- মেট্রোরেলের ভাড়ার হার যাত্রী প্রতি কিলোমিটার ৫টাকা।
- মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া যাত্রী প্রতি ২০টাকা
- মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা
- মেট্রোরেলের ভাড়া স্মার্ট কার্ড (smart card) এর মাধ্যমে পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ রেয়াত প্রদানের বিষয়ে ডিএমটিসিএল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
- যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণের বিনা ভাড়ায় মেট্রোরেলের যাতায়াতের বিষয়ে ডিএমটিসিএল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের প্রতিটি Single trip-এর জন্য বিশেষ রেয়াতের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
মেট্রোরেল কি?
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নির্মাণাধীন শহরভিত্তিক রেল ব্যবস্থা হচ্ছে ঢাকা মেট্রো, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট বা সংক্ষেপে এমআরটি নামে পরিচিত। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তথা মেট্রো রেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে।
মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা
২০১৩ সালে অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যার অধীনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়।
মেট্রোরেলের সময়সূচি
২৫ জানুয়ারি থেকে মেট্রোরেল চলবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে। ৯ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সভা কক্ষে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক।তিনি জানান, আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে মেট্রোরেলের পল্লবী স্টেশন চালু হবে। ওইদিন থেকে তিনটি স্টেশনে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। তবে টিকিট কাটার সুবিধার্থে যাত্রীদের জন্য গেট খোলা হবে সকাল ৮টা থেকে। ট্রেনগুলো আগের মতোই দশ মিনিট পরপর চলাচল করবে।
মেট্রোরেলের ভাড়া
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ দেশের প্রথম এ মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করেছে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। তার মানে মেট্রোরেলে চড়তে ন্যূনতম ২০ টাকা গুনতেই হবে। উত্তরা দিয়াবাড়ি (উত্তরা নর্থ স্টেশন) থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৬০ টাকা। উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার ও উত্তরা সাউথ স্টেশনে যেতে সর্বনিম্ন ভাড়া ওই ২০ টাকাই দিতে হবে।উত্তরা নর্থ থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা।আর পল্লবী থেকে মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া একই, ২০ টাকা। পল্লবী থেকে শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা। মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ চালু হলে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ফার্মগেট যেতে গুনতে হবে ৩০ টাকা, আর কারওয়ান বাজার যেতে লাগবে ৪০ টাকা।মিরপুর–১০ স্টেশন থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ৫০ টাকা, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে যেতে লাগবে ৬০ টাকা। তবে মিরপুর-১০ থেকে কমলাপুর স্টেশনে যেতে লাগবে ৭০ টাকা ভাড়া।
কিভাবে করবেন মেট্রোরেলের এমআরটি পাস
প্রথমদিকে একাধিকবার ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা এমআরটি পাস সংগ্রহ করতে হবে স্টেশনের টিকেট কাউন্টার থেকে। একটি পাসে প্রতিবার শুধুমাত্র একজন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন কিংবা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে আবেদন করে নিতে হবে এমআরটি পাস। এমআরটি পাসের জন্য শুরুতে মোট ৪০০ টাকা জমা করতে হবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা জামানত (ফেরতযোগ্য) এবং ২০০ টাকা ভাড়া। পরে ১০০ টাকা বা তার গুণিতকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টপ আপ করা যাবে ওই পাসে।
মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন কয়টি
জাইকা ও ডিএমটিসিএল ২০৩০ সাল নাগাদ ১২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মোট ৬টি মেট্রো লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এই নেটওয়ার্কে ৫১টি এলিভেটেড স্টেশন ও ৫৩টি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন থাকবে। ছয়টি লাইন মিলিতভাবে দিনে ৪৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
এমআরটি লাইন ১ (বিমানবন্দর যাত্রাপথ)
