১. সৃজনশীল-প্রশ্ন: বিকেলবেলা বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল খেলছিল সাকিব। হঠাৎ তারা দেখে মাঠের একপ্রান্তে নর্দমায় একটি কুকুরছানা হাবুডুবু খাচ্ছে, প্রাণপণ চেষ্টা করছে নর্দমা থেকে উপরে উঠার। সাকিবরা সবাই মিলে ছানাটিকে তুলে পরিষ্কার করে। সাকিব পরম স্নেহে ছানাটিকে একটি শুকনো কাপড়ে জড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। মৃতপ্রায় কুকুরছানাটি যেন প্রাণ ফিরে পায়। সাকিব তার নাম দেয় ডন। কিন্তু বাড়ির কাজের লোক আয়নাল মিয়া ছানাটিকে খেতে দিতে এবং পরিষ্কার করতে ভীষণ বিরক্ত। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয়— ছানাটিকে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসতে। আজ সাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, আর ডনকে মনে হয় তাদের পরিবারেরই একজন।
ক. দেওঘরে বেড়াতে আসা পীড়িতদের মধ্যে কাদের সংখ্যাই বেশি ছিল?
খ. ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের আয়নালমিয়ার মাধ্যমে অতিথির গল্পের যে দিকটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সাকিব যেন অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের অনুভূতিরই ধারক’— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো ।
১.সৃজনশীল উত্তর:
ক. দেওঘরে বেড়াতে আসা পীড়িতদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি ছিল।
খ. ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অতিথির দীর্ঘ সময় অবস্থান করাকে বোঝানো হয়েছে। কুকুরটির সঙ্গে লেখকের সখ্য হওয়ার পরের দিন কুকুরটি লেখকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে। কিন্তু এরপরও কুকুরটি ওই বাড়িতে অবস্থান করে। বাড়িতে অতিথির এরূপ দীর্ঘ সময় অবস্থান মূলত আতিথ্যের লঙ্ঘন। সাধারণ বিচারে কুকুরটি এ মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে। তাই বলা যায়, ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে বাড়িতে কুকুরটির এই দীর্ঘসময় অবস্থান করাকেই বোঝানো হয়েছে।
গ.উদ্দীপকের আয়নাল মিয়ার মাধ্যমে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌয়ের মাঝে বিদ্যমান প্রাণীর প্রতি অবহেলার দিকটির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। অতিথির স্মৃতি গল্পে উল্লিখিত মালি-বৌ কুকুরটির সহ্য করতে পারতো না। নিজের খাবারে কুকুরটি ভাগ বসিয়েছে মনে করে সে তাকে তাড়িয়ে দিত। লেখকের বাড়িতে প্রতিদিন অনেক খাবার বেঁচে গেলেও মালি-বৌ লেখকের অতিথিরূপী কুকুরকে সেখান থেকে কিছু অংশ খেতে না দিয়ে বরং তাকে প্রায়ই তাড়িয়ে দিত । উদ্দীপকের আয়নাল মিয়ার মাঝেও আমরা প্রাণীর প্রতি অবহেলার দিকটি লক্ষ করি। আয়নাল মিয়া সাকিবদের বাড়ির কাজের লোক। খেলতে গিয়ে সাকিব একটি বিপদগ্রস্ত কুকুরছানাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু আয়নাল মিয়া কুকুরছানাটির প্রতি যত্ন করতে ও তাকে খেতে দিতে বিরক্তবোধ করে। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয় কুকুরটিকে দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসতে। আয়নাল মিয়ার এই মানসিকতা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌয়ের মাঝে বিদ্যমান প্রাণীর প্রতি অবহেলার দিকটিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে
ঘ.উদ্দীপকের সাকিবের মাঝে প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার দিকটি প্রকাশ পাওয়ায় সাবিককে অতিথির স্মৃতি গল্পের লেখকের অনুভূতিরই ধারক বলা যায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মাঝে প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। রাস্তার একটি কুকুরকে তিনি অতিথির মর্যাদা দান করেন। একসময় কুকুরটির প্রতি তিনি মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন। কুকুরটির সঙ্গে অসুস্থ লেখকের কয়েকদিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে এক মমত্বের সম্পর্ক। উদ্দীপকের সাকিবের মাঝেও আমরা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার দিকটি লক্ষ করি। সে একদিন বিকেলবেলা ফুটবল খেলতে গিয়ে এক বিপদগ্রস্ত কুকুরছানাকে পরম যত্নে বাড়িতে নিয়ে আসে। একসময় কুকুরটিকে সে তার পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, উদ্দীপকের সাকিব এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক উভয়ের মাঝেই আমরা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিকটি দেখতে পাই। গল্পে লেখক যেমন একটি রাস্তার কুকুরকে অতিথির মর্যাদা দেন এবং মায়ায় জড়িয়ে পড়েন, তেমনি উদ্দীপকের সাকিবও বিপদগ্রস্ত কুকুরকে দেখে এক অজানা মায়ার জড়িয় পড়ে। উভয়ের মাঝে আমরা একই অনুভূতির প্রকাশ দেখতে পাই।তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের সাকিব যেন ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতিরই ধারক।”— মন্তব্যটি যথার্থ।
২. সৃজনশীল-প্রশ্ন: একদিন সিদ্ধার্থ নামে এক ব্যক্তি বিশাল অরণ্যে বসেছিলেন। এমন সময় একটি তীরবিদ্ধ বুনোহাঁস তার পায়ের কাছে এসে পড়ল। বুনোহাঁসটির ক্ষতস্থান থেকে দরদর করে রক্ত ঝরছিল। তা দেখে সিদ্ধার্থের মন করুণায় বিগলিত হলো। তিনি পরমস্নেহে বুনো হাঁসটির দেহ থেকে তীরটি খুলে গভীর সহানুভূতির সাথে তার পরিচর্যা করতে লাগলেন। পরে সুস্থ করে তিনি হাঁসটিকে আকাশে উড়িয়ে দিলেন।
ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম কী ছিল?
খ. চাকররা বাড়তি খাবারগুলো মালিনীকে দিতে বেশি আগ্রহী কেন?
গ. উদ্দীপকে বুনোহাঁসটির প্রতি সিদ্ধার্থের সেবায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত-বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল উত্তর:
ক.চীরের ধারের গাছটির নাম ছিল ইউক্যালিপটাস।
খ. মালিনীর বয়স কম, দেখতে ভালো হওয়ার কারণে চাকররা বাড়তি খাবারগুলো মালিনীকে দিতে বেশি আগ্রহী।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অতিথি ছিল একটি কুকুর। বাড়ির অবশিষ্ট খাবার লেখকের অতিথি কুকুরকে দেওয়ার নির্দেশ থাকলেও চাকররা তা করত না। চাকরদের দরদ মালিনীর প্রতি বেশি ছিল। কেননা, তার বয়স ছিল কম সে দেখতে ভালো ছিল এবং খাওয়া সম্বন্ধে নির্বিকারচিত্ত। তাই চাকররা বাড়তি খাবারগুলো মালিনীকে দিতে বেশি আগ্রহী ছিল।
গ. উদ্দীপকে বুনোহাঁসের প্রতি সিদ্ধার্থের সেবায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অতিথি কুকুরের প্রতি লেখকের স্নেহপ্রীতি প্রকাশের দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি কুকুরের সঙ্গে লেখকের কদিনের পরিচয়ে মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কুকুরটির প্রতি লেখকের স্নেহপ্রীতির প্রকাশ নানাভাবে লক্ষ করা যায়। এমনকি দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় লেখক প্রাণীটির কথা ভেবে ব্যথিত হন। উদ্দীপকে সিদ্ধার্থের মাঝে বুনোহাঁসের প্রতি ভালোবাসা লক্ষ্য করা যায়। বিশাল অরণ্যে অবস্থানকালে একটি তীরবিদ্ধ বুনোহাঁস দেখতে পেয়ে গভীর সহানুভূতির সাথে তার পরিচর্যা করে। এমনকি হাঁসটিকে সুস্থ করে আকাশে উড়িয়ে দেয়। যেমনটি দেখা যায়, আলোচ্য গল্পের লেখকের আচরণে। গল্পের কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদায় বাড়িতে থাকতে দেন এবং অবশিষ্ট খাবার খেতে দেন। কুকুরটির প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও মমতা অনুভব করেন। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রাণীর প্রতি লেখকের সহানুভূতির দিকটি উদ্দীপকের বুনোহাঁসের প্রতি সিদ্ধার্থের সেবার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. অবলা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার দিক থেকে উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনভূতি এবং অতিথির স্মৃতি গল্পে লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর একটি প্রাণীর সঙ্গে একজন মানুষের গভীর সম্পর্ক রচিত হয়েছে। লেখক দেওঘরে এসেছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। এখানে একটি পথের কুকুরের সাথে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটিকে তিনি পরম মমতায় আপন করে নেন । উদ্দীপকে বর্ণিত সিদ্ধার্থ অরণ্যে বসে থাকাকালে একটি তীরবিদ্ধ বুনোহাঁস দেখতে পায়। হাঁসটি ভীষণভাবে আহত ছিল। এ ওঠে। হাঁসটিকে পরম যন্তে সুস্থ করে তোলে এবং আকাশে উড়িয় দেয় পরমুহূর্তে। এভাবেই অবলা একটি প্রাণীর প্রতি সিদ্ধার্থের ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকে সিদ্ধার্থের অনভূতি এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতি একই। কেননা, অবলা প্রাণীর প্রতি উভয়ের ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে । ভালোবাসার তাগিদ থেকেই পথের কুকুরের সাথে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদায় বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং খাবার খেতে দেন। উদ্দীপকের সিদ্ধার্থও আহত হাঁসের পরিচর্যা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। নিরীহ প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিক থেকে লেখক ও উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতি অভিন্ন। কেননা, উভয়েই পরম প্রীতিতে প্রাণীর সাথে হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে তুলে। এসব দিক থেকে এ কথা বলতে পারি যে, উদ্দীপকের সিদ্ধার্থের অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত।
৩.সৃজনশীল প্রশ্ন: পোষা টিয়া মিঠুকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় অমল। দুটি প্রাণীতে মম তার মাখামাখি। বিদ্যালয়ে গিয়েও মিঠুকে নিয়ে তার ভাবনার অন্ত নেই। বাড়ি এসে নিজ হাতে তাকে খাওয়ায়। মিঠুও তার কাঁধে বসে আনন্দে গেয়ে যায়। ই-টি-ই… ।
ক.’বেরিবেরি’ কী?
