সৃজনশীল প্রশ্ন কাকে বলে-প্রশ্ন কত প্রকার ও উত্তর লেখার নিয়ম

সৃজনশীল প্রশ্ন কাকে বলে? প্রশ্ন কত প্রকার ও উত্তর লেখার নিয়ম

  • সৃজনশীল প্রশ্ন কাকে বলে
  • সৃজনশীল প্রশ্নের কয়টি ধাপ বা স্তর থাকে?
  • জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম
  • অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম
  • প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম
  • উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম
  • সৃজনশীল প্রশ্নের সুবিধা ও অসুবিধা কি
  • গণিত ও উচ্চতর গণিতে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম

সৃজনশীল প্রশ্ন কাকে বলে: সাধারণঅর্থে কোনো কিছু সৃষ্টি করার নামই হচ্ছে সৃজনশীলতা। অর্থাৎ পাঠ্য বইয়ের জ্ঞানের আলোকে নির্মিত একটি মৌলিক উদ্দীপকের সাহায্যে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা যাচাই করা যায় যে প্রশ্নে তাকে সৃজনশীল প্রশ্ন বলে। শিক্ষার্থী তার নিজস্ব মেধা-মনন অর্থাৎ জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে কোনো প্রশ্ন সম্পর্কে পরীক্ষার খাতায় তার মতো করে যা কিছু লিখবে, তাই সৃজনশীল হওয়ার কথা। শিক্ষার্থী তার ইচ্ছেমতো কোনো কিছু সৃষ্টি করলেই সেটা সৃজনশীল হবে না। সৃজনশীল প্রশ্ন-পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষক সর্বপ্রথম কোনো একটি অধ্যায়ের পাঠের আলোকে একটি মৌলিক উদ্দীপক তৈরি করেন। উদ্দীপক তৈরির পর শিক্ষক চার স্তরের চারটি প্রশ্ন করেন। তবে উদ্দীপকে কোনো প্রশ্নের উত্তর থাকে না বরং উদ্দীপকটি শিক্ষার্থীকে উত্তর প্রদানে সাহায্য করে। অর্থাৎ উদ্দীপকটি শুধু শিক্ষার্থীর উদ্দীপনা জাগায়, শিক্ষার্থীকে ভাবতে শেখায়।

সৃজনশীল প্রশ্নের কয়টি ধাপ বা স্তর থাকে?: সৃজনশীল প্রশ্ন চার প্রকার। এইগুলো হচ্ছে- (১)জ্ঞানমূলক, (২)অনুধাবনমূলক, (৩) প্রয়োগমূলক (৪) উচ্চতর দক্ষতামূলক। এরমধ্যে জ্ঞানমূলক প্রশ্নের মান থাকে ১, অনুধাবনমূলক প্রশ্নের মান থাকে ২, প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মান থকে ৩ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের মান থাকে ৪। কয়েকটি বিষয়ে (যেমন-গণিত, হিসাববিজ্ঞান) তিনটি অংশও (২+৪+৪) থাকতে পারে। জ্ঞানমূলক প্রশ্নগুলো বই থেকে হুবহু আসবে। জ্ঞানমূলক/জ্ঞানস্তরের প্রশ্নে যা চাওয়া হয় শুধু তা ঠিকভাবে লিখতে হবে। তবে অনুধাবনমূলক প্রশ্ন বই থেকে হুবহু আসবে না। বিষয়টি বুঝতে পারলেই কেবল উত্তর করা যাবে। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর দুইটি প্যারায় লিখতে হবে। প্রয়োগমূলক প্রশ্ন বই থেকে হুবহু আসবে না। এ অংশে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ করার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। বইয়ের বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রশ্নসংশ্লিষ্ট (উদ্দীপক) বিষয়বস্তুর মিল বা সাদৃশ্য অথবা বৈসাদৃশ্যপূর্ণ অংশটুকুর উত্তর দিতে হবে। উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নগুলো বই থেকে হুবহু আসবে না। এ অংশে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানকে একাধিক শিক্ষনফলের আলোকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা যাচাই করা হয়।

READ ALSO

১.জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম: এই অংশের প্রশ্নের উত্তর বেশি করে লিখা যাবে না। এক লাইনের মধ্যেই লেখা শেষ করতে হবে। অনেকে জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর এক শব্দে লিখে থাকে। সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নিয়ম অনুযায়ী এই পদ্ধতি ভুল না হলেও অনেক শিক্ষকই এক শব্দে উত্তর লিখতে বারণ করে থাকেন। জ্ঞানমূলক প্রশ্ন সাধারণত বই থেকেই আসে। এই অংশের প্রশ্নের সাথে উদ্দীপকের অনুচ্ছেদের মিল থাকেনা বলেই ধরে নেয়া যায়।

২.অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম: সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নিয়ম অনুযায়ী অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর করতে হবে দুইটি অংশে, কেননা এই প্রশ্নের নম্বর বণ্টনও হচ্ছে ২। উত্তরের দুইটি অংশ প্যারা আকারে লিখতে হবে। প্যারার প্রথম অংশে প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু জ্ঞানমূলক উত্তর দেয়া যেতে পারে। পরবর্তী অংশে প্রশ্নের মূল উত্তর কিছুটা গুছিয়ে লিখতে হবে। প্রথম প্যারায় জ্ঞানের অংশ অল্প কথায় শেষ করেই দ্রুত দ্বিতীয় অংশে নজর দিতে হবে। ৬-৭ লাইনের মধ্যে পুরো প্রশ্নের উত্তর অনুধাবনের ধাঁচে লিখে শেষ করতে হবে। অনুধাবন প্রশ্নের উত্তরের সাইজ আধ পৃষ্ঠা হলে ভালো হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বেশি সুন্দর করে লিখতে গিয়ে যেনো অতিরিক্ত সময় খরচ না হয়।

