তারাবির নামাজ কি
ইসলাম ধর্মে তারাবিহ বা কিয়ামুল লাইল হলো রাতের সালাত, যেটি মুসলিমগণ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর পড়ে থাকেন।
তারাবিহ শব্দের অর্থ কি
আরবি: تَرَاوِيْحِ, তরাৱীহ় শব্দটির একবচন ‘তারবীহাতুন’ (আরবি: تَروِيْحَة)। এর আভিধানিক অর্থ বসা, বিশ্রাম করা, আরাম করা।
তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল
তারাবী নামায সুন্নত হওয়াকে যে অস্বীকার করবে অথবা অবৈধ মনে করবে সে বিদআতের আবিস্কারক, পথভ্রষ্ট। আর তাহতাবী কিতাবে রয়েছে যে তারাবী নামায সুন্নত, এই নামায বর্জন ও ছেড়ে দেয়া জায়েয নাই। (কামুসুল ফিকহ ২/৪৪৮)
মনে রাখবেন, সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে। উত্তর দিয়েছেন-শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
তারাবির নামাজ কত রাকাত
তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ বিদ্যামান আছে।
৮ রাকাত: ৮ রাকাত তারাবিহের পক্ষেই সবচেয়ে বেশি প্রমাণাদি বিদ্যমান। সালাফি তথা আহলুল হাদিসদের মধ্যে ৮ রাকাত তারাবিহের প্রচলন দেখা যায়। রাসুল(সা.) এর হাদিস থেকে ৮ রাকাআত তারাবীহ প্রমাণিত হয়।যেমন:
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي
অনুবাদ: আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমাযানে আল্লাহর রাসূল(﷽)এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে ও রমাযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক‘আত হতে বৃদ্ধি করতেন না তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাযি.)] বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না।
উল্লেখ্য, হাদিসটি সম্পর্কে অনেকে বলতে চেয়েছেন যে হাদিসটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত।যেটি বেশ কয়েকটি কারণে সঠিক নয়।যেমনঃ (১)হাদিসটি ইমাম বুখারি(রহ.) এনেছেন “তারাবীহের সালাত অধ্যায়ে”।বিভিন্ন প্রকাশনীর সকল বুখারিতেই অধ্যায়ের নাম উপস্থিত থাকলেও,ভারতীয়(দেওবন্দি)ছাপা বুখারিতে তা নেই। অথচ আরব বিশ্বের সকল বুখারিতে তা বিদ্যমান।এছাড়া বুখারির বিভিন্ন ব্যাখ্যা গ্রন্থেও অধ্যায়ের নামটি রয়েছে।যেমনঃফাতহুল বারীতে বিদ্যমান আছে।যেটা বুখারির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হিসেবে বিশ্বব্যাপী গৃহীত। (২)হাদিসে বিতরের সালাতকেও উক্ত ১১ রাকাতের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে।যদি এটাকে তাহাজ্জুদ ধরা হয় তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব যে এক রাতে রাসুল(সা.) দুইবার বিতর পড়বেন?
