আয়াতটি নাযিল হয়: “এবং নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে উপদেশ দাও”, তখন মহানবী (সা.)-কে তাঁর নিকটাত্মীয়দের একত্রিত করতে এবং সর্বপ্রথম ইসলামের দাওয়াতের প্রকাশ্যে ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি ছিলেন-আল্লাহর রসূল। অতঃপর তিনি সাফা পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ করলেন এবং ডাকলেন: ইয়া সাবাহা/। (শত্রু আক্রমণ করতে গেলে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য এই শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করা হয়েছিল।)

মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ডাক শুনে লোকেরা তাঁর কাছে গেল। তিনি বিভিন্ন আরব গোত্রের নাম উল্লেখ করে এবং সমাবেশে ভাষণ দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন:

“যদি আমি তোমাকে বলি যে, এই পাহাড়ের পাদদেশে, ওপারে একটি বিশাল শত্রু সেনা ক্যাম্প করে আছে, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করবে?”

পুরো সমাবেশ সর্বসম্মতভাবে বলেছিল: “অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করব, কারণ আপনি কখনও মিথ্যা বলেননি”।

“অতঃপর”, মহানবী (সাঃ) বললেনঃ “আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রভুর একত্ব প্রচারের জন্য সতর্ককারী হিসেবে এসেছি”।

এ কথা শুনে আবু লাহাব বলে উঠল, তোমার জন্য ধ্বংস! তুমি কি এই জন্যই আমাদের একত্র করেছিলে?”

ঠিক সেই মুহুর্তে এই সূরাটি অবতীর্ণ হয়, যাতে বলা হয়:

“আবু লাহাবের হাত ধ্বংস হোক, সে (নিজে) ধ্বংস হোক”।

আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর বিপদ ও শত্রুতা শুধু ঐ কর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ এবং প্রাথমিক ইসলামের সবচেয়ে অভ্যাসগত শত্রু। এ কারণেই কুরআন স্পষ্টভাবে এবং ঘৃণ্যভাবে তাদের তিরস্কার করেছে। আরও কিছু বিবরণ পরে উল্লেখ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

ব্যাখ্যা:
প্রথম আয়াত: প্রথম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবু লাহাবকে অভিশাপ দিয়েছেন। যেন আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন যে আবু লাহাব ভবিষ্যতে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তা হলো। বদর যুদ্ধের পর তিনি এক ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হন।

তাদের উপর প্রভাব পড়বে এই ভয়ে তার পরিবার তাকে ত্যাগ করে। এই করুণ দুর্দশায় তিনি মারা যান। তিন দিন পর্যন্ত তার দেহ নির্জন ছিল এবং কেউ তাকে স্পর্শ করেনি। অবশেষে, বেশ কয়েকজন ক্রীতদাস লাঠি দিয়ে তার দেহটি তুলে নিয়ে একটি গর্তে ফেলে এবং গর্তটি পাথর দিয়ে ভরাট করে।

আয়াতটি হাতের ধ্বংসকে নির্দেশ করে এবং যেহেতু আমরা আমাদের বেশিরভাগ কাজ আমাদের হাত দিয়ে করি, এটি শরীরের সম্পূর্ণ ধ্বংসের প্রতীক।

দ্বিতীয় আয়াত: তার সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি তাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। এটি বাস্তবে আবু লাহাবের পূর্বের দাবির খণ্ডন ছিল। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সম্প্রদায়কে শাস্তি থেকে সতর্ক করেছিলেন তখন আবু লাহাব বলেছিলেন: ‘আমার ভাতিজা যা বলে তা যদি সত্য হয় তবে আমি আমার সম্পদ ও সন্তানের দ্বারা নিজেকে শাস্তি থেকে রক্ষা করব।”

তৃতীয় আয়াত: প্রথম দুটি আয়াতে তার পার্থিব ব্যর্থতা ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এই আয়াতে পরকালে তার শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

চতুর্থ আয়াত: এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবু লাহাবের স্ত্রী সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন। তিনি ছিলেন আবু সুফিয়ানের বোন। হাম্মা লাতাল হাতব এর আক্ষরিক অর্থ হল যে কাঠ বহন করে।

পঞ্চম আয়াত: মাসাদ বলতে খেজুর পাতা বা তারের তৈরি শক্ত দড়িকে বোঝায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts

সূরা ইখলাস এর বাংলা উচ্চারণ-অর্থ-ফজিলত-ব্যাখ্যা-Surah Ikhlas Bangla

আরবি: قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ উচ্চারণ: কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। অর্থ: বলুন, তিনি আল্লাহ, এক, আরবি: ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ উচ্চারণ: আল্লা-হুসসামাদ। অর্থ:...

Read more
সূরা ফালাক এর বাংলা উচ্চারণ-অর্থ-ফজিলত-ব্যাখ্যা-Surah Falaq Bangla

আরবি: قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ উচ্চারণ: কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক অর্থ:১. বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার, আরবি: مِن شَرِّ...

Read more
সূরা নাস এর বাংলা উচ্চারণ-অর্থ-ফজিলত-ব্যাখ্যা-Surah Nas Bangla

আরবি: قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ উচ্চারণ: কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিন্না-ছ, অর্থ: ১. বলঃ আমি আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, আরবি: مَلِكِ ٱلنَّاسِ উচ্চারণ:...

Read more
সূরা ফাতিহার বাংলা উচ্চারণ-অর্থ-ফজিলত-ব্যাখ্যা-Surah Fatiha Bangla

সূরা ফাতিহা’ মাক্কী (سُورَةُ الْفَاتِحَةِ مَكِيّة) আয়াতঃ ৭ রুকূঃ ১(اياتها، ركوعها) আরবি: بسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমা-নির রাহি-ম।...

Read more

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?