১. সৃজনশীল-প্রশ্ন: ঐতিহ্যবাহী ফুলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির | গ উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়হীনতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। শিক্ষার্থী শাহানা তার বিদ্যালয়ের সুনাম নিয়ে গর্ব করে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষ অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার ব্যাপারটি তাকে ভীষণ পীড়া দেয়। বিষয়টি শ্রেণিশিক্ষককে জানালে তিনি পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তার ওপর উদ্দীপনামূলক এক বক্তৃতা করেন এবং ছুটির পর সবাইকে থাকতে বলেন। চরম উত্তেজনা নিয়ে সবাই অপেক্ষা করে, কিন্তু স্যারের দেখা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল— তিনি বাসায় চলে গেছেন। শাহানা মর্মাহত হয় এবং বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকে। পরদিন পরিকল্পনামাফিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকে সে কয়েকটি দলে ভাগ করে এবং ছুটির পর পালাক্রমে এক একটি দল শ্রেণিকক্ষটি পরিষ্কার করতে শুরু করে। তারা শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে বিভিন্ন মনীষীর ছবি টানিয়ে দেয়। ফলে শ্রেণিকক্ষটি আকর্ষণীয় ও পাঠের উপযোগী হয়ে ওঠে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাহানাদেরকে ভীষণ প্রশংসা করেন এবং পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন।
ক. দশচক্রে ভগবান ভূত’ কথাটির অর্থ কী?
খ. ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ‘পুষ্পবিহীন সৌরভ’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “শ্রেণিশিক্ষক নন, শাহানাই কাজী নজরুল ইসলামের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব” – ‘ভাব ও কাজ’ বন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করো ।
১. সৃজনশীল উত্তর:
ক. “দশচক্রে ভগবান ‘ভূত’ কথাটির অর্থ— দশজনের চক্রান্তে সাধুও অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে, অর্থাৎ বহুলোকের ষড়যন্ত্রে অসম্ভবও সম্ভব হয়।
খ.ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ‘পুষ্পবিহীন সৌরভ’ বলতে বোঝানো হয়েছে— ভাব আবেগনির্ভর অবাস্তব উচ্ছ্বাসমাত্র। মানুষকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে তা যদি কাজের সঙ্গে গেঁথে দেওয়া না যায় তাহলে তা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আবার কোনো কাজের জন্য যে যে পরিমাণ ভাব প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি হলেও তা বিফলে যায়। তাই কেবল ভাবে আচ্ছন্ন হলেই চলবে না, তাকে কাজের সঙ্গেও সম্পৃক্ত করতে হবে। আত্মশক্তি অর্জনে ভাব ও কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন অপরিহার্য। অর্থাৎ ভাব হলো এমন জিনিস যা চোখে দেখা যাবে না কিন্তু তার সৌরভ অনুভব করা যাবে। সুতরাং ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে পুষ্পবিহীন সৌরভ বলতে ভাবের এই আবেগনির্ভর অবাস্তব উচ্ছ্বাসকেই বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়হীনতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখকের মতে, ভাব মানুষের জাগরণের উপকরণ। মানুষের মনকে জাগিয়ে তুলতে গেলে ভাবের প্রয়োজন হয়। আর সেই মানুষকে তার নিজের, পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের ও জাতির জন্য যথাযথভাবে গড়ে তুলতে হলে তাকে অবশ্যই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে মানুষকে ভাব দিয়ে জাগিয়ে কর্ম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়সাধন করতে হবে। কাউকে অযথা ভাবে মাতোয়ারা করা যাবে না, কারণ তাতে স্পিরিট নষ্ট হয়। উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তার ওপর বক্তৃতা দিয়ে তাদের ভাবে মশগুল করে ফেলে। তাদের মধ্যে যখন কাজ করার জন্য চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে তখন স্কুলশিক্ষকও বাড়ি চলে যায়। এতে এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের মধ্যে ভাব ও কাজের সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় না, যা স্পিরিটের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের শ্রেণিশিক্ষকের মধ্যে ভাবের সাথে কাজের সমন্বয়হীনতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ভাবের সঙ্গে কাজের সমন্বয় সাধনের যে গুরুত্বের কথ বলেছেন তা উদ্দীপকের শাহানার মধ্যে ফুটে ওঠায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ । ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম ভাবের উচ্ছ্বাসে উদ্বেল হওয়া নয়, ভাবের সঙ্গে পরিকল্পিত কর্মশক্তি ও বাস্তব উদ্যোগের প্রয়োজন সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি মনে করেন ভাবের দ্বারা মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায়, কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যে কোনো ভালো উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রবন্ধটিতে লেখক দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। উদ্দীপকের শাহানা উপলব্ধি করে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয়তা। এ বিষয়ে সে শ্রেণিশিক্ষকের সাথে কথা বলে। কিন্তু শ্রেণিশিক্ষক যখন তার বক্তব্য অনুযায়ী কাজ না করে বাড়ি চলে যায় তখন সে মর্মাহত হলেও বিষয়টি নিয়ে নিজের পরিকল্পনামতো কাজ করে শ্রেণিকক্ষের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের শাহানা কাজী নজরুল ইসলামের দেখানো পথে চলেছে। অর্থাৎ ভাব ও কাজের সমন্বয় সাধন করেছে। কিন্তু শ্রেণিশিক্ষক সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই বলা যায়, ‘শ্রেণিশিক্ষক নন, শাহানাই কাজী নজরুল ইসলামের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিত্ব’— ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ ।
২. সৃজনশীল-প্রশ্ন: কাজ নয়, কথায় আশরাফ হোসেনের জুড়ি মেলা ভার! মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করাই তার কাজ। লোকজন প্রথম প্রথম উৎসাহিত বোধ করলেও কথাসর্বস্ততার জন্য কেউ-ই এখন আর তাঁর ডাকে সাড়া দেয় না।
ক. ‘লা-পরোয়া’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘ দশচক্রে ভগবান ভূত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যগত দিকটি ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. আশরাফ হোসেনের ডাকে লোকজনের সাড়া না দেওয়ার কারণ ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
২. সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘লা-পরোয়া’ শব্দের অর্থ গ্রাহ্য না করা।
খ. দশজনের চক্রান্তে সাধু ব্যক্তিও অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে বোঝাতে প্রাবন্ধিক উক্ত প্রবাদটির ব্যবহার করেছেন।
সমাজের মানুষ হুজুগের বশে অনেক সময়ই ভুলকে সঠিক ভেবে গ্রহণ করে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তিসমষ্টি সাধু ব্যক্তিকেও অসাধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মানুষের হুজুগে স্বভাবের সুযোগ নিয়ে সবাই মিলে অপপ্রচার চালিয়ে সেটিকে তারা বাস্তবরূপও দিতে চায়। অনেকের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে অসম্ভবও সম্ভব হয়— এটিই আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
গ. উদ্দীপকে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবগত দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।মনের চিন্তা ও পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করলে সফল হওয়া যায়। সারাদিন চিন্তা করেও যদি কাজে নামা না যায় তাহলে তা অলীক কল্পনা হিসেবে পরিগণিত হয়। এরূপ লোকের কথা কেউ শোনে না।উদ্দীপকে আশরাফ হোসেনকে দেখা যায় সে কথা সর্বস্ব মানুষ। তার কথার সাথে কাজের মিল নেই। সে তার কথা অনুসারে কাজ না করায় মানুষ বিশেষ উপকৃত হয় না। তাই তারা আশরাফের কথায় সাড়া দেয় না। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও বলা হয়েছে যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব আছে তবে শুধু ভাব দিয়ে মহৎ কাজ হয় না। সুতরাং উদ্দীপকে ভাব সর্বস্ব আশরাফকে দিয়ে কোনো কাজ হয়নি। এটি প্রমাণ করে যে, উদ্দীপকের মূল বিষয়ের সাথে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবগত বিষয়ের সাদৃশ্য আছে।
ঘ. ভাব ও কাজের মধ্যে মিল না থাকায় উদ্দীপকে আশরাফহোসেনের ডাকে লোকজন সাড়া দেয়নি। ভাব দিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করলেই মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় না। এ জন্য কর্মশক্তি ও উদ্যোগের প্রয়োজন। এ দুয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে ভালো উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। উদ্দীপকে আশরাফ সাহেব সুন্দর কথার মাধ্যমে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। এটি তার একটি প্রশংসনীয় কাজ হলেও এ দ্বারা কোনো মহৎ কাজ পরিপূর্ণ হয়ে যায় না। তাকে কথার সাথে কাজের সমন্বয় ঘটাতে হতো। এটি করতে পারলেই ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু যেমন ফুটে উঠত তেমনি মানুষ উপকৃত হয়ে তার ডাকে সাড়া দিত । উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে আশরাফের কাজ ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবসর্বস্ব বিষয় যা বাস্তবধর্মী নয়। এ জন্য আশরাফের ডাকে লোকজন সাড়া দেয়নি।
৩.সৃজনশীল প্রশ্ন: জনাব ইসলাম বিভিন্ন স্কুল-কলেজে গরবি-দুঃখী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর সহায়তা করেন গোপনে। লোক দেখানো কোনো কিছু করাকে তিনি অপছন্দ করেন। অথচ তাঁর পাশের প্রতিবেশী মজিবর শুধু ভাবেন তিনি সহায়তা করবেন কিন্তু তা কার্যে পরিণত করেন না ।
ক. কত বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সাধনায় ছেদ ঘটে?