৩.প্রয়োগমূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম: সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে প্রয়োগমূলক প্রশ্নোত্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নিয়ম অনুযায়ী এই অংশে মূলত উদ্দীপকের কোনো অনুচ্ছেদের সাথে পাঠ্যবইয়ের কোনো অংশের পার্থক্য কিংবা সাদৃশ্য তুলে ধরতে বলা হয়। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য নির্ধারিত নম্বর হচ্ছে ৩। সুতরাং এই প্রশ্ন ৩ প্যারায় দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। প্রথম প্যারায় থাকবে যথারীতি কিছু জ্ঞানের সমাহার। এক্ষেত্রে প্রথম প্যারায় উদ্দীপকের অনুচ্ছেদের ছোট একটি সারমর্ম দেয়া যেতে পারে এবং একইসাথে অনুচ্ছেদের সাথে পাঠ্যবইয়ের গল্প-কবিতার সম্পর্কটাও খুব ছোট আকারে দেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয় প্যারায় মূলভাব লিখতে হবে। এই অংশে কখনোই উদ্দীপকের বিষয়বস্তু সরাসরি তুলে আনা উচিত না, কারণ এই জিনিসটা প্রথম প্যারার মধ্যেই সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখিত রয়েছে। দ্বিতীয় প্যারায় একদম স্পষ্টভাবে প্রশ্নে যা চাওয়া হয়েছে সেইদিকে ফোকাস করতে হবে। ৭-৮ লাইনের মধ্যে উদ্দীপকের সাথে বইয়ের পঠিত বিষয়ের অংশের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরতে হবে। সর্বশেষ প্যারা হবে কিছুটা বাংলা রচনার উপসংহারের মত। এই অংশেই মূলত প্রয়োগের ব্যাপারটা চলে আসবে।

৪. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তর লেখার নিয়ম: বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের উত্তরে সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া একটু কঠিন, কিন্তু চেষ্টা করলেই সম্পূর্ণ নম্বর পাওয়া যায়। এই প্রশ্নের উত্তরের আকার সবচেয়ে বড় হয় বলে নিরীক্ষকেরা অনেক সময় নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর পরখ করে দেখেন। এই ধরণের প্রশ্নের ধরণও একটু ভিন্নধরণের হয়ে থাকে। সৃজনশীল প্রশ্ন লেখার নিয়ম অনুযায়ী উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বলা হয়। আবার অনেক সময় প্রশ্নে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যৌক্তিকতা বর্ণনা করতে বলা হতে পারে। অনেকসময় দেখা যায়, প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। তখন মূলত যে সুন্দর করে উপযুক্ত যুক্তি দিয়ে নিজের মতামতটি ব্যাখ্যা করতে পারবে, তার উত্তরই বেশি হৃষ্ট পুষ্ট হবে। উচ্চতর দক্ষতার জন্য তোমার যে খুব বেশি পরিমাণের উচ্চতর দক্ষতা প্রয়োজন তা কিন্তু নয়, শুধুমাত্র লেখার সময় কয়েকটি ছোট কৌশল অবলম্বন করাই যথেষ্ট। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৪ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। সুতরাং প্রশ্নের উত্তরও ৪ প্যারায় লিখতে হবে। প্রথম তিন প্যারা লেখার ক্ষেত্রে প্রয়োগমূলক স্তরের পন্থা অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ প্রথম তিন প্যারা লেখার সময় প্রয়োগমূলক স্তরের মত করেই লেখা যেতে পারে। চতুর্থ প্যারা লেখার সময় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। কেননা এই প্যারার উপকরণগুলোই উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নকে প্রয়োগ থেকে আলাদা করে দিবে।

সৃজনশীল প্রশ্ন কাকে বলে? প্রশ্ন কত প্রকার ও উত্তর লেখার নিয়ম
সৃজনশীল প্রশ্নের গঠন বা বিভাজন

গণিত ও উচ্চতর গণিতে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখবেন যেভাবে: গণিত ও উচ্চতর গণিতে স্তর থাকে তিনটি। এক্ষেত্রে জ্ঞান, অনুধাবন এ জাতীয় কিছু থাকে না। ‘ক’ অংশে কোনো সংজ্ঞা বা ছোটোখটো কোনো অঙ্ক দেয়া হয়, যা করতে বেশি সময় লাগে না। এগুলো সাধারণত জটিল হয় না। আর ‘খ’ এবং ‘গ’ অংশেও বই থেকে প্রদত্ত নিয়ম অনু্যায়ী সূত্র মেনে অঙ্কগুলোর সমাধান করতে হবে। এর জন্য বইয়ের সূত্র, নিয়ম এবং টপ টপিকস গুলো ভলোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। তাহলেই সৃজনশীল এ পূর্ণ মার্ক একেবারেই সহজ হয়ে যাবে।

সৃজনশীল পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা কি?: সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে এখন শিক্ষার্থীরা সকল কিছু বুদ্ধির মাধ্যমে পড়ছে। তাই মুখস্থবিদ্যা কমে যাচ্ছে। এতে বই পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ বইয়ের যেকোনো স্থান থেকে সৃজনশীল আসতে পারে। শিক্ষার্থীদের মানসিক বৃদ্ধি ঘটে।সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। এদিকে, সৃজনশীল পদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীরা কোচিং সেন্টারের দিকে ঝুঁকেছে। গাইড বই পড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

See also  নবম-দশম শ্রেণি: বাংলা ভাষার রীতি ও বিভাজন-পরিচ্ছেদ-৩
Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts

No Content Available

Related Posts

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?