উমর(রা.) ২০ রাকাত তারাবীহ চালু করেছিলেন মর্মে যে বক্তব্য প্রচলিত আছে সেটিও সঠিক নয়।কারণ,হাদিস থেকে দেখা যায় উমার(রা.) ৮ রাকাত পড়ারই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
যেমনঃ وَعَن السَّائِب بن يزِيد قَالَ: أَمَرَ عُمَرُ أُبَيَّ بْنَ كَعْبٍ وَتَمِيمًا الدَّارِيَّ أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ فِي رَمَضَانَ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً فَكَانَ الْقَارِئُ يَقْرَأُ بِالْمِئِينَ حَتَّى كُنَّا نَعْتَمِدُ عَلَى الْعَصَا مِنْ طُولِ الْقِيَامِ فَمَا كُنَّا نَنْصَرِفُ إِلَّا فِي فُرُوعِ الْفَجْرِ
অনুবাদঃ সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রা.)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) উবাই ইবনু কা‘ব ও তামীম আদ্ দারী-কে আদেশ করলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাক্‘আত তারাবীহের সালাত আদায় করে। এ সময় ইমাম তারাবীহের সালাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্ত্ততঃ ক্বিয়াম (কিয়াম) বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজ্রের (ফজরের) নিকটবর্তী সময়ে সালাত শেষ করতাম।”
২০ রাকাত
হানাফি মাযহাবে ২০ রাকাত তারাবীহের প্রচলন আছে। ২০ রাকাতের পক্ষে কিছু যঈফ হাদিস বিদ্যমান আছে।অপর দিকে উমর(রা.) ২০ রাকাত চালু করেছেন মর্মে যে বর্ণনা বিদ্যমান তার সনদ মুনকাতি’ হিসেবে যঈফ।আর একটি সহিহ আছারের বিপরীতে হওয়ায় সেটিকে অনেকেই গ্রহণ করেন নি।
৩৬ রাকাত
কোনো কোনো বিদ্বান ৩৬ রাকাত পড়ারও মত দিয়েছেন।
তারাবিহ নামাজের বাংলা নিয়ত
তারাবিহ নামাজ দুই দুই রাকাআতে আদায় করতে হয়। তাই এভাবে নিয়ত করা-
তারাবিহ-এর দুই রাকাআত নামাজ ক্বেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য (জামাআত হলে- এ ইমামের পেছনে) পড়ছি- (اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।
তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম
দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। আবার দুই রাকাআত নামাজ পড়া। এভাবে ৪ রাকাআত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নেয়া। বিশ্রামের সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকির আজকার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে আলাদা আলাদা নিয়তে তারাবিহ আদায় করা।
তারাবিহ নামাজের দোয়া
৪ রাকাআত তারাবিহ আদায় করার পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে। যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। আর তাহলো-
سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’
উল্লেখ্য তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাআত পর পর পড়ার এ দোয়াটি ব্যাপক প্রচলিত। তবে এ দোয়ার সঙ্গে তারাবিহ নামাজ হওয়া কিংবা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে, এ দোয়া না জানলে তারাবিহ নামাজ আদায় হবে না। বরং যে কোনো দোয়াই পড়া যাবে। তবে এ সময়টিতে কুরআন-সুন্নাহর দোয়াগুলো পড়াই উত্তম।
তারাবিহ নামাজের মুনাজাত
অনেকেই ৪ রাকাআত পর পর মুনাজাত করে থাকে। আবার অনেকে পুরো নামাজ শেষ করে মুনাজাত করে থাকে। তবে নামাজ শেষ করে বিতর পড়ে মুনাজাত দেয়াই উত্তম। মুনাজাতের ক্ষেত্রেও একটি দোয়া ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।এ মুনাজাতটিকেও অনেকে আবশ্যক মনে করে। কেউ কেউ এমনও মনে করে যে, এ দোয়াটি ছাড়া তারাবিহ নামাজের মুনাজাত হবে না।এটি মোটেও ঠিক নয়। তবে এ দোয়ায় মুনাজাত দিলে গোনাহ হবে তা নয়। মুনাজাতটি হলো-
اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’
উল্লেখ্য, রমজান জুড়ে বিশ্বনবির এ দোয়াগুলো বেশি বেশি করা জরুরি। আর তাহলো-
– اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।
তাছাড়া তারাবিহ নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-
– اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
তারাবির নামাজ ছাড়া কি রোজা হবে
রমজান মানেই রোজাদারদের জন্য বিশেষ এক পরীক্ষা। এ পরীক্ষা যেমন মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের, ঠিক তেমনি সুস্থ সবল দেহে পরিপূর্ণভাবে সব আমল ও ইবাদত সম্পন্ন করার। সেই আমল ও ইবাদত পালন করার সময় আমাদের কিছু ভুল ধারণা আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি না!
সারাদিন রোজা রাখার পর এশার নামাজ শেষে আমরা সাধারণত তারাবিহ নামাজ পড়ে থাকি। ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়ার পর বেতর নামাজ পড়ে আমরা বাসায় ফিরে আসি। আর এই রমজান মাসের জন্য নির্দিষ্ট তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়া ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
অপরদিকে রমজানের পুরো মাস মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম হলো রোজা, যা মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।
এখন কথা হলো এই তারাবিহ নামাজ আসলে কী? তারাবিহ নামাজের সঙ্গে রোজার কী সম্পর্ক?
তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি না–এ বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে না। আসলে বিষয়টি ঠিক নয়। কেন ঠিক নয়, সে বিষয়েই ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের আলোকপাত করেছেন। চলুন জেনে নিই তার মুখেই–
তারাবিহ নামাজ কোনো কারণে কেউ পড়তে না পারলে অনেকে মনে করেন তারাবিহ যেহেতু পড়তে পারলাম না, তাহলে রোজা রেখে লাভ নেই। বিষয়টি একদমই ঠিক নয়। কেননা, তারাবিহ নামাজ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু রোজা রাখায় আছে। রোজা রাখা ফরজ, যা অবশ্যই পালনীয়।
তারাবিহ নামাজ রাসুল (সা.) পড়েছেন। তার ধারাবাহিকতায় এই নামাজ মুসলমানরা পড়ে আসছেন। হজরত ওমর ফারুক (রা.) থেকে এখন অবধি ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় হয়ে আসছে। বাংলাদেশের সব মসজিদেই ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া হয়।
কিন্তু যদি কেউ তারাবিহ নামাজ পড়তে না পারার জন্য পরবর্তী সময়ে রোজা না রাখেন, তাহলে সে অনেক বড় ভুল করবেন। কেননা, তারাবিহ হচ্ছে সুন্নত আর রোজা ফরজ। ফরজ মানে অবশ্য পালনীয়। তাই রোজার সঙ্গে তারাবিহর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু রোজা রেখে তারাবিহ নামাজ পড়লে তাতে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে।
রমজান মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই এ মাসে তারাবিহ নামাজের মাধ্যমে পবিত্র কোরআন খতম দেওয়া হয়। আপনি যদি রমজানের পুরো মাস ধারাবাহিকভাবে তারাবিহ নামাজ পড়তে পারেন, তাহলে আপনি পবিত্র কোরআন খতম দেওয়ার সওয়াবও পেয়ে যাবেন। কিন্তু যদি কেউ তারাবিহ নামাজ পড়তে না পারেন তাতে সমস্যা নেই। এতে রোজায় কোনো প্রভাব পড়বে না। তারাবিহ নামাজ না পড়তে পারলেও রোজা হবে।
তারাবির নামাজ একা পড়া যাবে কি না
ফরজ নামাজ ব্যতিত অন্য সকল নামাজ একাকী আদায় করা উত্তম। কিন্তু তারাবি নামাজ ব্যতিক্রম। তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা শরীয়ত সম্মত। বরং তারাবি একাকী আদায় করার চেয়ে জামাতবদ্ধভাবে আদায় করা উত্তম।
তারাবির নামাজ একা পড়ার নিয়ম
শরিয়ত অনুমোদিত কোনো কারণে যদি কোনো পুরুষ মসজিদে যেতে না পারে, তাহলে ঘরের মাহরাম নারীদের সঙ্গে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়া তার জন্য বৈধ। এ ক্ষেত্রে সবাই জামাতের সওয়াব পাবে। কিন্তু গায়রে মাহরাম নারীদের নিয়ে ঘরে জামাতে নামাজ আদায় সমীচীন নয়।
তবুও গায়রে মাহরাম নারীরা যদি ঘরে নামাজের জামাতে শরিক হতে চায়, অবশ্যই তারা পর্দার আড়ালে থেকে জামাতে অংশগ্রহণ করবে। পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে জামাত করা বৈধ নয়। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২৮; আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ২/২২৭)
এভাবে নামাজ পড়তে গেলে জামাতে দাঁড়ানোর পদ্ধতি হলো— এক বা একাধিক নারী পেছনের সারিতে দাঁড়াবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/৫৬৬; আহসানুল ফাতাওয়া : ৩/২৯৯)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে ঘরে জামাতে নামাজ পড়েছি, একবার আমি নবী করিম (সা.)-এর পাশে দাঁড়িয়েছি, আর আয়েশা (রা.) আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আমাদের সঙ্গে জামাতে শরিক হয়েছিলেন। (নাসাঈ, হাদিস : ৮০৩)
আরও পড়ুন: