নবম-দশম শ্রেণি: ধ্বনি ও বর্ণ-পরিচ্ছেদ-৫

নবম-দশম শ্রেণি: ধ্বনি ও বর্ণ-পরিচ্ছেদ-৫

ভাষার ক্ষুদ্রতম একককে ধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় ৩৭টি মৌলিক ধ্বনি রয়েছে। এই ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি। মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি: [ই], [এ], [অ্যা], [আ], [অ], [ও], [উ]; এবং মৌলিক ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি: [প্], [ফ্], [ব্], [ভ্], [ত্], [খ্], [দ], [ধ], [ট্], [ঠ], [ড্‌], [ট্‌], [চ্], [ছ], [জ], [ঝ], [ক্], [খ্], [গ], [ঘ], [ম্], [], [ঙ], [স্], [শ], [হ্], [ল্], [র্], [ড় ], [ঢ় ] । এখানে তৃতীয় বন্ধনী দিয়ে ধ্বনি বা উচ্চারণ নির্দেশ করা হয়েছে।

যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ু মুখগহ্বরের কোথাও বাধা পায় না, সেগুলোকে স্বরধ্বনি বলে। অন্যদিকে যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময়ে বায়ু মুখের বাইরে বের হওয়ার আগে বাপ্রত্যঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বাধা পায়, সেগুলোকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

ধ্বনির প্রতীককে বলা হয় বর্ণ। এই বর্ণ কানে শোনার বিষয়কে চোখে দেখার বিষয়ে পরিণত করে। ভাষার সবগুলো বর্ণকে একত্রে বলা হয় বর্ণমালা। ধ্বনির বিভাজন অনুযায়ী বাংলা বর্ণমালাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। স্বরধ্বনির প্রতীক স্বরবর্ণ। ব্যঞ্জনধ্বনির প্রতীক ব্যঞ্জনবর্ণ। বাংলা বর্ণমালায় মূল বর্ণের সংখ্যা ৫০টি। তবে মূল বর্ণের পাশাপাশি বাংলা বর্ণমালায় রয়েছে নানা ধরনের কারবর্ণ, অনুবর্ণ, যুক্তবর্ণ ও সংখ্যাবৰ্ণ । মূল বর্ণগুলো স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণে বিভক্ত।

স্বরবর্ণ: অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ এ ঐ ও ঔ = ১১টি

ব্যঞ্জনবর্ণ:

ক খ গ ঘ ঙ
চ ছ জ ঝ ঞ
ট ঠ ড ঢ ণ
ত থ দ ধ ন
প ফ ব ভ ম
য র ল
শ ষ স হ
ড় ঢ় য় ৎ
ং ঃ
= ৩৯টি

কারবর্ণ
স্বরবর্ণের মোট ১০টি সংক্ষিপ্ত রূপ রয়েছে, এগুলোর নাম কারবর্ণ:,,,,,,, ,ৈ ণে, ৗে। কারবর্ণের স্বতন্ত্র ব্যবহার নেই । এগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের আগে, পরে, উপরে, নিচে বা উভয় দিকে যুক্ত হয়। কোনো ব্যঞ্জনের সঙ্গে কারবর্ণ বা হচিহ্ন না থাকলে ব্যঞ্জনটির সঙ্গে একটি [অ] আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

See also  স্বরবর্ণ-স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি-হ্রস্বস্বর-দীর্ঘস্বর-মৌলিকস্বর

অনুবর্ণ
ব্যঞ্জনবর্ণের বিকল্প রূপের নাম অনুবর্ণ। অনুবর্ণের মধ্যে রয়েছে ফলা, রেফ ও বর্ণসংক্ষেপ।

ফলা: ব্যঞ্জনবর্ণের কিছু সংক্ষিপ্ত রূপ অন্য ব্যঞ্জনের নিচে অথবা ডান পাশে ঝুলে থাকে, সেগুলােকে ফলা বলে, যেমন – ন-ফলা (,), ব-ফলা (), ম-ফলা (J), য-ফলা (), র ফলা (এ), ল-ফলা )।

রেফ: র-এর একটি অনুবর্ণ রেফ ।

বর্ণসংক্ষেপ: যুক্তবর্ণ লিখতে অনেক সময়ে বর্ণকে সংক্ষেপ করার প্রয়োজন হয়। এগুলো বর্ণসংক্ষেপ
যেমন – ভ, দ, ন,ञ ইত্যাদি। এছাড়া ৎ বর্ণটি ত-এর একটি বর্ণসংক্ষেপ, যা বাংলা বর্ণমালায় স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে স্বীকৃত।

যুক্তবর্ণ
একাধিক বর্ণ যুক্ত হয়ে যুক্তবর্ণ তৈরি হয়। যুক্ত হওয়া বর্ণগুলোকে দেখে কখনো সহজে চেনা যায়, সহজে চেনা যায় না। এদিক দিয়ে যুক্তবর্ণ দুই রকম: স্বচ্ছ ও অস্বচ্ছ।

সংখ্যাবৰ্ণ
স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ: ক্ট, জ্ঞ, জ্ঝ, ঞ্ঝ, ড্ড, ণ্ট, ণ্ঠ, দ্দ, দ্ব, দ্ম, ষ্ঠ, ন্ড, ন্স, প্ট, প্ত, প্প, প্স, জ, ল্ট, ল্ড, ল্প, ল্ফ, শ্চ, ছ, ষ্ট, ষ্ঠ, ষ্ফ, স্খ, , স্ট, স্ক ইত্যাদি।

অস্বচ্ছ যুক্তবর্ণ: ক্ত (ক্+ত), ক্ম (ক্+ম), ক্র (ক্+), ক্ষ (ক্+ষ), ক্ষ্ম (ক্+ষ্+ম), ক্স (ক্+স), গু (গ্+উ), ন্ধ (গ্‌+ধ), ঙ্ক (ঙ্+ক), ঙ্গ (ঙ্+গ), জ্ঞ (জ্+ঞ), ঞ্চ (ঞ+চ), ঞ্ছ (ঞ+ছ), ঞ্জ (+জ), ট্ট (ট্+ট), ত্ত (ত্+ত), খ (ত্+থ), ত্র (ত্+র), ও (ণ্+ড), দ্ধ (দ+ধ), ন্ধ (ন্+ধ), ব্ধ (বৃ+ধ), ভ্র (ভ্+র), ভ্রূ (ভ্+র্+উ), রু (র্+উ), রূ (র্+উ), শু (শ্+উ), ষ্ণ (ষ্+ণ), হু (হ্+উ), হৃ (হ্+ঋ), হ্ন (হ্+ন), হ্ম (হ্+ম) ইত্যাদি ।

বাংলা ভাষায় সংখ্যা নির্দেশের জন্য দশটি সংখ্যাবর্ণ রয়েছে। যথা: ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ০।

Related Posts

নবম-দশম শ্রেণি: বাংলা ভাষার রীতি ও বিভাজন-পরিচ্ছেদ-৩

অধিকাংশ ভাষায় অন্তত দুটি রীতি থাকে: ১. কথ্য ভাষা রীতি ও ২. লেখ্য ভাষা রীতি। বাংলা ভাষায় এসব রীতির একাধিক...

Read moreDetails

ধ্বনি-বর্ণ-মাত্রাহীন-অর্ধমাত্রা-স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণ

কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদান সমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে ধ্বনি বলে। ধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয়...

Read moreDetails

৮ম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র: ধ্বনি ও বর্ণের বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর

কোন ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদান সমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকাভে ধ্বনি বলে। অন্যদিকে, কোনো ভাষা লিখতে যেসব...

Read moreDetails
x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?