২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর এমআরটি-১ নামক লাইনটির নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এমআরটি-১ প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মোট ৩১.২৪ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এরমধ্যে জাপান সরকার দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে। এমআরটি-১ প্রকল্পে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২১ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে এবং কুড়িল থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। নতুন বাজার থেকে কুড়িল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রানজিশন লাইনসহ ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এই মেট্রোরেলের ১২টি স্টেশন থাকবে মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে উড়াল সেতুর ওপর। এমআরটি লাইন-১ হবে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল।
এমআরটি লাইন-১ (বিমানবন্দর যাত্রাপথ)
- বিমানবন্দর
- বিমানবন্দর টার্মিনাল ৩
- খিলক্ষেত
- যমুনা ফিউচার পার্ক
- নতুন বাজার
- উত্তর বাড্ডা
- বাড্ডা
- হাতিরঝিল পশ্চিম
- রামপুরা
- মালিবাগ
- রাজারবাগ
- কমলাপুর
এমআরটি লাইন ১ (পূর্বাচল যাত্রাপথ)
নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে যার কাজ ২০২৮ সাল নাগাদ শেষ হতে পারে। এর ফলে খুব দ্রুত সময়ে প্রায় ২০ মিনিটে নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ যাওয়া যাবে।
এমআরটি লাইন ১ (পূর্বাচল যাত্রাপথ)
- নতুন বাজার
- যমুনা ফিউচার পার্ক
- বসুন্ধরা
- পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি
- মাস্তুল
- পূর্বাচল পশ্চিম
- পূর্বাচল মধ্য
- পূর্বাচল পূর্ব
- পিতলগঞ্জ
এমআরটি লাইন ২
২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ জি২জি ভিত্তিতে পিপিপি পদ্ধতিতে এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে। এরইমধ্যে জাপান ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
এমআরটি লাইন ২ (যাত্রাপথ)
- গাবতলী
- এমব্যাংকমেন্ট রোড
- কল্যাণপুর
- বসিলা
- মোহাম্মাদপুর
- সাত মসজিদ রোড
- ঝিগাতলা
- ধানমন্ডি ২
- সায়েন্স ল্যাবরেটরি
- নিউ মার্কেট
- নীলক্ষেত
- আজিমপুর
- পলাশী
- শহীদ মিনার
- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ
- পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স
- গোলাপ শাহ মাজার
- বঙ্গভবন
- মতিঝিল
- আরামবাগ
- কমলাপুর
- মুগদা
- মান্ডা
- ডেমরা
- চট্টগ্রাম রোড
এমআরটি লাইন ৪
পিপিপি পদ্ধতিতে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্রাকের পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেল হিসেবে এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন, যা শেষ করা হবে ২০৩০ সালের মধ্যে।
এমআরটি লাইন ৫ (উত্তর)
এমআরটি-৫ নির্মাণ প্রকল্পে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা দেবে জাপান আর বাকি ১২ হাজার ১২১ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের মোট ২০ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল পথে আর বাকি সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে উড়াল পথে। এ রুটে মোট ১৪টি স্টেশন হবে, যার মধ্যে ৯টি হবে পাতাল আর ৫টি হবে উড়ালপথে।
এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর যাত্রাপথ)
- হেমায়েতপুর
- বালিয়ারপুর
- বিলামালিয়া
- আমিনবাজার
- গাবতলী
- দারুস সালাম
- মিরপুর ১
- মিরপুর ১০
- মিরপুর ১৪
- কচুক্ষেত
- বনানী
- গুলশান ২
- নতুন বাজার
- ভাটারা
এমআরটি লাইন ৫ (দক্ষিণ)
২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে পাতাল ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার।
এমআরটি লাইন ৬
প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য এমআরটি-৬ নামক ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথকে নির্ধারন করা হয়। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হলে দু’দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এমআরটি-৬ এর চূড়ান্ত রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো- উত্তরা তৃতীয় ধাপ-পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এ রুটের ১৬টি স্টেশন হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর। ট্রেন চালানোর জন্য ঘণ্টায় দরকার হবে ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যা নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিড থেকে। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁ ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে।
এমআরটি লাইন ৬ (যাত্রাপথ)
- উত্তরা উত্তর
- উত্তরা মধ্য
- উত্তরা দক্ষিণ
- পল্লবী
- মিরপুর ১১
- মিরপুর ১০
- কাজিপাড়া
- শ্যাওড়াপাড়া
- আগারগাঁও
- বিজয় সরণি
- ফার্মগেট
- কারওয়ান বাজার
- শাহবাগ
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- সচিবালয়
- মতিঝিল
- কমলাপুর
মেট্রোরেল পরিচালক সংস্থা কে?
মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তথা মেট্রো রেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে।
মেট্রোরেলের ওয়েবসাইট:
মেট্রোরেলের ওয়েবসাইট হলো-http://www.dmtcl.gov.bd/। ওয়েবসাইট থেকে মেট্রোরেলের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে।