শব্দার্থ:
আসমান-আকাশ।
জমিন-মাটি, ভূ-পৃষ্ঠ।
কজায়-আয়ত্তে, অধিকারে।
মশগুল-মগ্ন, বিভোর।
বদ-খেয়াল-খারাপ চিন্তা, খারাপ আচরণ ।
দাদ-প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা।
কর্পূর-বৃক্ষরস থেকে তৈরি গন্ধদ্রব্য বিশেষ যা বাতাসের সংস্পর্শে অল্পক্ষণের মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
ঋষি- শাস্ত্রজ্ঞ তপস্বী, মুনি, যোগী।
বানভাসি-বন্যায় ভাসানো, বন্যায় যা বা যাদের ভাসিয়ে আনে।
বন্দোবস্ত-ব্যবস্থা, আয়োজন।
অনর্থক-ব্যর্থ, নিষ্ফল, অকারণ।
কুম্ভকৰ্ণ-রামায়ণে বর্ণিত রাবণের ছোট ভাইয়ের নাম । সে একনাগাড়ে ছয় মাস ঘুমাতো। এখানে যে
খুব ঘুমায় বা সহজে যাকে জাগানো যায় না।
হুজুগ-সাময়িক আন্দোলন, জনরব, গুজব।
সঙ্কল্প-প্রতিজ্ঞা, শপথ।
স্পিরিট-ইংরেজি Spirit শব্দটির অর্থ উদ্দীপনা, উৎসাহ, শক্তি। এ প্রবন্ধে ‘আত্মার শক্তির পবিত্রতা’ অর্থে স্পিরিট শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
কল্যকার-পূর্ব বা পরবর্তী দিন। এখানে পূর্বের দিন অর্থে।
লা-পরওয়া-গ্রাহ্য না করা।
দস্তুরমতো-রীতিমতো, যথেষ্ট, নিতান্ত ৷
সুবর্ণ-সোনা, স্বর্ণ ৷
পুয়াল-খড়।
দশচক্রে ভগবান ভূত-দশজনের চক্রান্তে সাধুও অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে, বহুলোকের ষড়যন্ত্রে
অসম্ভবও সম্ভব হয়।
কাণ্ডাকাণ্ড-ন্যায়-অন্যায়, ভালোমন্দ।
উদ্মো ষাঁড়-বন্ধনমুক্ত ষাঁড়।
প্ররোচনা-উসকানি, উত্তেজনা সৃষ্টি।
পাঠ-পরিচিতি
ভাব ও কাজের মধ্যে পার্থক্য অনেক। মানুষকে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধটি নেওয়া হয়েছে ‘যুগবাণী’ গ্রন্থ থেকে । উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। তার জন্য কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগের দরকার হয়। ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায় কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যে কোনো ভালো উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ রচনাটিতে লেখক দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
লেখক-পরিচিতি
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্কুল ছেড়ে বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হয় । নজরুল কলকাতায় ফিরে এসে সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন।
এসময় সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায় তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে চারদিকে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর কবিতায় পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উচ্চারিত হয়েছে। অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রবল প্রতিবাদ করেন। এজন্য তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তাঁর রচনাবলি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কবিতা, সংগীত, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও গল্প— সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নজরুল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি সাম্যবাদী চেতনাভিত্তিক কবিতা, শ্যামাসংগীত, ইসলামি গান ও গজল লিখেছেন। কবিতা ও গানে বহুল পরিমাণে আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন এবং তাঁর সাহিত্যসাধনায় ছেদ ঘটে। ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয় ৷
১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও একুশে পদক পান । তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে, কাব্যগ্রন্থ : ‘অগ্নি-বীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘সিন্ধু-হিন্দোল’, ‘চক্রবাক’; উপন্যাস : ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘কুহেলিকা’; গল্পগ্রন্থ : ‘ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’ শিউলিমালা’; প্রবন্ধগ্রন্থ : ‘যুগবাণী’, ‘রুদ্র-মঙ্গল’; নাটক : ‘ঝিলিমিলি’, ‘আলেয়া’, ‘মধুমালা’ ইত্যাদি। কাজী নজরুল ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।