খ. অতিথি কিছুতে ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের অমল এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত।”— উক্তিটির যথার্থতা বিচার করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘বেরিবেরি’ শোথ জাতীয় রোগ, যাতে হাত-পা ফুলে যায়।
খ. নতুন পরিচয়ের সংকোচ কাটাতে না পেরে অতিথি ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না। লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুদিনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে পথ চলতে গিয়ে একটি কুকুরের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। পথে লেখক প্রাণীটির সঙ্গে অনেক কথা বলেন, সেও লেজ নেড়ে নেড়ে জবাব দেয়। কিন্তু বাড়ি পৌছে গেট খুলে ভেতরে ডাকলে কুকুরটি দাড়িয়ে থাকে, ভেতরে ঢুকতে সাহস পায় না। মূলত অচেনা পরিবেশে ভয় ও সংকোচ থেকেই তার সে সাহস হয় না।
গ. পোষা প্রাণীর সাথে মানুষের ভালোবাসার সম্পর্কের দিক দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে। মানুষ যদি অবলা প্রাণীকে ভালোবাসে এবং যত্ন করে তাহলে এ প্রাণীর কাছ থেকেও সে একই আচরণ পেতে পারে। বিভিন্ন কাজের সময় পোষা প্রাণী পাশে থেকে একজন মানুষের মতোই আনন্দ দেয় । ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখক দেওঘরে বেড়াতে গেলে একটি কুকুরের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এ প্রাণীটি যেমন লেখকের মনে আনন্দ দেয় তেমনি উদ্দীপকেও অমল একটি টিয়া পাখিকে যত্ন করে মনে নির্মল আনন্দ খুঁজে পায়। মিঠুর কাঁধের ওপর টিয়া পাখি বসে গানের সুর তোলে। এটি যেন ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার উদাহরণ। একইভাবে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেজ নেড়ে কুকুরটি লেখকের সাথে ভাব বিনিময়ে করে। সুতরাং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মানুষ ও প্রাণীর মমত্ববোধের দিকটিই সাদৃশ্যপূর্ণভাবে উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ, উদ্দীপকে অমল ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের জীবপ্রেম তাদের অভিন্ন মানবিক অনুভূতিকে প্রকাশ করে ।
বাড়ির অবলা প্রাণী তুচ্ছ জীব হলেও এদের প্রতি মমত্ববোধের মন সবার থাকে না। উৎকৃষ্ট মননের একজন মানুষ এসব তুচ্ছ প্রাণীর মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নিতে পারে। উদ্দীপকে অমল ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতির মধ্যে এ ধরনের উৎকৃষ্ট মানসিকতাই প্রকাশ পায় । আলোচ্য গল্পে দেখা যায়, লেখক অবলা প্রাণীর যত্ন নেওয়ার মাঝে মনের আনন্দ খুঁজে পায়। এর মাধ্যমে সে আনন্দ ছাড়া অন্য কিছু খোঁজে না। একইভাবে পোষা প্রাণীর যত্ন নিতে গিয়ে অমলের ভাবনার অন্ত থাকে না। এটি তার নির্মল ভালোবাসারই প্রকাশ যাতে কোনো প্রতিদানের প্রত্যাশা তার নেই। জীবের প্রতি নির্মল ভালোবাসার মানসিকতা থাকার কারণেই গল্পের লেখক ও উদ্দীপকের বিমলের আচরণে জীবপ্রেমের অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের বিমল ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের জীবপ্রেম তাদের অনুভূতিকে অভিন্ন রূপে তুলে ধরেছে।
৪. সৃজনশীল প্রশ্ন: মিসেস নুরুন্নাহার একটি সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছোট পুত্রকে হারিয়ে, ইদানীং খুবই বিষণ্ণ থাকেন। ডাক্তারের পরামর্শে বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য তার বড় ছেলে তাকে কক্সবাজারে বেড়াতে নিয়ে আসে। মিসেস নুরুন্নাহার হোটেলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকেন— জেলেদের মাছ ধরা দেখেন, সমুদ্রের বিশালতা, গাংচিল আর নানা বয়সী পর্যটকদের দেখে তার সময় কাটে। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল।
ক. এক জোড়া বেনে-বৌ পাখি কোন গাছের ডালে বসত?
খ. অল্প বয়সী একদল মেয়েকে বেরিবেরির আসামি বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহারের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ অবতারণা করা হয়েছে। চোখের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক গল্পের লেখকের কোন দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের উল্লিখিত দিকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল উপজীব্য নয়— মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. এক জোড়া বেনে-বৌ পাখি ইউক্যালিপটাস গাছের ডালে বসত।
খ. ফুলে যাওয়া পা ঢাকার প্রাণান্ত চেষ্টা দেখে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত একদল মেয়েকে লেখক ‘বেরিবেরির আসামি’ বলেছেন। বেরিবেরি হলো শোথ জাতীয় রোগ। এ রোগ হলে হাত-পা ফুলে যায়। লেখকের বাড়ির সামনে দিয়ে বেরিবেরিতে আক্রান্ত একদল অল্পবয়সী মেয়ে যাতায়াত করত। ফোলা পায়ের লজ্জা ঢাকতে গরমের দিনেও তারা আঁটসাট করে মোজা পড়ত। তাদের এমন দুর্দশার কথা বোঝাতেই আলোচ্য গল্পে তাদের ‘বেরিবেরির আসামি’ বলা হয়েছে।
গ. ডাক্তারের পরামর্শে হাওয়া বদল করতে আসার দিক থেকে উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহারের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য রয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের দেওঘর ভ্রমণকালীন এক কুকুরের সাথে তাঁর সখ্যতার পরামর্শে সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে লেখক দেওঘরে যান এবং সেখানে অবস্থান করেন। আলোচ্য উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহারের ভ্রমণও ডাক্তারের পরামর্শ মতোই হয়েছিল। উদ্দীপকের মিসেস নুরুন্নাহার এক বেদনাদায়ক ঘটনার সম্মুখীন হন। তার চোখের সামনে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছোট ছেলের মৃত্যু হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান তিনি । অকালে স্বামী ও পুত্র হারানোর শোক কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না তিনি। আর তাই মন ভালো করতে ডাক্তারের পরামর্শ মতো তার বড় ছেলে তাকে কক্সবাজার নিয়ে আসে। একইভাবে আলোচ্য গল্পের লেখকও সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই দেওঘরে বেড়াতে আসেন। এদিক থেকে উদ্দীপকের নুরুন্নাহারের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের ভ্রমণের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর একটি প্রাণীর প্রতি লেখকের গভীর মমত্ব ও সহানুভূতির পরিচয় ফুটে উঠেছে I আলোচ্য গল্পের লেখক সুস্থতা লাভের উদ্দেশ্যে দেওঘর এসেছিলেন। একদিন বাড়ি ফেরার পথে একটি কুকুরের সান্নিধ্যে এসে কুকুরটি সাথে সখ্য গড়ে ওঠে তাঁর। কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদা দেন এবং নানাভাবে যত্ন করেন। প্রতিদানে কুকুরটিও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। তাই বাড়ি ফেরার সময় কুকুরটিকে ছেড়ে যাওয়ার যন্ত্রণায় দগ্ধ হন লেখক। উদ্দীপকে মিসেস নুরুন্নাহারের জীবনের এক দুঃখময় ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে। চোখের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী ও ছোট ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় ডাক্তার তাকে ঘুরে আসার পরামর্শ দেন। এ কারণে বড় ছেলের সঙ্গে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন তিনি। কিন্তু সেখানেও তার বেদনাবিধুর মন সারাক্ষণ উদাসীন থাকে।
৫. সৃজনশীল প্রশ্ন: আসমা কয়েকটি হাঁস কিনে বাড়িতে নিয়ে আসে। কয়েক দিনের মধ্যে হাঁসগুলোর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একদিন সকালে সে দেখে হাঁসগুলো ঘরের মধ্যে মরে আছে। তা দেখে সে কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে এবং পাগলের মতো হয়ে যায়।
ক. সবচেয়ে ভোরে ওঠে কোন পাখি?
খ. লেখক কেন বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পেলেন না?
গ.উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. উদ্দীপকের আসমা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের ভাবগত সাদৃশ্য থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন’— মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. সবচেয়ে ভোরে ওঠে দোয়েল পাখি।
খ. অতিথির প্রতি মমতার টান সৃষ্টি হওয়ায় লেখক তাকে ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চিকিৎসকের কথামতো বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে এসে লেখক একটি কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পান। কুকুরটিকে তিনি অতিথি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কুকুরটি হয়ে উঠেছিল তার একাকী জীবনের সঙ্গী। ফলে সেখান থেকে চলে আসার সময় কুকুরটিকে ছেড়ে আসতে লেখক কষ্ট অনুভব করছিলেন। আর তাই ট্রেন ছেড়ে দিলেও লেখক বাড়ি ফেরার আগ্রহ মনের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
গ. উদ্দীপকের প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের দিকটির সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কথক বিকেলবেলা বাইরে হাঁটতে বের হলে ফিরে আসার পথে একটি কুকুর তাঁর পিছু নেয়। কথক তাকে অতিথির মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে এনে খাবার খেতে দেন। এরপর থেকে কথক বাইরে গেলে প্রতিদিনই কুকুরটি তাঁর সঙ্গী হয়। এমনকি কথকের বিদায়বেলাতেও কুকুরটি তাঁর সঙ্গে স্টেশনে আসে। কথকও মমতার সঙ্গে তাঁর এই স্মৃতি রোমন্থন করেন এবং অতিথির প্রতি তাঁর প্রবল স্নেহ প্রকাশ পায় । উদ্দীপকের আসমা কয়েকটি হাঁস কিনে আনে। সে হাঁসগুলোকে খুব ভালোবাসে। কয়েক দিনের মধ্যে হাঁসগুলোর সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু একদিন সকালে হাঁসগুলোর মরে পড়ে থাকা দেখে সে কাঁন্নায় ভেঙে পড়ে। তার আদরের হাঁসগুলোর মরে যাওয়া সে মেনে নিতে পারে না। তাই বলা যায়, পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের দিকটি উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পকে সাদৃশ্যপূর্ণ করে তুলেছে ।
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি অবহেলিত প্রাণীর প্রতি কথকের মমতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে, যা উদ্দীপকের ভাবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে বায়ু পরিবর্তন করতে এসে কথকের সঙ্গে হঠাৎ করেই একটি কুকুরের দেখা হয়। অতিথি হিসেবে কুকুরটিকে তিনি বাড়িতে নিয়ে আসেন। চাকরকে বলে তাকে খাবার দেওয়া ও তার প্রতি লক্ষ রাখার মাধ্যমে কথকের সঙ্গে অতিথির একটা সখ্য গড়ে ওঠে। বিদায়বেলায় সবার মতো অতিথি কুকুরটিও কথককে বিদায় জানাতে আসে। আর এই স্মৃতিগুলোই পরবর্তীতে কথকের মনে কাতরতা সৃষ্টি করে। উদ্দীপকে আসমার মধ্যেও কথকের মতো পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার পরিচয় পাওয়া যায়। সে কয়েকটি হাঁস কিনে আনে পোষার জন্য। অল্প দিনের মধ্যেই তাদের প্রতি তার অকৃত্রিম মমতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু একদিন সকালে সে দেখতে পায় হাঁসগুলো মরে পড়ে আছে। এই শোকে আসমা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারণ হাঁসগুলোকে সে সত্যিই ভালোবেসেছিল। উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বিষয় পর্যালোচনা করে বলা যায়, উদ্দীপকের আসমা গল্পের কথকের মতোই প্রাণীর প্রতি স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। তবে কথক দেওঘর ঘুরতে এসে অবহেলিত এক কুকুরের সাথে সখ্য গড়ে তোলেন যেখানে উদ্দীপকের পোষ্য প্রাণী ছিল কয়েকটি হাঁস। অতিথির প্রতি গল্পকথকের সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, আর হাঁসগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আসমার। কথকের বিদায়ের দিন কুকুরটিও স্টেশনে আসে তাকে বিদায় জানাতে, কিন্তু আসমার হাঁসগুলো মারা যায়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে অতিথির স্মৃতি গল্পের প্রাণীর প্রতি স্নেহের দিকটি প্রকাশ পেলেও প্রেক্ষাপটে ভিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
৬. সৃজনশীল প্রশ্ন: একদিন কক্সবাজার সৈকতে আছড়ে পড়ে প্রায় ত্রিশটির মতো বিরল প্রজাতির ডলফিন। আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুরা মিলে ডলফিনগুলোকে পুনরায় সমুদ্রে নামানোর চেষ্টা করে। একে একে সবগুলো ডলফিনকে তারা জীবিত অবস্থায় পানিতে নামাতে পারে। এ কাজটি করতে পেরে ওরা প্রত্যেকেই খুব আনন্দিত এবং এলাকাবাসীর কাছেও প্রশংসিত হয়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের এমন ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করে।
ক.লেখকের বিকেলটা কোথায় কাটত?
