গর্ভাবস্থায় খাবারের তালিকা

গর্ভাবস্থায় খাবারের তালিকা

গর্ভাবস্থায় নিজের এবং গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এই বিশেষ যত্নের অন্যতম প্রধান অংশ হলো খাদ্যাভ্যাস। গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে খাদ্য তালিকায় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। এসব পুষ্টি উপাদান আপনার ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জন্মগত ত্রূটি রোধে সহায়তা করে।

তবে প্রতিটি মানুষের শরীর আলাদা ধরনের। তাই গর্ভধারণের পর খাদ্যাভ্যাসের বিষয়ে একবার আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।

গর্ভাবস্থায় কি কি খাবারগুলো খাবেন নিচে দেয়া হলো-

ফলিক এসিড: গর্ভাবস্থায় প্রথম ১৩ সপ্তাহে ফলিক এসিড বা ফোলেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক এসিড হলো এক ধরনের বি ভিটামিন। প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং সঠিক পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ এই আশঙ্কা প্রায় ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেয়৷ তাই এই সময় অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে সঠিক মাত্রায় ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হবে৷ ফলিক এসিডসমৃদ্ধ খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে৷ যেমন আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, শতমূলী, কমলালেবু ইত্যাদি।

আয়রন: আমাদের দেশে মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভের শিশুর শরীরে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। ফলে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয় এবং সময়ের আগেই শিশু জন্ম নেওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই এই সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন, প্রাণিজ উৎসের তুলনায় উদ্ভিজ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন গ্রহণ করা বেশি ভালো।

See also  গর্ভাবস্থায় কোন পাশে ঘুমাবেন ও বাচ্চা কোন পাশে থাকে

ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করে। তাই আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার সঙ্গে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, যেমন লেবু, কমলালেবু, আমলকি, আঙুর, আপেল ইত্যাদি খেতে হবে।

জিংক: শরীরের কোষ গঠনের জন্য জিংক জরুরি। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন। তাই এই সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ডাক্তার আপনাকে জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেবেন। এছাড়া আপনার খাদ্যতালিকায় জিংকসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, মুরগির মাংস, গরুর মাংস,দুধ ইত্যাদি রাখতে হবে।

ক্যালসিয়াম: গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীর মায়ের হাড় থেকে গর্ভের শিশুর শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। ফলে মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যা দেখা দেবে। তাই এই সময় মায়ের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন- দুধ, দই, পনীর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, কাঁটাযুক্ত মাছ, টফু, পালং শাক, ডুমুর, চিয়াসিড, ডিম, তিল, তিশি, আমন্ড ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন সকালে অন্তত ১০-১৫ মিনিটের জন্য শরীরে রোদ লাগান।গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথম ৩ মাস ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ১ হাজার মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে শিশুর শৈশবে চোখের দৃষ্টিশক্তি, বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশ খুব ভালোভাবে হয়। তাই এই সময় ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা ভালো। এ ছাড়া, গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসে ভিটামিন এ, ডি ও সিযুক্ত খাবার খেতে হবে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: এই সময় মায়ের প্রায় ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিনযুক্ত খাবার ডিম, মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে।

See also  ঠোঁটে লিপস্টিক ও তিল নিয়ে সমস্যার সমাধান

আঁশ জাতীয় খাবার: কোষ্ঠকাঠিন্য এই সময় খুবই কমন ব্যাপার। তাই এই সমস্যা কমাতে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রকলি, শাক-সবজি ইত্যাদি খাবেন। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাবেন না

গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে কী খাবেন সেটা জানার পাশাপাশি কী খাবেন না সেটা জানাও জরুরি।

● গর্ভাবস্থার এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা বা কফি কম খেতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

● এই সময় সামুদ্রিক মাছ কম খেয়ে মিঠা পানির মাছ খাবেন৷ কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

● আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ ডিম ও মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া, ইত্যাদি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক দিকে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। ডিমের পোচ, হাফ বয়েলড ডিম বা আধসেদ্ধ মাছ, মাংস একদমই খাবেন না। আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন:

Related Posts

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?