খ. ভাবকে ‘অবাস্তব উচ্ছ্বাস’ বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের জনাব ইসলামের কর্মকাণ্ড ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
ঘ. উদ্দীপকের মজিবর ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কোন দিককে প্রতিনিধত্ব করে? মূল্যায়ন করো।
৩. সৃজনশীল উত্তর:
ক. তেতাল্লিশ বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সাধনায় ছেদ ঘটে।
খ. মনের কল্পনা থেকে সাময়িক উত্তেজনা প্রকাশ করে বলেই ভাবকে অবাস্তব উচ্ছ্বাস বলা হয়েছে।
মানুষের মন স্বভাবতই কল্পনাপ্রবণ ও স্বপ্নবিলাসী। এই কল্পনা মানুষের মধ্যে সাময়িক একটি প্রণোদনা সৃষ্টি করে। লেখক এই প্রণোদনাকেই বলেছেন ভাব; যা পরিপূর্ণ হয় কাজের মাধ্যমে। কাজ বিহীন ভাবের কোনো বাস্তবিক স্থান নেই। সে কারণে লেখক একে অবাস্তব উচ্ছ্বাস বলেছেন ।
গ. ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধের বক্তব্য অনুসারে উদ্দীপকের জনাব ইসলাম ভাবকে কর্মে রূপ দিতে সমর্থ হয়।
ভাব ছাড়া মানুষের আত্মা জাগে না। কিন্তু ভাবের দাস হয়ে পড়লে মানুষের কর্মশক্তি হারিয়ে যায়। সে কারণে লেখক মানুষকে কর্মের ধরলে তার বাস্তবিক কোনো মূল্য থাকে না বলেই লেখক মনে দাস হতে বলেছেন। মনের ভাবকে কর্মের মাধ্যমে সামনে তুলে না করেন। উদ্দীপকে জনাব ইসলাম খুব অল্প পরিকল্পনা করেন। কিন্তু যতটুকু তিনি ভাবেন, সবটুকুকেই কর্মে রূপ দেন। অর্থাৎ জনাব ইসলাম ভাব ও কাজের মধ্যে দূরত্ব দূর করে সমন্বয় সাধন করতে পেরেছেন। সে কারণে তাঁর মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে কর্মে রূপান্তরিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের মজিবর ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবের নিয়ন্ত্রণহীনতার দিককে প্রতিনিধিত্ব করে। কাজী নজরুল ইসলাম ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধে মানুষকে লাগামহীনভাবে কল্পনাবিলাসী হতে নিষেধ করেছেন। সেই সাথে সঠিক পরিকল্পনার ওপরও জোর দিয়েছেন। তা না হলে মানুষ – লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় এবং অযাচিতভাবে নিজের শক্তিকে নষ্ট করে। উদ্দীপকে নজরুলের বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটেছে। মজিবর সারাদিন নানা ধরনের কাজের পরিকল্পনা করেও বাস্তবিক প্রয়োগে অসমর্থ হয়। কিন্তু জনাব ইসলাম খুব অল্প পরিকল্পনা করেও সফলতা লাভ করেন। কারণ তাঁর ভাব ও কর্মের মধ্যে একটা সমন্বয় রয়েছে। উদ্দিষ্ট আলোচনার শেষে বলা যায়, উদ্দীপকের মজিবর কল্পনাবিলাসী এবং দক্ষ পরিকল্পনা গ্রহণে অপটু। তাই সে নানা পরিকল্পনা করেও সফলভাবে কর্ম সম্পাদন করতে পারে না। এক্ষেত্রে মজিবর তার আত্মার শক্তিকে প্রতিনিয়তই নষ্ট করছে। কারণ ভাবের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও অদক্ষ পরিকল্পনা মানুষের আত্মার শক্তি নষ্ট করে। উদ্দীপকের মজিবরের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে বলেই আমি মনে করি।
৪. সৃজনশীল প্রশ্ন:
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ।
ক. যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে তাকে কেমন হতে হবে?
