মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার মনের মধ্যে সবসময়ই নানা বুদ্ধি বা ভাবের আনাগোনা চলে। সেই বুদ্ধি বা ভাব ইশারায়, নানা অঙ্গভঙ্গি করে, ছবি ও নাচের মাধ্যমে প্রাকাশিত হতে পারে। কিন্তু মুখের ধ্বনির সাহায্যে ব্যাপক পরিসরে তা প্রকাশ করা যায়। যেভাবেই মনের ভাব প্রকাশ করা হোক না কেন, এর সবই ভাষা।
তবে অন্যন্যা মাধ্যমের তুলনায় মানুষের মুখের ধ্বনি অনেক বেশি অর্থপূর্ণ হয় ও অন্যে বুঝতে পারে। সুতরাং সাধারণ কথায় ভাষা বলতে বোঝায়, মানুষের মুখ থেকে বেরিযে আসা অর্থপূর্ণ কতকগুলো আওয়াজ বা ধ্বনির সমষ্টি। এই অর্থপূর্ণ ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ। তবে যেকোনো ধ্বনি বা আওয়াজই ভাষা নয়। সেখানে অর্থ এবং অর্থের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ধ্বনির অর্থপূর্ণ মিলনে গঠিত হয় শব্দ। আর একাধিক শব্দের সমন্বয়ে অর্থের ধারাবাহিকতার তৈরি হয় বাক্য।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা বাংলা ভাষা। ইংল্যান্ডের মানুষের ভাষা ইংরেজি, ফ্রান্সের মানুষের ভাষা ফরাসি, চীন দেশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা ম্যান্ডারিন ইত্যাদি। আবার বাংলাদেশের বাংলার পাশাপাশি চাকমা জনগোষ্ঠী নিজস্ব চাংমা ভাষায়, গারো জনগোষ্ঠী তাদের আচিক ভাষায় কথা বলে। প্রায় পাঁচশ বছর আগের বাংলা ভাষা এবং আজকের বাংলা ভাষা হুবুহু এক নয়। সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণে ভাষারুপের এই পরিবর্তন হয়।
এই পরিবর্তনশীলতার কারণে ভাষাকে প্রবহমান নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মনের ভাবকে প্রকাশের জন্য বিভিন্ন মানবসমাজে ভিন্ন ভিন্ন দেশে নানা রকমের শব্দ ব্যবহার করা হয়। এগুলোই একেক দেশে একেক রকম ভাষার জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্থির থাকে না। ভাষা স্থির হয়ে গেলে তা মাতৃভাষায় পরিণত হয়। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি ভাষা প্রচলিত আছে।
ভাষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ড. সুনীতকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, মনের ভাব প্রকাশের জন্য, বাগ-যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন, কোনো বিশেষ জন-সমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত, শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট জনসমাজের মানুষ মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখ দিয়ে অন্যের বোধগম্য অর্থপূর্ণ যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে তাকে ভাষা বলে। ”