ফেরাউন এর মৃত্যুর কাহিনী

ফেরাউন এর মৃত্যুর কাহিনী

ফেরাউন এর মৃত্যুর কাহিনী

পৃথিবীতে অত্যাচারী ও খোদাদ্রোহী শাসকদের একজন ছিল ফেরাউন। অত্যাচারের দৃষ্টান্ত ও উদাহরণ টানতে গেলেই মানুষের মুখে চলে আসে ফেরাউনের নাম। ফেরাউন শুধু অত্যাচারী শাসকই ছিল না, সে নিজেকে খোদা দাবি করতো, আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে তার ইবাদত ও পুজা করতে বলতো। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, (হে মুসা!) ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। এবং (তাকে) বল, ‘তোমার কি আত্মশুদ্ধির কোন আগ্রহ আছে? আর আমি কি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের পথ দেখাব, এরফলে তুমি তাঁকে ভয় করবে? অতঃপর সে তাকে মহা নিদর্শন দেখাল।কিন্তু সে মিথ্যাজ্ঞান করল এবং অবাধ্য হল। অতঃপর সে পিছন ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। সে সকলকে সমবেত করল এবং উচ্চ স্বরে ঘোষণা করল। আর বলল, ‘আমিই তোমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিপালক।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত, ১৭-২৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি আমাকে ছাড়া আর কাউকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করো, আমি তোমাকে কয়েদিদের অন্তর্ভুক্ত করব।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ২৯)

ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ফেরাউনের নির্মম নির্যাতন ও শিশু হত্যা

ফেরাউন তার রাষ্ট্র ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাতো এবং সে যুগের শিশুদের হত্যা করতো। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন তার দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দুর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র-সন্তানদের হত্যা করত এবং নারীদের জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী।’(সুরা কাসাস, আয়াত, ৪)
পবিত্র কোরআনের ২৭ টি সুরায় সর্বমোট ৭৪ বার ফেরাউনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং খোদাদ্রোহী এই অত্যাচারির করুণ পরিণতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।

READ ALSO

ফেরাউনের বংশ পরিচয়

ইতিহাসের বর্ণনামতে, ‘ফেরাউন’ কোনো ব্যক্তির নাম নয়। এটি তৎকালীন মিশরের সম্রাটদের উপাধি। কিবতি বংশীয় এই সম্রাটরা কয়েক শতাব্দীব্যাপী মিশর শাসন করেছেন। এসময় মিশর সভ্যতা-সমৃদ্ধির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিল। লাশ মমি করা, পিরামিড তৈরি প্রভৃতি তাদের সময়কার বৈজ্ঞানিক উন্নতির প্রমাণ বহন করে। হজরত মুসা (আ.)-এর সময় পরপর দুজন ফেরাউন ছিল। লুইস গোল্ডিংয়ের তথ্য অনুযায়ী জালিম ফেরাউনের নাম ছিল দ্বিতীয় রামাসিস। আর ডুবে মরা ফেরাউন ছিল তার পুত্র মানেপতাহ বা মারনেপতাহ।

See also  গুনাহ কি-বিভিন্ন গুনাহ থেকে মাফের উপায় ও দোয়া

ফেরাউনের উজির হামান

হজরত ‍মুসা আ.-এর যুগে মিশরের বাদশাহ ফেরাউন ভীষণ অত্যাচারী ছিল। তার উজির হিসেবে নিযুক্ত ছিল হামান নামক এক ব্যক্তি। এই হামান ফেরাউনকে দুনিয়ার বাদশাহ হবার স্বপ্ন দেখাতে লাগলো। প্রজারা যাতে নীরেট মূর্খ হয়ে থাকে এবং তাকে খোদা বলে মান্য করে তার জন্য নানা যুক্তি-পরামর্শ দিতে লাগলো।

  ফেরাউনের মুখোমুখি হয়ে যা বললেন মুসা আ.

এসময় আল্লাহ তায়ালা মুসা আ.-এর ওপর ওহী নাজিল করলেন এবং পথভ্রষ্ঠ মানুষকে সত্য ধর্মে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব প্রাপ্তির পর একদিন মুসা তার বড় ভাই হারুন আ.কে সঙ্গে নিয়ে ফেরাউনের দরবারে এসে হাজির হলেন। ফেরাউনকে উদ্দেশ্য করে মুসা আ. বললেন, ‘তুমি যে নিজেকে খোদা বলে প্রচার করছ, তা অত্যন্ত অন্যায়। সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মানবের উপাস্য নেই। আমি আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বর’। ফেরাউন তাকে তাচ্ছিল্য করে তার ওপর এবং তার ধর্মে বিশ্বাসীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাতে লাগলো। তার নির্যাতন বেড়ে যাওয়ার পর আল্লাহর হুকুমে মুসা আ. তার অনুসারীদের নিয়ে মিশর ছেড়ে যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি মুসাকে প্রেরণ করি আমার নিদর্শন ও সুস্পষ্ট সনদসহ। (পাঠিয়েছিলাম) ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে। তবু তারা (ফেরাউনের জাতি) ফেরাউনের নির্দেশমতো চলতে থাকে। অথচ ফেরাউনের কোনো কথা ন্যায়সংগত ছিল না (তার কার্যকলাপ ভালো ছিল না)।-(সুরা : হুদ, আয়াত : ৯৬-৯৭)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘ফেরাউন বলল, কী! আমি অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা এই ব্যক্তির প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয় এটা কোনো চক্রান্ত। তোমরা এই শহরে পারস্পরিক যোগসাজশে এই চক্রান্ত করেছ, যাতে তোমরা এর বাসিন্দাদের এখান থেকে বহিষ্কার করতে পার। আচ্ছা, তোমরা শীঘ্রই এর পরিণাম জানতে পারবে। আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব তারপর তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব।’ (আরাফ ৭ : ১২৩-১২৪)।

