স্বরধ্বনি কাকে বলে: স্বরধ্বনি হচ্ছে এমন কিছু ধ্বনি অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে। এধরনের বর্ণের মৌলিক সংখ্যা ৭টি – ই, এ, এ্যা, আ, অ, ও এবং উ ৷ বাংলা বর্ণমালায় স্বরধ্বনির প্রচলিত সংখ্যা ১১টি । বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন সংখ্যক স্বরধ্বনি রয়েছে। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ন রয়েছে মোট ১১টি; এগুলো হলোঃ
স্বরধ্বনি উচ্চারণ কিভাবে করতে হয়
অ স্বরে অ
আ স্বরে আ
ই হ্রস্ব ই
ঈ দীর্ঘ ঈ
উ হ্রস্ব উ
ঊ দীর্ঘ উ
ঋ রি
এ এ
ঐ ওই
ও ও
ঔ ওউ
যৌগিক স্বরবর্ণ কত প্রকার
বাংলা বর্ণমালায় দেখা যায় কিছু যৌগিক ধ্বনি রয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা বলেন যে, মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি; আর যৌগিক স্বরবর্ণ ২টি। যৌগিক স্বরবর্ণগুলো হলোঃ
যৌগিক স্বরবর্ণ বিশ্লেষণ
ঐ ও+ই
ঔ ও+উ
এ ২টি যৌগিক স্বরবর্ণ।
আর ২৩ টি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে। যাদের লিখিত রূপ নেই। তাই এরা বর্ণ নয় | যেমন- ইঅা (দিয়া), এই (এই), এঅা (খেয়া) ইত্যাদি | সুতরাং মোট যৌগিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ২৫টি (২+২৩)টি। এগুলো হলো: ঐ ঔ অ + ও = অও – লও
অ + এ = অয় – নয়
আ + ই = আই – গাই
আ + এ = আয় – খায়
আ + উ = আউ – হাউ
ই + ই = ইই – দিই
ই + উ = ইউ – মিউ
ই + ও = ইও – নিও
উ + ই = উই – ছুঁই
উ + ও = উও – কুয়ো
এ + ই = এই – সেই
এ + উ = এউ – কেউ
ও + ই = ওই – মই
ও + ও = ওও – ধোও
এ্যা + এ = এ্যায় – দ্যায়
এ্যা + ও = এ্যা – ম্যাও।
বাংলায় এই দ্বিস্বর ধ্বনিগুলি ছাড়াও ত্রিস্বর, চতুঃস্বর এবং পঞ্চস্বর যৌগিক স্বর উচ্চারিত হয়। যেমন : আইআ(আইয়া- যাইয়া), আইআই (খাইয়াই), আওআইআ (খাওয়াইয়া) ইত্যাদি।
উচ্চারণের সময়ে জিভের উচ্চতা অনুযায়ী, জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী এবং ঠোঁটের উনুক্তি অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে ভাগ করা হয়। উচ্চারণের সময়ে জিভ কতটা উপরে ওঠে বা কতটা নিচে নামে সেই অনুযায়ী স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত: উচ্চ স্বরধ্বনি [ই], [উ]; উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি [এ], [ও]; নিম্ন-মধ্য স্বরধ্বনি [অ্যা], [অ]; নিম্ন স্বরধ্বনি [আ]। উচ্চ স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ উপরে ওঠে; নিম্ন স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে জিভ নিচে নামে।
জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি তিন ভাগে বিভক্ত: সম্মুখ স্বরধ্বনি [ই], [এ], [অ্যা]; মধ্য স্বরধ্বনি [আ]; পশ্চাৎ স্বরধ্বনি [অ], [ও], [উ]। সম্মুখ স্বরধ্বনির বেলায় জিভ সামনের দিকে উঁচু বা নিচু হয়; পশ্চাৎ স্বরধ্বনির বেলায় জিভ পিছনের দিকে উঁচু বা নিচু হয় ।
স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কতটুকু খোলা বা বন্ধ থাকে অর্থাৎ কী পরিমাণ উন্মুক্ত হয়, তার ভিত্তিতে স্বরধ্বনি চার ভাগে বিভক্ত: সংবৃত [ই], [উ]; অর্ধ-সংবৃত: [এ], [ও]; অর্ধ-বিবৃত: [অ্যা] [অ]; বিবৃত: [আ]। সংবৃত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট কম খোলে; বিবৃত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময়ে ঠোঁট বেশি খোলে ।