খ.বিদায় নেবার দিন এসে পড়লেও নানা ছলে লেখক দিন-দুই অপেক্ষা করলেন কেন?
গ. উদ্দীপকের আব্দুর রহমান এবং তার বন্ধুদের কার্যক্রমে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটিতে চেতনাগত ঐক্য লক্ষ করা গেলেও পরিণতির ভিন্নতা লক্ষণীয়।”— মন্তব্যটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলোকে মূল্যায়ন করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. লেখকের বিকেলটা কাটত গেটের বাইরে পথের ধারে বসে।
খ. অতিথির প্রতি মমতার টান কাটাতে না পেরে লেখক দেওঘর | উদ্দীপকের আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের কার্যক্রমে কেবল প্রাণীদের থেকে বিদায় নিতে দিন-দুই অপেক্ষা করেন।চিকিৎসকের পরামের্শ বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়ে লেখক একটি কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পান। কুকুরটিকে তিনি অতিথি হিসেবে বর্ণনা করেছেন । কুকুরটির সঙ্গে তাঁর ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে চলে আসার সময় হলেও লেখক প্রাণীটিকে ছেড়ে আসতে কষ্ট অনুভব করছিলেন। এজন্যই দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা ছলে লেখক দিন-দুই অপেক্ষা করেন।
গ. উদ্দীপকের আব্দুর রহমান এবং তার বন্ধুদের কার্যক্রমে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীদের প্রতি মানুষের মমত্ববোধের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।’অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক অসুস্থ হয়ে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে বেড়াতে যান। সেখানে বেড়ানোর সময় একটি কুকুর লেখকের পেছন পেছন চলতে থাকে। বাড়ি নিয়ে গিয়ে লেখক কুকুরটিকে খেতে দেন এবং সব সময় খোঁজখবর নেন। লেখক এখানে দেখিয়েছেন মানুষে মানুষে যেমন স্নেহ ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। উদ্দীপকে কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক ডলফিনের প্রতি মমত্ববোধের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। কক্সবাজার সৈকতে প্রায় ত্রিশটি ডলফিন আছড়ে পড়ে। আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুরা মিলে সেগুলোকে সমুদ্রে নামিয়ে দেয়। এই কাজটি করতে পেরে তারা খুব খুশি হয় এবং এলাকাবাসীও তাদের প্রশংসা করে। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের এমন ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত করে। উদ্দীপকে প্রাণীদের প্রতি আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও একটি কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে, উদ্দীপকের আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের কার্যক্রমে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীদের প্রতি মমত্ববোধের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্প ও উদ্দীপকে প্রাণীদের প্রতি মমত্ববোধের চেতনাগত ঐক্য লক্ষ করা গেলেও উভয় রচনার মধ্যে পরিণতির ভিন্নতা আছে।’অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাথে কিছুদিনের পরিচয়ে একটি কুকুরের মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক তাঁর ভ্রমণসঙ্গী করে নেয় কুকুরটিকে। এমনকি তার খাওয়ার বন্দোবস্তও করেন। কিন্তু বাড়ির মালি-বৌ কুকুরটিকে খেতে না দিয়ে নিজেই সব খাবার নিয়ে যায় এবং কুকুরটিকে তাড়িয়ে দেয়। কুকুরটির প্রতি মমতা থাকলেও লেখককে একদিন কুকুরটিকে ছেড়ে চলে যেতে হয়। কিছু মানুষ জীবের প্রতি মমতায় সিক্ত হতে পারে। আবার কিছু মানুষ নির্মমও হতে পারে। এই বিষয়টিই আলোচ্য গল্পে প্রকাশ করা হয়েছে। উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে ত্রিশটি বিরল প্রজাতির ডলফিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়েছে। আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুরা ডলফিনগুলোকে পুনরায় সমুদ্রে নামিয়ে দেয়। এ কাজটি করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত হয়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদেরকে পুরস্কৃত করেন। উদ্দীপকের আব্দুর রহমান ও তার বন্ধুদের কার্যকমে কেবল প্রাণীদের প্রতি মমত্ববোধই প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি তাদের কাজের জন্য তারা পুরস্কৃতও হয়। কিন্তু অতিথির স্মৃতি গল্পের কুকুরটিকে বাড়ির চাকর ও মালিনী কর্তৃক অবহেলিত হতে দেখা যায়। একপর্যায়ে কুকুরটিকে ফেলে চলে যান। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটিতে চেতনাগত ঐক্য লক্ষ করা গেলেও পরিণতির ভিন্নতা লক্ষণীয়।
৭. সৃজনশীল প্রশ্ন: লোপা খুব ভালোবাসে। তার দুটো কবুতর আছে। একটির নাম হীরা, অন্যটির নাম মানিক। হীরা-মানিক বলে ডাকলেই উড়ে এসে লোপার মাথায় বসে ‘বাক-বাকুম’ শব্দ করে। নিজের হাতে ওদের খাইয়ে দেয় লোপা। লোপার মা বলে, “কবুতর নিয়ে এত বাড়াবাড়ি আমার ভালো লাগে না।” মার কথা শুনে চুপ করে থাকে লোপা ।
ক. ‘পান্ডুর’ শব্দের অর্থ কী?
খ.লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন? বুঝিয়ে লেখো ।
গ.উদ্দীপকের লোপার মধ্যে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব একই । ” উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘পাণ্ডুর’ শব্দের অর্থ— ফ্যাকাশে।
খ. লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য।’অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা করেও কোনোরকম সুস্থতা বোধ করছিলেন না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে দেওঘরে গিয়েছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। কেননা আবহাওয়া শরীর ও মনে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসিক প্রশান্তি ও রোগমুক্তির জন্য লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন।
গ. ভিন্ন প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিক থেকে উদ্দীপকের লোপার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকের চরিত্রটি খুঁজে পাওয়া যায় । মানুষ স্বভাবতই প্রকৃতিপরায়ণ। প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষে মানুষে যেমন প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তেমনি প্রকৃতির ভিন্ন জীবের প্রতিও মানুষের স্নেহ- প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। এমন বাস্তব চিত্র দেখা যায়, উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে।উদ্দীপকের লোপা প্রকৃতি জগতের ভিন্ন প্রাণীকে ভালোবাসে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকও ভিন্ন প্রাণীকে ভালোবাসেন। লোপা কবুতরকে খুব ভালোবাসে। হীরা ও মানিক নামের দুটো কবুতরকে সে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। তার পোষা কবুতর দুটিকে নাম ধরে ডাকলেই উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে ত্রিশটি বিরল প্রজাতির ডলফিন | তারা তার মাথায় বসে বাক-বাকুম শব্দ করে। লোপার খুব ভালো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়েছে। আব্দুর রহমান ও তার লাগে। কিন্তু লোপার মা এসব পছন্দ না করলেও লোপা নীরবেই বন্ধুরা ডলফিনগুলোকে পুনরায় সমুদ্রে নামিয়ে দেয়। এ কাজটি কবুতরগুলোকে ভালোবেসে যায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও দেখি,করতে পেরে তারা খুবই আনন্দিত হয়। থানা নির্বাহী কর্মকর্তা | কথকের সঙ্গে একটি কুকুরের খুব ভাব হয়। কুকুরটি প্রতিদিন তাদেরকে পুরস্কৃত করেন । বিকেলবেলায় তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়। কথকও কুকুরটিকে নিজ বাসায় নিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করেন। যদিও বাসায় চাকর- চাকরানিরা তা পছন্দ করে না। তবুও কথক কুকুরটির সঙ্গ ত্যাগ করেন না। কুকুরটিও গল্প কথককে ভুলতে পারে না। মানুষ ছাড়াও ভিন্ন প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম মমত্বের সম্পর্কের কারণে উদ্দীপকের লোপার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথকের চরিত্রটি সার্থকভাবে খুঁজে পাওয়া যায়।
ঘ. প্রকৃতি জগতের ভিন্ন জীবের প্রতি মানুষের স্নেহ-প্রীতি ও সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্দীপকে ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব সমভাবে প্রবাহিত। প্রকৃতি জগতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। মানুষ প্রকৃতির গাছপালাকে ভালোবাসে। প্রকৃতির ভিন্ন জগতের জীবকেও ভালোবাসে, পোষ মানায়। কোনো কারণে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে বেদনাবোধ করে। এমন চেতনার প্রকাশ দেখা যায় উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে। উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব ভিন্ন প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম দরদ ও ভালোবাসা। উদ্দীপকের লোপা দুটি করতর পোষে। হীরা ও মানিক নামের কবুতর দুটিকে সে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। কবুতর দুটিকে সে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তার মা এতে বিরক্তি প্রকাশ করলেও সে ভিন্ন জাতের প্রাণীকে নীরবে ভালোবেসে যায়। উদ্দীপকের গল্পকথকও প্রকৃতিজগতের ভিন্ন প্রাণীর প্রতি পরম স্নেহগত প্রাণ। দেওঘরে থাকাকালে একটি কুকুরের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটি প্রতিদিন বিকেলে তাঁর ভ্রমণসঙ্গী হয়। তিনিও কুকুরটিকে ভালোবেসে নিজ বাসায় নিয়ে খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেন। যদিও বাসার চাকর-ভৃত্যরা তা পছন্দ করত না। তারা কুকুরটিকে মেরে তাড়িয়ে দিলেও প্রতিদিন কথককে সঙ্গ দিতে আসত। কথক দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় কুকুরটির বিচ্ছেদ বেদনায় কাতর হন প্রতি স্নেহ-মমতার ধরন ও প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দুটি পোষা কবুতর ও একটি অতিথি প্রাণী কুকুরের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম দরদ প্রকাশ পেয়েছে। তাই বিষয় আঙ্গিক ভিন্ন হলেও বলা যায়, প্রকৃতিজগতের ভিন্ন পাখি ও পশুর প্রতি মানুষের মমত্ববোধই উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূলভাব। এদিক বিবেচনার প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি যথার্থ।
৮.সৃজনশীল প্রশ্ন: আলম একটি বিড়াল পোষে। সে প্রতিদিন নিজের খাবার হতে বিড়ালকে খাবার দেয়। এমনকি বাজার হতেও খাবার কিনে খাওয়ায়। স্কুল হতে এসে অবসর পেলে বিড়ালের সঙ্গে খেলা করে। হঠাৎ ইদুরকে দেওয়া বিষ মেশানো খাবার খেয়ে বিড়ালটি মারা যায়। এতে আলম কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গ্রামের নাম কী?
খ. বায়ু পরিবর্তন বলতে কী বুঝায়?
