শব্দার্থ ও টীকা
প্রকান্ড-অত্যন্ত বৃহৎ, অতিশয় বড়।
বিব্রত-ব্যতিব্যস্ত, বিপন্ন, বিচলিত।
খাপছাড়া-বিহাল, দিশেহারা, হতজ্ঞান।
শ্রাদ্ধ-মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য শুদ্ধা নিবেদনের হিন্দু আচার বা শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান।
উইল-শেষ ইচ্ছেপত্র। মৃত্যুর পরে সম্পত্তি বণ্টন বিষয়ে মালিকের ইচ্ছানুসারে প্রস্তুত ব্যবস্থাপত্র বা দানপত্র, যা তার মৃত্যুর পরে বলবৎ হয়।
প্রেতাত্মা-মৃতের আত্মা, ভুত।
উদভ্রান্ত-বিহ্বল. দিশেহারা. হতজ্ঞান।
অনুতাপ-আফসোস, কৃতকর্ম বা আচরণের জন্য অনুশোচনা।
তৈলচিত্র-তেলরঙের আঁকা ছবি।
প্রণাম-হাত ও মাথা দ্বারা গুরুজনের চরণ স্পর্শ করে অভিবাদন।
আত্মগ্লানি-নিজের ওপর ক্ষোভ ও ধিক্কার, অনুতাপ, অনুশোচনা।
বিস্ফোরিত -বিস্তারিত, প্রসারিত, কম্পিত।
কস্মিনকালে-কোনো কালে বা কোনো কালেই।
ছলনা-কপটতা, শঠতা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, ধোঁকা।
হৃৎকম্প-হৃৎপিন্ডের স্পন্দন, বুকের কাঁপুনি।
মটকা-রেশমের মোটা কাপড়।
ভৎর্সনা-তিরস্কার, ধমক, নিন্দা।
ইতস্তত-দ্বিধা, সংকোচ, গড়িমসি।
অশরীরী-দেহহীন, শরীরহীন, নিরাকার।
পাঠের উদ্দেশ্য
ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে যে কুসংস্কার বিরাজমান, তা ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অন্তঃসারশূন্য। বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে এই কুসংস্কার ও অন্যবিশ্বাস সহজেই দূর করা সম্ভব। গল্পটি পড়ে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ভয়মুক্ত, কুসংস্কারমুক্ত ও সচেতন হবে।
পাঠ-পরিচিতি
তৈলচিত্রের ভূত’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি কিশোর-উপযোগী ছোটগল্প। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মৌচাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এ গল্পটি। ভূতে বিশ্বাস নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজমান কুসঙ্গের যে ভিত্তিহীন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ গল্পে তা তুলে ধরেছেন। এ পরে তিনি দেখিয়েছেন বিজ্ঞানবুদ্ধির জয়। কুসংস্কারাচ্ছন্নতার কারণে মানুষ নানা অশরীরী শক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মানুষকে যদি বিজ্ঞানচেতনা দিয়ে ঘটনা-বিশ্লেষণে উদ্বুদ্ধ করা যায় তাহলে ঐসব বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এ গল্পে নগেন চরিত্রের মধ্যে ভূত-বিশ্বাসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তার বিজ্ঞানসম্মত বিচারবুদ্ধির মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলেছেন নগেনের বিশ্বাস ও কুসংস্কারের ভিত্তিহীনতাকে। মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূতে পরিণত হয়— এরকম বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত থাকায় নগেন বৈদ্যুতিক শককে ভূতের কাজ বলে সহজে বিশ্বাস করেছে। অন্যদিকে পরাশর ডাক্তার সবকিছু যুক্তি নিয়ে বিচার করেন বলে তার কাছে বৈদ্যুতিক শকের বিষয়টি সহজেই ধরা পড়েছে।
লেখক-পরিচিতি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘মানিক’ তাঁর ডাকনাম। ১৯০৮ সালে সাঁওতাল পরগনার দুমকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯২৮ সালে তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হয়। লেখালেখির কারণে বি. এসসি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন নি। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘পদ্মানদীর মাঝি’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এই উপন্যাসে তিনি জেলেদের কথা বলতে গিয়ে শোষক ও শোষিত দুই শ্রেণির চিত্র এঁকেছেন। এছাড়া ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘অহিংসা’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা”, তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। তাঁর লেখার প্রবণতা ছিল মানুষের মন-বিশ্লেষণ করা। ১৯৫৬ সালে তিনি কলকাতায় মারা যান।