- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন থানায় অবস্থিত
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ সমূহ
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির যোগ্যতা
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কত সালে প্রতিষ্ঠিতহয়
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছেন। এরমধ্যে রয়েছেন ১৩ জন রাষ্ট্রপতি, ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এখানে পড়াশোনা করেছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অবদান ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়া এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়া উইকের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নেয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্ত্বার বিকাশের লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন শাসকদের অন্যায্য সিদ্ধান্তে পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতিবাদের ফসল হচ্ছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হলো www.du.ac.bd.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য, মনোগ্রাম শিল্পী ও স্লোগান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবাক্য হলো সত্যের জয় সুনিশ্চিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম শিল্পী হলেন-সমরজিৎ রায় চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্লোগান হলো শিক্ষাই আলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও উপাচার্য কে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও উপাচার্য হলেন- রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোন থানায় অবস্থিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানী শাহবাগ থানায় অবস্থিত।
শিক্ষায়তনিক, প্রশাসনিক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত জন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ হলেন ১ হাজার ৯৯২ জন। প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ হলেন ৪ হাজার ৪১৭ জন। ২০১৮-২০১৯ সালে তথ্যনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৬ হাজার ১৫০ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কে প্রতিষ্ঠা করেন
নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান প্রস্তাবক। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর মাত্র তিন দিন পূর্বে ভাইসরয় এর সাথে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)-এর অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আচির্বল্ড, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক, এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য।
১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাশ করে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’। লর্ড রোনাল্ডসে ১৯১৭ হতে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর থাকাকালে নবাব সৈয়দ শামসুল হুদা কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ঘোষণা করেন। সৈয়দ শামসুল হুদার সুপারিশে স্যার এ. এফ. রাহমান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মনোনীত করা হয়, তিনি ইতঃপূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যরত ছিলেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে রফিকুল ইসলামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নাথান কমিটি রমনা অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায় তখন ছিল ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট হাউস, সেক্রেটারিয়েট ও গভর্নমেন্ট প্রেসসমূহ।সৃষ্টির শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ে।
এছাড়া ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে সাম্রাজ্যিক বিধান পরিষদে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। এ ৮৪৭ জনের মধ্যে নারী ছিলেন একজন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির উপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনসমূহের সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।
তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। শুধু ছাত্র নয়, শিক্ষক এবং লাইব্রেরির বই ও অন্যান্য উপকরণ দিয়েও এই দুটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে। এই সহযোগিতা দানের কৃতজ্ঞতা হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলের নামকরণ করা হয় ঢাকা হল (বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল) ও জগন্নাথ হল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় অবস্থিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) রাজধানীর ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২১ সালে ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৮ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও ২৮ তম উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে পূর্ণকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ, অনুষধ, আবাসাকি হল, ছাত্রাবাস সমূহ
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র, ২০টি আবাসিক হল ও ৩টি ছাত্রাবাস, এবং ৭টি স্নাতক পর্যায়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজ সহ মোট ১০৫টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর ভিন্ন অবকাঠামো ও কর্মকাণ্ড রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত স্নাতক পর্যায়ের সাতটি কলেজগুলো কি কি:
- ঢাকা কলেজ
- ইডেন কলেজ
- কবি নজরুল সরকারি কলেজ
- সরকারি তিতুমীর কলেজ
- সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
- বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ
- সরকারি বাঙলা কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কতটি আবাসাকি রয়েছে:
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে কোনো না কোনো হলের সাথে আবাসিক বা অনাবাসিক ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যুক্ত থাকতে হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৪টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৫টি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া চারুকলা অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা হোস্টেল এবং বিদেশী ছাত্রদের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির যোগ্যতা
স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। বিজ্ঞান অনুষদের জন্য ‘ক’ ইউনিট, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জন্য ‘খ’ ইউনিট, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য ‘গ’ ইউনিট, বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ‘ঘ’ ইউনিট, এবং চারুকলা অনুষদের জন্য ‘চ’ ইউনিটে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ৮.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.৫০), খ ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ৭.৫০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০), এবং গ ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ৭.৫০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০) থাকতে হবে। ঘ ইউনিটের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শাখার মোট জিপিএ মোট জিপিএ ৮.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০), মানবিক ও বাণিজ্য শাখার ক্ষেত্রে মোট জিপিএ ৭.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০) থাকতে হবে এবং চ ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ন্যূনতম ৭.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০) থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে আসন সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার ফল ও পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারে।
Photo By: prothomalo