বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ও মৃত্যু: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ২৬ জুন ১৮৩৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বাংলা ভাষায় প্রথম শিল্পসম্মত উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব তারঁই। শেষ জীবনে তার স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ছিল না। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তার বহুমূত্র রোগ বেশ বেড়ে যায়। এই রোগেই অবশেষে তার মৃত্যু হয়। ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল মাসে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল)।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছদ্মনাম ও উপাধি: ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একসময় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে চাকরি করেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ১৮৯১ সালে ‘রায়বাহাদুর’ এবং ১৮৯৪ সালে ‘Companion of the Most Eminent Order of the Indian Empire’ (CMEOIE) উপাধি প্রদান করে। তাকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট কতটি উপন্যাস লিখেছিলেন ও কি কি : বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস হলো দুর্গেশনন্দিনী। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন এবং এরমধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাস ছিলো। বঙ্কিমই বাংলা ভাষাকে প্রথম সত্যিকারের মর্যাদা দিয়েছিলেন। তার রচনা ‘বঙ্কিমী শৈলী’ বা ‘বঙ্কিমী রীতি’ নামে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারানী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী, সীতারাম, rajmohan’s wife (রাজমোহনস ওয়াইফ). এরমধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক উপন্যাস হলো-রাজসিংহ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাসগুলো মনে রাখার কৌশল: দুর্গেশনন্দিনী দেবী চৌধুরানী কপালকুণ্ডলা সীতারাম ইন্দিরা যুগলাঙ্গুরীয় এই তিন বোনের ভ্রাতা রাজসিংহের পরামর্শে রজনী অন্ধকারে কৃষ্ণকান্তের উইল চুরি করলে চন্দ্রশেখর আনন্দমঠে রাজমোহনস ওয়াইফের হাতে ধরা খেল।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ রচনা: প্রবন্ধ গ্রন্থ, কমলাকান্তের দপ্তর, লোকরহস্য, কৃষ্ণ চরিত্র, বিজ্ঞানরহস্য, বিবিধ সমালোচনা, প্রবন্ধ-পুস্তক, সাম্য, কৃষ্ণ চরিত্র, বিবিধ প্রবন্ধ, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত (ব্যাঙ্গ)।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাব্যগ্রন্থ: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ললিতা তথা মানস নামে একটি কাব্য গ্রন্থ রচনা করেন। বঙ্কিমই বাংলা ভাষাকে প্রথম সত্যিকারের মর্যাদা দিয়েছিলেন। তার রচনা ‘বঙ্কিমী শৈলী’ বা ‘বঙ্কিমী রীতি’ নামে পরিচিত।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গদ্যগন্থ: লোকরহস্য, বিজ্ঞানরহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, সাম্য, কৃষ্ণচরিত্র, বিবিধ প্রবন্ধ ইত্যাদি তার গদ্যগ্রন্থ।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত পত্রিকার নাম কি: বাংলা উপন্যাস ও বাংলা গদ্য সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। চরিত্র চিত্রণ, শিল্পসৃজন, বর্ণনা, নান্দনিকতা এবং সর্বোপরি বাংলা গদ্যের উৎকর্ষ সাধনে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার মাধ্যমে একটি নতুন লেখকগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পেশাগত জীবনে ছিলেন মেজিস্ট্রেট। চাকরিসুত্রে খুলনার মেজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করে তিনি নীলকরদের অত্যাচার দমন করেছিলেন। বাংলা সাহিত্য চর্চায় তিনি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে সাহিত্যের উদ্দেশ্য কি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “সত্য ও ধর্মই সাহিত্যের উদ্দেশ্য “। খ্যাতি বা অর্থের উদ্দেশ্যে লেখা নয়; লিখতে হবে মানুষের কল্যাণ সাধন কিংবা সৌন্দর্য সৃষ্টির অভিপ্রায়ে।