See also  সূরা আল ক্বামার-বাংলা উচ্চারণ-বাংলা অর্থ-Surah Al-Qamar

তাদের চলে যেতে দেখে কুটিল হামানসহ আরও উজিররা ফেরাউনকে কুপরামর্শ দিতে লাগলো। তাদের কুপরামর্শে ফেরাউন সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছনে ধাওয়া করল। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘ফেরাউন সম্প্রদায়ের নেতৃবর্গ (ফিরাউনকে) বলল, আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে মুক্ত ছেড়ে দেবেন, যাতে তারা (অবাধে) পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যদের বর্জন করতে পারে? সে বলল, আমরা তাদের পুত্রদের হত্যা করব এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখব, আর তাদের ওপর আমাদের পরিপূর্ণ ক্ষমতা আছে।’ (আরাফ ৭ : ১২৭)।

মুসা আ. ও তার অনুসারীরা ততক্ষণে লোহিত সাগরের তীরে এসে পৌঁছে গেছেন। এমন সময় তারা পেছন তাকিয়ে দেখতে পেলেন, ফেরাউনের অগণিত সৈন্য তাদের ধরার জন্য এগিয়ে আসছে। তাদের পেছনে এই বিপদ, সামনে প্রকাণ্ড লোহিত সাগর। তারা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। এমন সময় মহান আল্লাহ তাআলা মুসা আ.কে আদেশ করলেন, মুসা, ‘তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রের ওপর আঘাত করো’। মুসা আ. মহান আল্লাহর নির্দেশমতো তাই করলেন। বিশাল সাগর দুই ভাগে ভাগ হয়ে দেয়ালের মতো দুইপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। সেই পথ দিয়ে মুসা আ. ও তার অনুসারীরা নিরাপদে ওপারে চলে গেলেন।

ফেরাউনের মৃত্যু কাহিনী ও কোথায় হয়েছিল

তখনও সাগরের সেই রাস্তা সেভাবেই রয়ে গেলো। ফেরাউন তার লোকজন এবং সৈন্যসামন্তসহ ওপারে এসে থামল। সে দেখলো, সাগরের মাঝে একটি আশ্চর্য রাস্তা তৈরি হয়েছে। সে মুসা (আ.) ও তার লোকজনদের ওপারে পার হতে দেখল। সে মুসা আ. ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করতে তার বাহিনী নিয়ে লোহিত সাগরের সেই রাস্তায় নেমে পড়ল। যখন ফেরাউনের বাহিনী সাগরের মাঝামাঝি এসে পৌঁছাল এমন সময় মহান আল্লাহ মুসা আ.কে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি সাগরের ওপরে তোমার লাঠি দিয়ে আবার আঘাত করো’। মহান আল্লাহর হুকুমমতো মুসা আ. সাগরের পানিতে আঘাত করলেন, অমনি দুই দিক থেকে পানির খাড়া উঁচু স্রোত ফেরাউন ও তার সৈন্যদের ওপর পড়ে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। ধ্বংস হয়ে গেল ফেরাউন ও তার বাহিনী।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফেরাউন ও তার বাহিনী জমিনে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না। সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে পাকড়াও করলাম এবং সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখ, জালিমদের পরিণতি কী হয়ে থাকে! (সূরা : কাসাস ২৮ : ৩৯-৪০)।

See also  সূরা আল আলা-বাংলা উচ্চারণ-বাংলা অর্থ-Surah Al-A'la

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আমি বনী ইসরাইলকে সাগর পার করিয়ে দিলাম। তখন ফিরাউন ও তার বাহিনী যুলুম ও সীমালঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। পরিশেষে যখন সে ডুবে মরার সম্মুখীন হলো, তখন বলতে লাগল, আমি স্বীকার করলাম, বনী ইসরাইল যেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া কোনোও ইলাহ নেই এবং আমিও অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। (উত্তর দেয়া হলো) এখন ঈমান আনছ? অথচ এর আগে তো তুমি অবাধ্যতা করেছ এবং তুমি অশান্তি সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তী কালের মানুষের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। (কেননা) আমার নিদর্শন সম্পর্কে বহু লোক গাফেল হয়ে আছে।’ (ইউনুস ১০ : ৯০-৯২)

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts

No Content Available

Related Posts

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?