গ. উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য দেখাও ৷
ঘ. “শুধু মানুষে মানুষে নয়, মানুষ ও প্রাণীর সঙ্গেও গড়ে ওঠে সহমর্মিতার সম্পর্ক”— ‘অতিথির স্মৃতি’ ও উদ্দীপকের আলোকে কথাটি বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গ্রামের নাম দেবানন্দপুর।
খ. বায়ু পরিবর্তন বলতে সাধারণ শারীরিক সুস্থতার জন্য আবহাওয়া পরিবর্তনকে বোঝায়। চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কথক দেওঘরে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় চিকিৎসক কথককে বায়ু পরিবর্তন করতে বলেন। অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর স্থানে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করলে অসুস্থ মানুষেরা সুস্থতা লাভ করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে গল্পকথকের সুস্থতার জন্য দেওঘরে গিয়ে অবস্থান করাকে বায়ু পরিবর্তন বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে। ভিন্ন প্রাণীর প্রতি মমত্বের সম্পর্ক ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেখা যায়। গল্পকথকের দেওঘরে বৈকালিক ভ্রমণে একটি কুকুরের সঙ্গে সখ্য হয়। কুকুরটি মমতার বশে কথককে প্রতিদিন বিকেলবেলায় সঙ্গ দেয়। কথকও কুকুরটিকে নিজের বাসায় এনে প্রতিদিন খাবার দেন। কয়েকদিন পর কথক দেওঘর ছেড়ে যাওয়ার জন্য রেল স্টেশনে পৌঁছলে কুকুরটিকেও সেখানে দেখতে পান। ট্রেন ছেড়ে দিলে স্টেশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে কুকুরটি করুণচোখে একদৃষ্টে কথকের দিকে চেয়ে থাকে। এ দৃশ্য দেখে কথকের মনে বিরহ-বেদনা জেগে ওঠে। তিনি বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। উদ্দীপকে আলম একটি বিড়াল পোষে। বিড়ালটির সাথে তার সম্পর্ক এতটা ঘনিষ্ঠ হয় যে, প্রতিদিন নিজের খাবার থেকে বিড়ালকে খেতে দেয়। এমনকি বাজার হতেও খাবার কিনে খাওয়ায়। অবসর সময়ে বিড়ালের সঙ্গে খেলা করে। আলমের এমন প্রিয় বিড়ালটি হঠাৎ ইঁদুরকে দেওয়া বিষ মেশানো খাবার খেয়ে মারা গেলে সে শোকে-দুঃখে, কান্নায় ভেঙে পড়ে। মানবেতর প্রাণীর প্রতি এমন মমত্ববোধের বাস্তব চিত্র উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে সমান্তরালভাবে চিত্রায়িত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে আলমের বিড়ালের প্রতি মমত্ববোধ আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কথকের কুকুরের প্রতি গভীর মমত্ববোধের বাস্তবতায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।মানুষে মানুষে স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। এমন সত্যতা রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুর/ উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রমাণিত হয়েছে। উদ্দীপকের আলমের পোষা বিড়ালটি হঠাৎ একদিন ইঁদুরকে দেওয়া বিষ মেশানো খাবার খেয়ে মারা যায়। এতে আলম প্রচণ্ড বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়ে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও কথকের প্রিয়সঙ্গী কুকুরটিকে ছেড়ে আসতে কথক ভীষণ বিরহ-যন্ত্রণায় কাতর হন। উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর প্রাণীর প্রতি গভীর মমত্ববোধের চিত্রে বাস্তবিকই প্রমাণিত হয় শুধু মানুষে মানুষে নয়, মানুষ ও ভিন্ন প্রাণীর সঙ্গেও গড়ে ওঠে সহমর্মিতার সম্পর্ক। জীবের প্রতি জীবের সম্পর্কের এই যে গভীরতা এটি নিখাদ ও চিরন্তন। এমন বাস্তব সত্যটিই উদ্দীপক ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে সার্থকভাবে রূপায়িত হয়েছে। এ বিবেচনায় আলোচ্য মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।
৯. সৃজনশীল প্রশ্ন: রতন প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসে তার পোষা ময়নাটিকে। ময়নার প্রতি রতনের এমন দরদ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে তারই প্রতিবেশী রানা। এক সময় রানা রাতের আঁধারে ময়নাকে মেরে ফেলে। ময়নার শোকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গেল রতন।
ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম কী?
খ. “সত্যিকারের একটা ভাবনা ঘুচে গেল” — কীভাবে
গ. রানার সঙ্গে “অতিথির স্মৃতি” গল্পের কাকে মেলানো যায়? ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. প্রাচীরের ধারের গাছটির নাম ইউক্যালিপটাস।
খ. বেনে-বৌ পাখি দুটিকে ফিরে আসতে দেখে লেখকের সত্যিকারের ভাবনা ঘুচে গেল। প্রতিদিন লেখক হলদে রঙের বেনে-বৌ পাখি দুটির গান শুনে অভ্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ একদিন পাখি দুটো না আসায় লেখক খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন হয়তো ব্যাধেরা পাখি দুটোকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু তিন দিনের মাথায় যখন পাখি দুটোকে ফিরে আসতে দেখেন তখন লেখকের সত্যিকারের ভাবনা ঘুচে গেল।
গ. রানার সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে বর্ণিত মালি-বৌ চরিত্রকে মহেশকে হত্যা করে। গোহত্যার বিচারের ভয়ে রাতে পালিয়ে মেলানো যায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য এলে একটি অবহেলিত কুকুরের সঙ্গে তাঁর মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক তাকে অতিথির মতো বাড়িতে ডেকে এনে যত্নআত্তি করে খাওয়ান। কিন্তু বাড়ির বাগানের মালির বৌ বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয় না। তাই লেখকের অগোচরে কুকুরটিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। উদ্দীপকে রতনের মাঝে পোষাপ্রাণীর প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। পোষা প্রাণীর প্রতি রতনের ভালোবাসা দেখে প্রতিবেশী রানা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে এবং ময়নাকে হত্যা করে। রানা চরিত্রটি এক্ষেত্রে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌ চরিত্রের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। কেননা, উভয়ই ঈর্ষাকাতর। গল্পে মালি-বৌয়ের খাবারের বাড়তি অংশ অতিথি অর্থাৎ কুকুরটি খেত বলে সে ঈর্ষান্বিত হয়ে কুকুরটিকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের রানা ঈর্ষাকাতর হয়ে রতনের পোষা ময়নাটিকে হত্যা করেছে। ফলে ঈর্ষাকাতর এই মানসিকতার দিক থেকে উদ্দীপকের রানার সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌকে মেলানো যায়।
১০.সৃজনশীল প্রশ্ন: ‘মহেশ’ গফুরের পোষা গরু। মাঠ-ঘাট চৌচির হয়ে গেছে; গফুরের নিজের কোনো সাধ্য ছিল না মহেশকে খাবার দেওয়ার মতো কিছু। গ্রামে যাদের গোখাদ্য ছিল তারাও তা দেয়নি। বরং তাদের বাগানের কোনো কিছু খাওয়াতে মহেশকে খোয়াড়ে দেওয়া হয়। একাধিক বার ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মহেশ অন্যের বাগানে গেলে ও মেয়েকে আঘাত করলে গফুর তিক্ত হয়ে মহেশকে হত্যা করে। গোহত্যার বিচারের ভয়ে রাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেই বাবলা তলায় এসে নক্ষত্রখচিত কালো আকাশে মুখ তুলে বলল, ”আল্লাহ! আমাকে যত খুশি সাজা দিয়ো, কিন্তু মহেশ আমার তেষ্টা নিযে মরেছে।তার চরে খাওয়া এতটুকু জমি কেউ রাখেনি। যে তোমার দেওয়া মাঠের ঘাস, তোমার দেওয়া তেষ্টার জল তাকে খেতে দেয়নি, তারম কুসর খনো মাফ করো না।
ক. হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি কোথায় প্রত্যহ হাজিরা হেঁকে যেত?
খ. ‘অতিথি’র চোখ ভিজে ভিজে হয়েছিল কেন? ব্যাখ্যাকরো।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল বৈসাদৃশ্য কোথায়? আলোচনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের প্রেক্ষাপট ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেরই মূল সুর” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো ।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসে প্রত্যহ হাজিরা হেঁকে যেত।
খ. বাসার লোকদের বিরূপ আচরণের ব্যাপারে লেখকের কাছে নালিশ জানাতে আসায় কুকুরটির চোখ ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল। দেওঘরে বৈকালিক ভ্রমণে গিয়ে পরিচিত হওয়া কুকুরটিকে লেখক অতিথির মর্যাদা দেন। কিন্তু লেখকের নির্দেশমতো খাদ্য পাওয়ার পরিবর্তে কুকুরটির কপালে জুটেছিল মারধর। তাই একদিন দুপুরে বাড়ির চাকরদের অগোচরে কুকুরটি নালিশ জানাতে লেখকের দ্বারে হাজির হয়। লেখকের মনে হয়, নিজের দুরবস্থার কথা জানাতে আসা অতিথি কুকুরটির চোখ তখন ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল।
গ. প্রিয় প্রাণীকে খেতে দেওয়ার দিক দিয়ে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পোর মূল বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয়। অবলা প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালবাসা একটি প্রশংসনীয় বিষয়। অতিথির স্মৃতি গল্পে এমন চিতই চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। একটি কুকুরের সঙ্গে অঅসুস্থ লেখকের কদিনের পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠে মমত্বের সম্পর্ক গল্পটিতে প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের গফুরও তার প্রিয় পোষা গরুটির প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করে। দরিদ্র গফুর নিজের খেতে না পেলেও তার প্রিয় মহেশকে খাওয়াতে চায়। কিন্তু গফুর মহেশের জন্য খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়। এরফলে ক্ষুধার্ত মহেশ অন্যের বাগানে ঢুকে গাছপালা নষ।ট করে। এর বিপরীত দৃশ্য দেখি আমরা অতিথির স্মৃতি গল্পে। লেখক তার অতিথির কুকুরটিকে বাড়িতে আনেন। অতিথি হিেসেবে কুকুরটিকে খাবার দেওয়া ও তার প্রতি লক্ষ রাখার মাধ্যমে লেখকের সাথে তার সখ্য গড়ে উঠে। লেখক তার অতিথি কুকুরটিকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পারলেও উদ্দীপকের মহেশকে গফুর খেতে দিতে পারেনি।যদিও সে মহেশকে প্রাণাদিক ভালোবাসতো। আর এখানেই তাদের মধ্যে মূল বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের প্রেক্ষাপটে প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের প্রকাশিত হয়েছে, যা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেরই মূলসুর মানুষের সাথে মানুষের যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে, অন্য প্রাণীর সাথেও মানুষের এমন প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। উদ্দীপক এবং আলোচ্য গল্পে আমরা তার প্রমাণ পাই। উদ্দীপকেও | একটি অবলা প্রাণীর প্রতি মানুষের গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে উদ্দীপকের গফুর তাঁর পোষা গরুটিকে নিজের সন্তানের মতোই ভালবাসেন। মহেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দরিদ্র গফুর কান্নায় ভেঙে পড়ে। কেননা সে মহেশকে খেতে দিতে পারে না। প্রিয় পোষা প্রাণীটি খেতে দিতে না পারায় গফুর খুব কষ্ট পায়। খাবার না পেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর মহেশ অন্যের বাগানে ঢুকে গাছপালা নষ্ট করে। ক্ষুধার্ত মহেশ গফুরের মেয়েকে আঘাত করলে গফুর তিক্ত হয়ে মহেশকে হত্যা করে। কিন্তু পরক্ষণেই সে প্রিয় মহেশের বিয়োগ ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে।’অতিথির স্মৃতি’ গল্পে দেখা যায় যে, একটি মানবেতর প্রাণীর সাথে লেখকের স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক কুকুরটির প্রতি খুবই যত্নবান হয় এবং অতিথির মতো করে তাকে খাওয়ায়। দেওঘর থেকে বিদায়বেলায় প্রিয় অতিথির বিচ্ছেদ ব্যথায় লেখক কাতর হয়ে পড়েন। উদ্দীপকের গফুরও মহেশের বিয়োগ ব্যথায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপক এবং আলোচ্য গল্পের মূল সুর একই ।
১১. সৃজনশীল প্রশ্ন: হরিণ ছানা চরুকে পেয়ে বাড়ির ছোট ছেলেটি খুব খুশি। নিয়মিত খাবার দেওয়া, গায়ে মাথায় হাত বুলানো যেন ছেলেটির পরম তৃপ্তির বিষয়। বাড়ির অন্যরা অবশ্য চরুর বেড়ে ওঠার অপেক্ষা করে। বড় হলেই জবাই করে চরুর মাংস বিক্রি করা যাবে। কিন্তু বাড়ির ছোট ছেলেটি ভাবে, কী করে চরুকে বনে রেখে আসা যায়। অবশ্য একদিন সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ছেলেটি চরুকে বনে রেখে আসতে সক্ষম হয় ।
ক. ব্যাধের ব্যবসা কোনটি?