অনুনাসিক স্বরধ্বনি কাকে বলে
মৌলিক স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে বায়ু শুধু মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এ সময়ে কোমল তালু স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। কিন্তু ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময়ে কোমল তালু খানিকটা নিচে নেমে গেলে কিছুটা বায়ু নাক দিয়েও বের হয়। এর ফলে ধ্বনিগুলো অনুনাসিক হয়ে যায়। স্বরধ্বনির এই অনুনাসিকতা বোঝাতে বাংলা স্বরবর্ণের উপরে চন্দ্রবিন্দু (“) ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
মৌলিক স্বরধ্বনি: [ই], [এ], [অ্যা], [আ], [অ], [ও], [উ]
অনুনাসিক স্বরধ্বনি: [ইঁ], [এঁ], [অ্যা], [অঁ], [অঁ], [ওঁ], [উঁ]
অর্ধস্বরধ্বনি কাকে বলে
যেসব স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না সেগুলোকে অর্ধস্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় অর্ধস্বরধ্বনি চারটি: [ই], [ঊ], [এ] এবং । স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময়ে টেনে দীর্ঘ করা যায়, কিন্তু অর্ধস্বরধ্বনিকে কোনোভাবেই দীর্ঘ করা যায় না। যেমন –
‘চাই” শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [ই]। এখানে [আ] হলো পূর্ণ স্বরধ্বনি, [ই] হলো অর্ধস্বরধ্বনি। একইভাবে ‘লাউ’ শব্দে দুটি স্বরধ্বনি আছে: [আ] এবং [ড্]। এখানে [আ] হলো পূর্ণ স্বরধ্বনি, [ হলো অর্ধস্বরধ্বনি ।
দ্বিস্বরধ্বনি কাকে বলে
পূর্ণ স্বরধ্বনি ও অর্ধস্বরধ্বনি একত্রে উচ্চারিত হলে দ্বিস্বরধ্বনি হয়। যেমন: ‘লাউ’ শব্দের [আ] পূর্ণ স্বরধ্বনি এবং [উ] অর্ধস্বরধ্বনি মিলে দ্বিস্বরধ্বনি [আ] তৈরি হয়েছে। দ্বিস্বরধ্বনির কিছু উদাহরণ:
[আহ্]: তাই, নাই
[এই]: সেই, নেই
[আ]: যাও, দাও
[আঞ্]: খায়, যায়
[উ]: দুই, রুই
[অ]: নয়, হয় [ওঙ্]: মৌ, বউ
[ওই]: কৈ, দই
বাংলা বর্ণমালায় দুটি দ্বিস্বরধ্বনির জন্য আলাদা বর্ণ নির্ধারিত আছে, যথা: ঐ এবং । ঐ-এর মধ্যে দুটি ধ্বনি আছে, একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি [ও] এবং একটি অর্ধস্বরধ্বনি [হ্]। একইভাবে ঔ-এর মধ্যে রয়েছে একটি পূর্ণ স্বরধ্বনি [ও] এবং একটি অর্ধস্বরধ্বনি [ঊ]।
স্বরধ্বনির কিছু উদাহরণ
১. উচ্চারণের সময়ে জিভের কোন অবস্থানের কারণে স্বরধ্বনি ভাগ করা হয়?
ক. উচ্চতা
খ. সম্মুখ
গ. পশ্চাৎ
ঘ. সবগুলোই সঠিক
২. ‘উ’ উচ্চারণের সময়ে জিভের অবস্থান –
ক. উচ্চ-সম্মুখ
খ. নিম্ন-সম্মুখ
গ. উচ্চ-পশ্চাৎ
ঘ. নিম্ন-পশ্চাৎ
৩. ‘আ’ উচ্চারণের সময়ে ঠোঁটের উন্মুক্তি কেমন ?
ক. সংবৃত
খ. অর্ধ-সংবৃত গ. বিবৃত
ঘ. অৰ্ধ-বিবৃত
৪. জিভের সম্মুখ বা পশ্চাৎ অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি কত প্রকার?
ক. দুই
খ. তিন
গ. চার
ঘ. পাঁচ
৫. বাংলা স্বরবর্ণের উপরে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করা হয় কী বোঝাতে?
ক. হ্রস্বস্বর
খ. দীর্ঘস্বর
গ. অনুনাসিকতা
ঘ. ব্যঞ্জনা
৬. যে সকল স্বরধ্বনি পুরোপুরি উচ্চারিত হয় না তাদের বলে –
ক. হ্রস্বস্বর
খ. অর্ধস্বর
গ. দীর্ঘস্বর
ঘ. পূর্ণস্বর
৭. পূর্ণ স্বরধ্বনি ও অর্ধস্বরধ্বনি একত্রে মিলে হয় –
ক. স্বরধ্বনি
খ. মৌলিক স্বরধ্বনি
গ. স্বল্প স্বরধ্বনি
ঘ. দ্বিস্বরধ্বনি
৮. ‘লাউ’ শব্দের মধ্যে কোন কোন স্বরধ্বনি আছে?
ক. অ+ই
খ. আ+হ্
গ. আ+ এ
ঘ. আ+ড্