খ.সবাই বকশিশ পেলেও অতিথি পেল না কেন?
গ.উদ্দীপকের ছেলেটির কাজে অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “ চেতনাগত সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের ছেলেটি এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অবস্থানগত পার্থক্য ব্যাপক”— বক্তব্যটির সার্থকতা বিচার করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ব্যাধের ব্যবসা হলো পাখি চালান দেওয়া।
খ. অতিথি কুকুরটির ক্ষেত্রে বকশিশ প্রদান প্রযোজ্য ছিল না বলেই সে তা পেল না। প্রকৃত সুহৃদরা কখনোই বকশিশের আশায় কাউকে সাহায্য করে না। বকশিশ দিয়ে তাদের কাজের মূল্যায়নও সম্ভব হয় না। তাছাড়া বকশিশ জিনিসিট সাধারণ অর্থের মূল্যে করা হয়, যা মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ দুটি কারণেই সবাই বকশিশ পেলেও অতিথি তা পেল না।
গ.উদ্দীপকের ছেলেটির কাজে অতিথির স্মৃতি গল্পের প্রাণীপ্রতির দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মানবেতর একটি প্রাণীর সঙ্গে একজন মানুষের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার চিত্র এঁকেছেন। গল্পের লেখক দেওঘরে গিয়ে ছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। এখানে একটা পথের কুকুরের সাথে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে কুকুরটিকে তিনি পরম মমতায় আপন করে নেন । উদ্দীপকে বর্ণিত ছোট ছেলেটি হরিণ ছানা চরুকে পেয়ে খুব খুশি হয়। চরকে নিয়মিত দেখাশোনা করে ছেলেটি তৃপ্তি পায়। চরুর প্রতি | ছেলেটির মমত্ববোধের কারণেই চরুকে সে নিয়মিত দেখাশোনা করে । বাড়ির অন্যান্যরা চরুকে জবাই করে মাংস বিক্রি করতে চাইলে ছেলেটি মনে কষ্ট পায় এবং সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে ছেলেটি চরুকে বনে রেখে আসে। কুকুরের প্রতি লেখকের যে মমত্ববোধের ইঙ্গিত লক্ষ করা যায় তা উদ্দীপকের ছেলেটির মাঝেও প্রতীয়মান হয় । তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ছেলেটির কাজে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীপ্রীতির দিকটিই প্রকাশিত হয়েছে।
ঘ. প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা- এটি মূল বিষয় হলেও উদ্দীপকের ছেলেটি এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অবস্থান ভিন্ন। মানুষে মানুষে যেমন স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, তেমনি জীবের সঙ্গেও মানুষের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে মানুষের সাথে জীবের সম্পর্ক স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে না। উদ্দীপকের ছেলেটি প্রাণীপ্রেমী মানুষ। সে হরিণ ছানা চরুকে পেয়ে খুব খুশি হয়। নিয়মিত চরুকে খাবার দেওয়া, যত্ন করার মাঝে ছেলেটি আত্মতৃপ্তি পায়। এ কারণেই পরিবারের অন্যান্যরা চরুকে জবাই করে মাংস বিক্রি করতে চাইলে ছেলেটি ব্যথিত হয়। সে চরুকে বাঁচাতে সবার দৃষ্টির আড়ালে চরুকে বনে রেখে আসে। মূলত, প্রাণীর প্রতি ছেলেটির মমত্ববোধের বহিঃপ্রকাশই এখানে প্রকাশিত হয়েছে যা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মানসিকতাকে ইঙ্গিত করে । ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক বায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে দেওঘরে এলে একটি কুকুরের সাথে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। এক সন্ধ্যায় লেখকের সঙ্গে কুকুরটির দেখা হয়। তারপর থেকে কুকুরটি লেখকের পিছু পিছু ঘুরতে থাকে। লেখকও নিয়মিত কুকুরটির জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে বললে বাড়ির অন্যান্যরা বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু তাতে লেখকের সাথে কুকুরের সম্পর্কের বিন্দুমাত্র ছেদ ঘটেনি। এ কারণেই দেখা যায়, লেখকের চলে আসার সময় কুকুরটিও তাকে বিদায় জানাতে স্টেশনে আসে। অপরিচিত পরিবেশে একটি কুকুরের প্রতি লেখকের যে ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে তা প্রাণীপ্রীতির এক উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। উদ্দীপকের ছেলেটির মাঝে লেখকের প্রাণীপ্রীতির এই দিকটি ফুটে উঠলেও অন্যান্য বিষয়ের উপস্থিতি নেই । অতএব, আমরা বলতে পারি— “চেতনাগত সাদৃশ্য | থাকলেও উদ্দীপকের ছেলেটি এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অবস্থানগত পার্থক্য ব্যাপক”- মন্তব্যটি যথার্থ।
১২. সৃজনশীল প্রশ্ন: সায়েমা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। হঠাৎ টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে সে খুব দুর্বল হয়ে পড়ল। ডাক্তার তাকে নতুন কোনো স্থানে যেতে বললেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য। সায়েমাকে তার বাবা-মা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গেলেন। তারা কুয়াকাটায় পর্যটন কর্পোরেশনের একটি ভালো মানের মোটেলে উঠলেন।
ক. ‘ভজন’ অর্থ কী?
খ. লেখক কুকুরটিকে অতিথি বলেছেন কেন?
গ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের কোন বৈশিষ্ট্য সায়েমার চরিত্রে বিদ্যমান? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে বর্ণিত সায়েমার বায়ু পরিবর্তন অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়” – মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘ভজন’ অর্থ দেবদেবীর স্তুতি বা মহিমাকীর্তন।
খ. কুকুরটির আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে লেখক কুকুরটিকে অতিথি বলেছেন। একদিন সন্ধ্যায় লেখক ঘুরতে বের হলে একটি কুকুরের সাথে তাঁর দেখা হয়। বাড়ি ফেরার সময় কুকুরটি লেখককে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো অনুসরণ করে বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। তার এই আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে লেখক কুকুরটিকে অতিথির মর্যাদায় বরণ করে কুকুরটিকে অতিথি বলেছেন।
গ. স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য বায়ু পরিবর্তনের দিকটিই ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক উদ্দীপকের সায়েমার চরিত্রে বিদ্যমান। সুস্থতা লাভের আশায় চিকিৎসকের নির্দেশে নিজ বসবাসের এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সাময়িকভাবে যাওয়াকে বায়ু পরিবর্তন বলে। উদ্দীপকের সায়েমা এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকও বায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে অন্যত্র গমন করেছে। উদ্দীপকের সায়েমা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। হঠাৎ সে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয় এবং খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। ডাক্তার তাকে বায়ু পরিবর্তনের জন্য নতুন জায়গায় যেতে বলেন। তার বাবা-মা তাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে গেলেন। বায়ু পরিবর্তনের এ বিষয়টি আমরা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও দেখতে পাই। লেখক সুস্থতার উদ্দীপকের সায়েমা এবং লেখক একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। উদ্দেশ্য বায়ু পরিবর্তনে দেওঘরে এসেছিলেন। সুস্থতার জন্য সুস্থতার জন্য বায়ু পরিবর্তনের এই বৈশিষ্ট্যটিই উদ্দীপকের সায়েমার চরিত্রে বিদ্যমান।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সায়েমার বায়ু পরিবর্তন ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়। বায়ু পরিবর্তন প্রাচীন চিকিৎসার অন্যতম একটি উপায় ছিল। আধুনিককালেও ক্ষেত্রবিশেষে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে গেলে রোগীর দেহ ও মনে সজীবতা ফিরে আসে। আসে। তাই রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের সায়েমা ও আলোচ্য গল্পের লেখক সুস্থতার জন্য বায়ু পরিবর্তনকেই শ্রেয় মনে করেছেন। তাই উদ্দীপকের সায়েমা টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হয়। এতে সে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। তার দেহ ও মনের সুস্থতা ফিরে পাওয়ার জন্য ডাক্তার তাকে বায়ু পরিবর্তনের পরামর্শ দেন। সায়েমা তখন তার বাবা-মার সাথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যায়। সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কিছুদিন কাটিয়ে সায়েমার দেহ ও মনের সুস্থতা ফিরে আসে।
‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকও সায়েমার মতো সুস্থতার জন্য বায়ু পরিবর্তন করেন। কিন্তু লেখকের বায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অনেক বেশি ব্যঞ্জনাময় এবং ঘটনাবহুল। অন্যদিকে, সায়েমার বায়ু পরিবর্তন নিছক সুস্থতা লাভের আশায়। লেখক দেওঘরে গিয়ে যেমন প্রকৃতির নানা উপাদান নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন উদ্দীপকের সায়েমা তেমন করেনি। সুতরাং, উদ্দীপকে বর্ণিত সায়েমার বায়ু পরিবর্তন ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয় ।
১৩. সৃজনশীল প্রশ্ন: জনির প্রিয় পোষা বিড়াল মিনি। সকালে উঠেই সে মিনির খোঁজ করে, স্কুল থেকে ফিরে মিনিকে খাওয়ায়। বিকালে মিনিকে নিয়ে খেলা করে বাগানে। দিন শেষে জনি যখন পড়তে বসে, মিনি তখন তার পায়ে কাছে বসে থাকে।
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটু দেরি করে আসত কোন পাখি?
খ. “ওর চেয়ে তুচ্ছ জীব শহরে আর নেই” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. জনির মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটু দেরি করে আসত হলদে রঙের বেনে-বৌ পাখি।
খ. অতিথির স্মৃতি গল্পের অতিথি একটি বেওয়ারিশি কুকুর হওয়ায় লেখক বলেছেন ওর চেয়ে তুচ্ছ জীব শহরে আর নেই। চিকিৎসকের আদেশে বায়ু পরিবর্তনের জন্য লেখক দেওঘরে এসেছিলেন। এখানে একাকী জীবনে তার এক সঙ্গী জুটে যায়, সে হলো একটি কুকুর, লেখক তাকে অতিথি বলেছেন। অনাদরে, অবহেলায় অসহায় অতিথিকে লেখক আদর করে খাওয়ান, তার সাথে গল্প করেন। কিন্তু লেখক জানেন যে, তিনি চলে গেলে অতিথি আবার অসহায় হয়ে পড়বে তাই লেখক শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আলোচ্য উক্তিটি করেন।
গ. উদ্দীপকের জনির মাঝে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রকাশিত প্রাণীপ্রীতির দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মানবেতর একটি প্রাণীর সঙ্গে একজন মানুষের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার চিত্র এঁকেছেন। গল্পের লেখক দেওঘরে এসেছিলেন বায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে। এখানে একটি পথের কুকুরের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটিকে তিনি পরম মমতায় আপন করে নেন। উদ্দীপকে বর্ণিত জনি মিনি নামের একটি বিড়ার পোষে। বিড়ালটিকে তার খুবই আদরের। সকালে ঘুম ভাঙলেই তাই সে মিনির খোঁজ করে। জনির অবসর সময়গুলোও কাটে বিড়ালটির সান্নিধ্যে। এভাবেই অবলা একটি প্রাণীর সাথে জনির স্নেহ ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। একই বিষয় অতিথির স্মৃতি গল্পেও লক্ষণীয়। লেখকের সাথে পথের একটি কুকুরের হৃদতার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার দিকটি সেই ইঙ্গিতই বহন করে।
১৪. সৃজনশীল প্রশ্ন: ঝড়ের রাতে আম গাছের ডাল ভেঙে পড়লে অর্ণব | সেখানে দুটি টিয়া পাখির বাচ্চা দেখতে পায়। পাখির বাচ্চা দুটিকে নিয়ে এসে খাঁচায় রেখে খাবার দেয়। আস্তে আস্তে বাচ্চাগুলো বড় টিয়ায় পরিণত হয়। অর্ণব অবসর সময়ে টিয়া পাখিগুলোর যত্ন নেয়। একদিন টিয়া পাখিগুলোকে বিড়ালে খেয়ে ফেললে পাখিগুলোর কথা ভেবে অর্ণব কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেওঘরে গিয়েছিলেন কেন?
খ. অতিথির চোখ দুটো ভিজে ভিজে হয়ে উঠল কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি বিদ্যমান তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের খণ্ডিত চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।”— উক্তিটি ‘অতিথির স্মৃতি’ ও উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেওঘরে গিয়েছিলেন বায়ু পরিবর্তনের জন্য।
খ. বাসার লোকদের বিরূপ আচরণের ব্যাপারে লেখকের কাছে নালিশ জানাতে আসায় কুকুরটির চোখ ভিজে ভিজে দেখাচ্ছিল। দেওঘরে বৈকালিক ভ্রমণে গিয়ে পরিচিত হওয়া কুকুরটিকে লেখক অতিথির মর্যাদা দেন। কিন্তু লেখকের নির্দেশমতো খাদ্য পাওয়ার পরিবর্তে কুকুরটির কপালে জুটেছিল মারধর, তাই একদিন দুপুরে বাড়ির চাকরদের অগোচরে কুকুরটি নালিশ জানাতে লেখকের দ্বারে হাজির হয়। লেখকের মনে হয়, নিজের দূরবস্থার কথা জানাতে | আসা অতিথি কুকুরটির চোখ তখন ভিতে ভিজে দেখাচ্ছিল।
গ. উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রকাশিত মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিকটি বিদ্যমান। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে ক’দিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে পথের একটি কুকুরের সঙ্গে লেখকের স্নেহ-মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই মমত্ববোধ থেকে কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদায় বরণ করেন। আর তাই দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হলে কুকুরটির কথা ভেবে ব্যথিত হন লেখক। উদ্দীপকে পোষা প্রাণীর প্রতি অর্ণবের মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে। একদিন ঝড়ের কবল থেকে অর্ণব দুটি টিয়া পাখিকে উদ্ধার করে। সে পাখিগুলোকে যত্ন করে বড় করে তোলে। অন্যদিকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্যে দেওঘরে বেড়াতে গেলে সেখানকার অচেনা কুকুরটির সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। কুকুরটির প্রতি অনুরাগবশত দেওঘরে থাকাকালে নিয়মিত তিনি তার খোঁজখবর রাখতেন। মানবেতর এক প্রাণীর প্রতি তাঁর এ মমত্ববোধ মূলত উদ্দীপকের অর্ণবের মানসিকতার অনুরূপ। সেদিক বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ পরে প্রকাশিত মানবেতর প্রাণীর প্রতি লেখকের মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের খণ্ডিত চিত্র প্রকাশ পেয়েছে”- মন্তব্যটিকে যথার্থ বলেই আমি মনে করি।’অতিথির স্মৃতি’ গল্পটি একটি পথের কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধকে ঘিরে রচিত হয়েছে। সেখানে কুকুরটির সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হন লেখক। এছাড়াও এ গল্পে . দেওঘরের বর্ণনাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। উদ্দীপকে এসবকিছু উল্লিখিত হয়নি। উদ্দীপকের অর্ণব পশুপাখিদের ভালোবাসে। আর তাই ঝড়ের কবলে পড়া দুটি পাখির বাচ্চাকে সে উদ্ধার করে। শুধু তাই নয়, সে ভালোবাসা থেকে পাখি দুটিকে যত্নের সাথে বড় করে তোলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একদিন পাখি দুটিকে বিড়ালে খেয়ে ফেলে। এই ঘটনায় পাখি দুটোর কষ্টের কথা ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়ে অর্ণব। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক মানবেতর প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। এটিই এ গল্পের মূল বিষয়। উদ্দীপকের অর্ণবের আচরণেও এ দিকটির পরিচয় পাওয়া যায়। তবে আলোচ্য গল্পে এর বাইরেও আরও নানা দিক উঠে এসেছে। সেখানে দেওঘরের প্রাকৃতিক পরিবেশ, সেখানকার জনজীবনের খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন লেখক। উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে এসব দিক উল্লিখিত হয়নি। সে বিবেচনায় প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
১৫. সৃজনশীল প্রশ্ন: টুম্পা হঠাৎ করে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে তার মা তাকে ডাক্তারের নির্দেশে মামার বাড়ির গ্রামে বেড়াতে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে সে মামাতো ভাই-বোনদের সাথে খেলাধুলা করে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে, উপরন্তু মামার বাড়ির একটা বিড়াল ছানার সাথে তার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। খেতে-শুতে তাকে সাথে রাখে, বিড়ালটিও যেন তাকে না দেখলে মিউ মিউ করে ডাকে আর খোঁজে ।
ক.পান্ডুর অর্থ কী?
খ.মালি-বৌ কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিত কেন?
গ.উদ্দীপকে টুম্পা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রের পরিচয় বহন করে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না।’- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. পাণ্ডুর অর্থ ফ্যাকাশে।
খ. উচ্ছিষ্ট খাবার দেবে না বলেই মালি-বৌ অতিথি কুকুরকে তাড়িয়ে দিত। লেখকের অতিথি ছিল একটি কুকুর কিন্তু লেখকের বাগানের মালি-বৌ তাকে খেতে দিত না। লেখকের বাড়িতে প্রতিদিন অনেক খাবার নষ্ট হয়ে যায়। তবে সেই খাবার মালি-বৌ এসে নিয়ে যায়। তাই মালি-বৌ নিজের খাবার অতিথিকে দেবে না বলেই তাকে তাড়িয়ে দিত।
গ. উদ্দীপকের টুম্পা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের গল্পকথক লেখক চরিত্রের পরিচয় বহন করে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক চিকিৎসকের আদেশে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে যান। সেখানে পথ চলতে চলতে একটি ১ কুকুর তাকে সঙ্গ দেয়। কুকুরটির প্রতি তার মায়া জন্মে তাই তিনি তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন, খাবার খাওয়ান। এভাবে লেখকের সাথে কুকুরটির মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উদ্দীপকের টুম্পা মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে তার মা তাকে ডাক্তারের নির্দেশে বায়ু পরিবর্তনের জন্য মামার বাড়ি বেড়াতে নিয়ে যান। সেখানে এক মানবেতর প্রাণী বিড়াল ছানার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও লেখক দেখিয়েছেন যে মানুষে মানুষে যেমন প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে তেমনি অন্য জীবের সাথেও মানুষের তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। মানবেতর প্রাণী কুকুরের প্রতি লেখকের সহানুভূতি লেখক দেওঘরে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু এ বিষয়টিই প্রকাশ করে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের টুম্পা পরিবর্তনের জন্য। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের চরিত্রের পরিচয় বহন করে।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না।”— মন্তব্যটি যথার্থ ।শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে আমরা মানুষের সঙ্গে অবলা প্রাণীর ভাব বিনিময়ের চমৎকার একটি পরিস্থিতি লক্ষ করি। লেখক শারীরিক সুস্থতার আশায় দেওঘরে গেলে সেখানে একটি কুকুরের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। বিদায় বেলায় অতিথির খণ্ডস্মৃতি লেখককে আবেগাপ্লুত করে তোলে। উদ্দীপকেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মতো একটি মানবেতর প্রাণী | উদ্দীপকের শিবলুর মাঝে নির্দয় মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। বিড়ালের সঙ্গে টুম্পার সখ্য সৃষ্টি হয়। খেতে-শুতে তাকে সাথে | জামশেদ সাহেবের বাড়ির ছাদের গাছগুলোতে বিভিন্ন পাখি রাখে। বিড়ালটিও তাকে না দেখলে মিউ মিউ করে। উদ্দীপক ও গল্পের আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকে গল্পের কিছু অংশের প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু একটি মানুষের সঙ্গে একটি পোষ্য প্রাণীর সম্পর্কের গভীরতা কীভাবে স্থাপিত হয় তা উদ্দীপক ও গল্পে দেখানো হলেও বিদায় বেলায় উভয়ের মাঝে কেমন অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা উদ্দীপকে দেখানো হয়নি। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সমগ্রভাবকে ধারণ করে না । ”— মন্তব্যটি যথার্থ।
১৬. সৃজনশীল প্রশ্ন: জামশেদ সাহেব কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে বাড়ির ছাদে ফলজ গাছ লাগান। একদিন তিনি দেখতে পেলেন সে গাছগুলোতে পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তিনি পাখিদের খাবার দেন, আশ্রয় দেন। দিন দিন পাখির সংখ্যা বেড়ে ওঠে। একদিন পাশের বাড়ির শিবলু এয়ার গান দিয়ে তার আশ্রিত একটি ঘুঘু মেরে ফেলে।
ক. কোথায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে অতিথি?
খ. দেওঘর ছাড়তে দিন-দুই দেরি করলেন কেন লেখক?
গ. উদ্দীপকের শিবলুকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রের সঙ্গে মেলানো যায়? কেন?
ঘ. অনুভূতির দিক থেকে জামশেদ সাহেব ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রতিভূ— মন্তব্যটির যথার্থতা নির্ণয় করো ।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. স্টেশনের ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টে চেয়ে আছে অতিথি।
খ. অতিথির প্রতি মমতার টান কাটাতে না পেরে, লেখক দেওঘর কুকুরটির খোঁজ-খবর রাখেন। এমনকি চাকরদেরকে বলে দেন থেকে বিদায় নিতে দিন-দুই দেরি করেন। চিকিৎসকের পরামের্শ বায়ু পরিবর্তনের জন্যে দেওঘরে গিয়ে লেখক একটি কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পান। কুকুরটিকে তিনি অতিথি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কুকুরটির সঙ্গে তাঁর ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে চলে আসার সময় হলেও লেখক প্রাণীটিকে ছেড়ে আসতে কষ্ট অনুভব করছিলেন। এজন্যই দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে লেখক দিন-দুই দেরি করেন।
গ. অবলা প্রাণীর প্রতি নির্মম আচরণের দিক দিয়ে উদ্দীপকের শিবলুকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মালি-বৌ চরিত্রের সঙ্গে মেলানো যায়। জগতের সংবেদনশীল মানুষেরা ভিন্ন প্রাণীদের প্রতিও মমত্বশীল হয়। তাদের মমতায় ভিন্ন প্রাণী ও মানুষের মতো আদর যত্ন পায় । আবার অনেক মানুষ আছেন যারা অবলা প্রাণীদের প্রতি নির্মম আচরণ করেন। উদ্দীপকের শিবলুর মাঝে নির্দয় মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। জামশেদ সাহেবের বাড়ির ছাদের গাছগুলোতে বিভিন্ন পাখি আনোগোনা করে। জামশেদ সাহেব তাদের যন্ত নেন। খাবার ও আশ্রয় দেন। অথচ পাশের বাড়ির শিবলু এয়ার গান দিয়ে জামশেদ সাহেবের আশ্রিত একটি ঘুঘু মেরে ফেলে। অবলা প্রাণীর প্রতি এমন নির্দয়তার চিত্র আমরা অতিথির স্মৃতি গল্পেও দেখতে পাই। সেখানে মালি বৌ অতিথি তথা কুকুরটির প্রতি নিষ্ঠিুর আচরণ করে। ক্ষুধাতৃ কুকুরটিকে মালি-বৌ খেতে না দিয়ে মেরে তাড়িয়ে দেয়। যদিও লেখক অতিথিকে খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মালি-বৌ এর এই নির্দয়তা উদ্দীপকের শিবলুর মাঝেও বিদ্যমান।
ঘ. উদ্দীপকের জামশেদ সাহেবের অনুভূতিতে প্রাণীপ্রীতি ফুটে ওঠায় জামশেদ সাহেব অতিথির স্মৃতি গল্পের সার্থক প্রতিভূ হয়ে উঠেছেন। পশু-পাখির প্রতি ভালবাসা একটি মানবীয় গুণ। সংবেদনশীল মনের মানুষেরা পশু-পাখির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে থাকেন। উদ্দীপকের জামশেদ সাহেব এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক তাঁর বাস্তব দৃষ্টান্ত। উদ্দীপকের জামশেদ সাহেব একজন কৃষি কর্মকর্তা। তিনি তাঁর বাড়ির ছাদে ফলজ গাছ লাগান। সেই গাছগুলোতে পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়। মহৎ হৃদয়ের অধিকারী জামশেদ সাহেব পাখিদেরকে তাড়িয়ে না দিয়ে, তাদেরকে খাবার দেন, আশ্রয় দেন। তাঁর যত্ন ও মমতায় সেখানে দিন দিন পাখির সংখ্যা বেড়ে ওঠে। জামশেদ সাহেবের এমন আচরণে তাঁর মহৎ মনের পরিচয় পাওয়া যায়। পশু-পাখির প্রতি গভীর ভালবাসাও তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠেছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকও জামশেদ সাহেবের মতোই ভিন্ন প্রাণীর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেছেন। দেওঘরে বেড়াতে এসে একটি কুকুরের সাথে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে। লেখক সর্বদা কুকুরটির খোঁজ-খবর রাখেন। এমনকি চাকরদেরকে বলে দেন তারা যেন কুকুরটিকে খাবার দেয়। লেখকের অনুভূতিতে যেমন প্রাণীপ্রীতি ফুটে উঠেছে, উদ্দীপকের জামশেদ সাহেবের অনুভূতিতেও তেমনি পাখির প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পেয়েছে। তাই আমারা বলতে পারি প্রশ্নোত্তর মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
১৭. সৃজনশীল প্রশ্ন: গফুরের প্রিয় গরু মহেশ। মহেশকে সে সন্তানের মতো ভালোবাসত, সে প্রায়ই সময় মহেশের সাথে কথা বলত। নিজে না খেয়ে মহেশকে খাওয়াতো। মহেশ আর বেঁচে নেই কিন্তু গফুর তাকে ভুলতে পারেনি।
ক. কুকুরটি কখন লুকিয়ে বাড়িতে এসেছিলো?
খ.’কী ক্লান্তই না মেয়েটির চোখের চাহনি।’ ব্যাখ্যা করো।
গ.উদ্দীপকে “অতিথির স্মৃতি” গল্পের যে দিকটি বিদ্যমান তা ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপকে “অতিথির স্মৃতি” গল্পের খণ্ডিত চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. কুকুরটি দুপুরবেলা লুকিয়ে বাড়িতে এসেছিলো।
খ. গল্পকথকের এ উক্তিতে একটি দরিদ্র ঘরের রোগাক্রান্ত মেয়ের শারীরিক শোচনীয় অবস্থার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
গল্পকথক দেওঘরে থাকাকালীন বিকেলবেলায় পথের ধারে বসে সময় কাটাতেন। এসময় তিনি পথিকদের মাঝে কিছু বেরিবেরি আক্রান্ত রোগীদের দেখতেন। এদের মধ্যে একটি অল্পবয়সী মেয়ের শরীর ছিল রোগা, চেহারা বিবর্ণ, চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ, চাহনি ছিল করুণ। তার চলার শক্তি ছিল না, অথচ কোলে একটি শিশু। রোগাক্রান্ত মেয়েটির এমন শোচনীয় অবস্থা তুলে ধরতেই গল্পের কথক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
গ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অবলা প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের গফুর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতোই তার পোষা প্রাণীটির প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ করেছে। আদরের গরু মহেশকে সে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। মহেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কারণ প্রিয় প্রাণীটিকে সে পেট পুরে খেতেও দিতে পারে না, যা তাকে সবসময় কষ্ট দেয়। মানুষ কখনো কখনো মানবেতর নানা প্রাণীর সঙ্গে স্নেহ ও প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নানা বাঁধার মুখেও সে তার সেই সম্পর্ক ক হলেদ রঙের বেনে বৌ পাখি একটু দেরি করে আসতো । টিকিয়ে রাখতে চায়। মানবমনের এই অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায় খ বেঁচে যাওয়া খাবারের অংশ একা ভোগ করার জন্য মালি-বৌ কুকুরটির প্রতি লেখকের আচরণে। উদ্দীপকের বর্ণনায় প্রিয় গরু | কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিত মহেশের প্রতি গফুরের আচরণেও তাই প্রকাশ পেয়েছে। কুকুর ও গরু উভয়ের প্রতি মানুষ হিসেবে লেখক ও গফুরের প্রকৃত ভালোবাসাই প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অপরিচিত প্রাণীর প্রতি মমতা অনুভব করার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বায়ু পরিবর্তনে দেওঘর আসলে একটা কুকুরের সাথে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। প্রতিদিন সেই অতিথি কুকুর লেখককে সঙ্গ দিত। লেখকও তাকে বাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা করে দেন। এভাবেই অপরিচিত এক প্রাণীর প্রতি লেখকের মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। উদ্দীপকের গফুর তার প্রিয় পোষা ষাঁড় মহেশের প্রতি নিজের দরদ প্রকাশ করেছে। দরিদ্র বর্গাচাষি গফুর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতো তার পোষা প্রাণীটির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। আট বছর ধরে যে গরুটিকে প্রতিপালন করে বড়ো করেছে। তাকে ঠিকমতো খেতে দিতে না পারায় তার চোখে জল আসে। শুধু মানুষে মানুষে নয়, অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়। পরিবেশ ও ঘটনা আলাদা হলেও সেসব সম্পর্কের মূলে রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসার টান। এদিক বিচারে গল্পের লেখক ও উদ্দীপকের কৃষকের চেতনাগত মিল স্পষ্ট, যদিও তাদের এমন আচরণের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। অপরিচিত পরিবেশে একটি কুকুরের প্রতি লেখকের ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। আর চাষি গফুর তার প্রিয় পোষা গরুটির প্রতি মমতা প্রকাশ করেছে। কিন্তু গল্পে প্রাণীর সঙ্গে মমত্বের সম্পর্ক ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু আছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হয়।
১৮. সৃজনশীল প্রশ্ন: আমাদের গাড়িটা থামতেই একটা লোক ছুটে এলো। যেন এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে এমন একটি ভাব। ছুটে এসে করুণ গলায় বলল, ‘আপনাদের কাছে রক্ত বন্ধ করার কোনো ওষুধ আছে স্যার?’ রীতিমতো অবাক হওয়ার পালা। মেজদা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন, কী দরকার?’ সে বলল, ‘একটা খরগোশ খুব আঘাত পেয়েছে। রক্ত ঝরছে ওটার পা থেকে। আমি খরগোশটিকে ওখানে । রেখে এসেছি। ঔষুধ লাগাতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম।’
ক.কোন পাখি একটু দেরি করে আসত?
খ.মালি-বৌ কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিত কেন?
গ.উদ্দীপকের লোকটির আকুতিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের কোন অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাথে মিল থাকলেও পুরোপুরি এক নয়’— মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো ।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. হলেদ রঙের বনে-বৌ পাখি একটু দেরি করে আসতো।
খ. বেঁচে যাওয়া খাবারের অংশ একা ভোগ করার জন্য মালি-বৌ কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিত।
লেখক চিকিৎসকের আদেশে দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য যান। সন্ধ্যায় ঘুরতে বেরিয়ে তিনি একটা কুকুরকে ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে পেলেন। বাড়িতে ফিরে চাকরকে বলে রাখলেন যে অতিথি কুকুরটাকে যেন খেতে দেয়। লেখক জানতেন না যে, মালি-বৌ বেঁচে যাওয়া খাবারের অংশীদার। নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হওয়ার জন্য মালি-বৌ অতিথিকে তাড়িয়ে দিত।’
গ. উদ্দীপকের লোকটির আকুতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের অনুভূতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে পথের একটি কুকুরের সঙ্গে লেখকের ক’দিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে একটি স্নেহ-মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কুকুরটির প্রতি লেখকের স্নেহ-প্রীতির প্রকাশ নানাভাবে লক্ষ করা যায়। এমনকি দেওঘর থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হলে লেখক কুকুরটির কথা ভেবে ব্যথিত হন। উদ্দীপকের লোকটির মাঝে নিরীহ প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা লক্ষ করা যায়। আহত একটি খরগোশকে বাঁচাতে সে ছোটাছুটি করে, গাড়ির লোকদের কাছে সাহায্য চায়। কাঁদোকাঁদো গলায় সে আহত খরগোশটির জন্য ওষুধ প্রার্থনা করে। এ থেকে প্রাণীর প্রতি লোকটির অকৃত্রিম ভালোবাসাই প্রকাশ পায়। যেমনটি দেখা যায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের চেতনায়। পথের কুকুরটিকে তিনি অতিথির মর্যাদায় বাড়িতে জায়গা দেন। কুকুরটির প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও মমতা অনুভব করেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের লোকটির আকুতি গল্পের লেখকের প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকের আলোচনায় পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার দিকটি ফুটে উঠলেও তা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পকে সম্পূর্ণ অংশে সমর্থন করে না। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে আসলে একটা কুকুরের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। অতিথি হিসেবে কুকুরটিকে খাবার দেওয়া এবং তার প্রতি লক্ষ রাখার মাধ্যমে গড়ে ওঠে এক গভীর সম্পর্ক। লেখকের বিদায় বেলায় অন্যান্যদের সাথে কুকুরটিও তাকে বিদায় জানাতে আসে আর এই স্মৃতিগুলোই পরবর্তী সময়ে লেখকের মনে কল্পনার জন্ম দেয় ৷ উদ্দীপকের লোকটার মধ্যে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মনোভাব পরিলক্ষিত হয়। সে একটি আঘাত পাওয়া খরগোশের ব্যথায় নিজেকে ব্যথিত মনে করে। খরগোশের জীবন বাঁচাতে তার যে চেষ্টা তাতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের জীবপ্রেমের বিষয়টি প্রকাশ পায় । উদ্দীপকের জীবপ্রেমের এই বিষয়টি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল উপজীব্য হলেও গল্পের বিষয় আরো বিস্তারিত। একটা নতুন জায়গায় কীভাবে একজন অসুস্থ মানুষের সাথে একটা কুকুরের সখ্য গড়ে উঠতে পারে তা দেখানো হয়েছে বিভিন্নভাবে। মানুষের ন্যায় প্রাণীর প্রতিও যে মানুষ আন্তরিক হয়ে উঠতে পারে এবং নানা প্রতিকূলতার কারণে সেই আন্তরিকতার সম্পর্ক স্থায়ীরূপ পেতে বাধাগ্রস্ত হয় তাও লেখক দেখিয়েছেন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে। সব মিলিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে জীবের প্রতি ভালোবাসা এবং নির্মমতার যে দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দীপকের আলোচনায় সম্পূর্ণরূপে ফুটে উঠেনি। তাই আমরা বলতে পারি— “উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাথে মিল থাকলেও পুরোপুরি এক নয়” মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯. সৃজনশীল প্রশ্ন: সামান্তার একটি সুন্দর খরগোশ রয়েছে। ধবধবে সাদা, নরম তুলতুলে পা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে খরগোশকে খাবার হিসেবে শাকসবজি, গাজর খেতে দেয়। কিছুক্ষণ খরগোশের দিকে তাকিয়ে তার খাওয়া লক্ষ করে। স্কুল থেকে ফিরে আবার তার যত্ন করে। বিকেলে খরগোশকে নিয়ে খেলা করে। সন্ধ্যায় সামান্তা যখন পড়তে বসে, খরগোশটি তখন তার পায়ের কাছে বসে থাকে। (চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
ক. ট্রেন ছাড়তে আর কত মিনিট দেরি?
খ. সবাই বকশিস পেলেও অতিথি পেল না কেন?
গ. উদ্দীপকের সামান্তার সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. ‘উদ্দীপকে বর্ণিত সামান্তার অনুভূতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়।’ মন্তব্যের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ট্রেন ছাড়তে আর এক মিনিট দেরি।
খ. অতিথি তুচ্ছ ও অবলা প্রাণী হওয়ায় অন্যদর মতো বকশিস তাকে দেওয়া হয়নি। বাড়িরর পোষা প্রাণী মানুষের মতো সেবা করলেও মানুষের ন্যায় অধিকার ভোগ করতে পারে না। অতিথির স্মৃতি গল্পে অসুস্থ লেখ ভ্রমণে চলে গেলেও চাকররা তাকে সেবার করে। কিন্তু লেখকের মনে প্রকৃত আনন্দ দেয় অতিথি কুকুরটি। ভ্রমণ শেষে লেখক চলে আসার সময় কাজের লোকেরা সবাই বকশিস পেলেও তুচ্ছ ও অবলা প্রাণী হওয়ায় কুকুরটির জন্য তা প্রযোজ্য হয়নি।
গ. না প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দীপকের সামান্তর সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সাদৃশ্য রয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখকের আনন্দচিত্তে সময় কাটানোর প্রয়োজন হলে তিনি দেওঘরে বেড়াতে আসেন। এসময় একটি কুকুরের সাথে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে। অবলা প্রাণীটিকে খাবার দিয়ে ও নিজের ঘরে থাকতে দিয়ে লেখক মনের সুখ অনুভব করেন। উদ্দীপকে সামাত্রার ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষ করা যায়। সামান্তা তার অবসর ও আনন্দে কাটানো সময়ে একজন সাথী হিসেবে পোষা খরগোশটিকে বেছে নেয়। তাকে আদর যত্ন করে মনে শান্তি পায়। একইভাবে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকও কুকুরের যত্ন করে মনের প্রশান্তি খুঁজে পায়। একদিন লেখক বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার সময় কুকুরটি ঘরে ঢুকে তার কাছে গিয়ে ল্যাজ নাড়াতে থাকে। উদ্দীপকেও খরগোশটি সামান্তার পায়ের কাছে বসে থাকে। এভাবে দেখা যায় উদ্দীপকে সামান্তার ও অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের অনলা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ একইরকম। এ ধরনের মানবিক চরিত্র তথা পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা উদ্দীপকের সামান্তা ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখককে এক বিন্দুতে মিলিত করে।
ঘ. ‘অতিথির স্মৃতি’ গঞ্জের লেখকের আনন্দ বেদনার স্মৃতির সাথে উদ্দীপকের সামান্তার অনুভূতি সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে অসুস্থ লেখক সময় কাটানোর সঙ্গী হিসেবে একটি কুকরকে আদর যত্ন ও লক্ষণ দেয়। এতে আনন্দচিত্তে তার দিন কাটে। কিন্তু ছুটি কাটানোর সময় শেষ হলে লেখককে অতিথি কুকুরটিকে ফেলে চলে আসতে হয়। এতে সুখের পাশাপাশি হারানোর বেদনাও লেখককে আচ্ছন্ন করে। উদ্দীপকে সামান্তাও লেখকের মতোই একটি পোষা প্রাণীকে অবসরের সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। তার পড়ার সময় প্রাণীটি পাশে বসে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তা সামান্তাকে আনন্দ দেয়। কিন্তু সামান্তাকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতো এমন প্রিয় সঙ্গীকে হারাতে হয়নি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে যেখানে পোষা প্রাণীর মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে নিবিড় মমত্মবোধ সেখানে মানুষের মধ্যে দেখা যায় স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতা। তাছাড়া গল্পে আরও কিছু প্রাণী ও দুর্দশাগ্রস্ত কিছু মানুষ লেখকের অনুভূতিতে নাড়া দেয় যা উদ্দীপকে সামান্তার মধ্যে দেখা যায় না। অর্থাৎ ছুটি কাটানোর সময় লেখক মানুষ ও কিছু প্রাণীর বিচিত্র আচরণের সাক্ষী হয় যার একটি মাত্র ঘটনার সাথে সামান্তার সাদৃশ্য থাকলেও লেখকের সামগ্রিক অনুভূতির সাথে পুরোপুরি এক নয়।
২০.সৃজনশীল প্রশ্ন: আরিফ একটি গাভী পোষে, তার নাম শ্যামলী। আরিফ তার খুব যত্ন করে। তাকে ঘাস ও খড় খাইয়ে নাদুস-নুদুস করে তুলেছে। সে শ্যামলীকে খুব ভালোবাসে। চোরেরা একদিন শ্যামলীকে চুরি করে নিয়ে গেলে শ্যামলীর শোকে আরিফ অসুস্ত হয়ে যায়।
ক. ‘বড়দিদি’ উপন্যাস কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়?
খ. লেখকের সত্যিকারের ভাবনা ঘুচে গেল কীভাবে?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটির সাদৃশ্য আছে তা বর্ণনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সামগ্রিক দিকটি “তুলে ধরেনি”— বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘বড়দিদি’ উপন্যাস ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
খ. বেনে বৌ পাখি দুটোকে ফিরে আসতে দেখে লেখকের সত্যিকারের ভাবনা ঘুচে গেল ।
লেখক যখন দেওঘরে ছিলেন তখন প্রতিদিন ভোরে পাখিদের কলকাকলিতে তার ঘুম ভাঙত। হলদে রঙের একজোড়া বেনে-বৌ পাখি প্রাচীরের ধারের ইউক্যালিপটাস গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালটায় বসে প্রতিদিন হাজিরা হেঁকে যেত। কিন্তু হঠাৎ করে দিন। দুয়েক পাখি দুটো না আসায় ব্যাধেরা ধরে নিয়ে গেছে ভেবে লেখক শঙ্কিত হন। কিন্তু তিন দিনের মাথায় যখন পাখি দুটো ফিরে এলো তখন লেখকের সত্যিকারের ভাবনা ঘুচে গেল।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের প্রাণীপ্রীতির দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে ।’অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানবেতর প্রাণীর সঙ্গে একজন মানুষের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠার চিত্র দেখা যায়। উদ্দীপকেও ভিন্ন প্রাণীর প্রতি মানুষের গভীর মমত্ববোধের দিকটি ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে একটি প্রাণীর প্রতি মানুষের গভীর ভালবাসার পরিচয় পাওয়া যায়। উদ্দীপকের আরিফ তার পোষা গাভী শ্যামলীকে খুবই যত্ন করে। তাকে খড় ও ঘাস খাইয়ে নাদুস-নুদুস করে তোলে। তার প্রিয় গাভীটি চুরি হয়ে গেলে তার বিচ্ছেদে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পেও লেখকের সাথে একটি কুকুরের স্নেহপ্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লেখক কুকুরটিকে খেতে দিতেন, খোঁজখবরও নিতেন। দেওঘর থেকে ফেরার সময় কুকুরটির বিচ্ছেদের ব্যথায় তিনি কাতর হয়ে পড়েন। প্রাণীর প্রতি এমন গভীর ভালোবাসার দিক দিয়ে উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের একটি বিশেষ দিককে প্রকাশ করলেও সামগ্রিক দিকটি তুলে ধরেনি। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে মানুষের সঙ্গে মানবেতর প্রাণীর ভাব বিনিময়ের একটি চমৎকার চিত্র ফুটে উঠেছে। লেখক শারীরিক সুস্থতার জন্য দেওঘরে গেলে সেখানে একটি কুকুরের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। বিদায়কালে অতিথির ঐ খণ্ডস্মৃতি লেখককে আবেগাপ্লুত করে তোলে। একই চিত্র আমরা উদ্দীপকেও দেখতে পাই। উদ্দীপকের আরিফ একটি গাভী পোষে। আদর করে প্রিয় গাভীটির নাম রাখে শ্যামলী। শ্যামলীর প্রতি আরিফ খুবই যত্নবান। সে শ্যামলীকে নিয়মিত ঘাস খড় খাইয়ে গাভীটিকে মোটাতাজা করে তোলে। সর্বদা সে গাভীটির খেয়াল রাখে। গাভীটিকে সে প্রাণাধিক ভালোবাসে। কিন্তু হঠাৎ একদিন চোরে গাভীটি চুরি করে নিয়ে গেলে প্রিয় শ্যামলীর বিচ্ছেদে আরিফ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ‘অতিথির স্মৃতি’ এবং আলোচ্য উদ্দীপকে ভিন্ন প্রাণীর সাথে মানুষের স্নেহ প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠার দিকটি ফুটে উঠেছে। কিন্তু ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের বক্তব্য আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। মানবেতর প্রাণীর প্রতি মানুষের নির্মম আচরণের দৃশ্যও আলোচ্য গল্পে উপস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে এ বিষয়টি আসেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কিছু অংশের প্রতিনিধিত্ব করলেও সামগ্রিক দিকটি তুলে ধরেনি।