খ. ‘গরমাগরম কার্যসিদ্ধি’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে উল্লিখিত ছেলেটির পণই ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের লেখকের আহ্বানে ধ্বনিত হয়েছে”– মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো ।
৪. সৃজনশীল উত্তর:
ক. যিনি ভাবের বাঁশি বাজিয়ে জনসাধারণকে নাচাবেন তাকে নিঃস্বার্থ ত্যাগী ঋষি হতে হবে।
খ. গরমাগরম কার্যসিদ্ধি বলতে লেখক তাৎক্ষণিকভাবে কাজ আদায় করে নেওয়াকে বুঝিয়েছেন। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে নজরুল ভাব ও কাজে সমান তৎপরতার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ভাব আত্মশক্তি হিসেবে কাজ করে, তাই ভাবকে কাজের দাসরূপে নিয়োগ করতে বলেছেন। তাছাড়া শুধু ভাব দিয়ে কাজ আদায় করতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কারণ বিলম্ব হলে সে কাজ পরে আদায় নাও হতে পারে।
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বর্ণিত ভাবকে কাজে পরিণত করার আহ্বানের প্রসঙ্গকে নির্দেশ করে । কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ভাব ও কাজের পারস্পরিক সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কেবল ভাবাবেগকে সম্বল করে জীবনে সাফল্য অর্জন করা যায় না। তাই ভাবাবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কর্মে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি এমন ছেলের প্রত্যাশা করেছেন, যারা কথার চেয়ে কাজে বেশি বড় হবে। কেননা, কথার মধ্য দিয়ে সফলতা অর্জন করা যায় না। কাজের সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃত সফলতা অর্জিত হয়। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনের জন্য ভাব ও কাজ এ দুয়ের মাঝে যোগসূত্র স্থাপনের কথা বলেছেন। ভার জিনিসটা অবাস্তব উচ্ছ্বাস হলেও কাজের স্পৃহা সৃষ্টিতে এর দরকার আছে। উদ্দীপকেও কবি, ভাবের চেয়ে কাজে বেশি বড় হতে বলেছেন। অর্থাৎ সেখানে ভাব ও কাজের উপযুক্ত সমন্বয়ের কথা বলেছেন কবি। এতেই প্রকৃত সফলতা নিহিত। আর এটিই উদ্দীপকের সঙ্গে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।
ঘ. ঘ“উদ্দীপকের উল্লিখিত ছেলেটির পণই ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধ- লেখকের আহ্বানে ধ্বনিত হয়েছে”- মন্তব্যটি যথার্থ।
‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম কর্মী, ভাবুক ও ত্যাগীর স্বরূপ নির্ণয় করেছেন। ভাবাবিষ্ট ব্যক্তিমাত্রই কর্মী নন, আবার কর্মী মাত্রই ত্যাগী নন। এ তিনের সমন্বয় সাধনের মধ্য দিয়েই একজন আদর্শ মানুষ গড়ে ওঠে বলে লেখক মনে করেন। এ নিবন্ধে তিনি আত্মশক্তিতে বলীয়ান এ কারণে মানুষেরই সন্ধান করেছেন।উদ্দীপকে এমন এক ছেলের কথা বলা হয়েছে যে কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হবে। অর্থাৎ ভাবাবিষ্ট না হয়ে সত্যিকারের কর্মী হয়ে উঠবে। নজরুল কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ হওয়ার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তা ছেলেটির সংকল্পের মধ্য দিয়েই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে।উদ্দিষ্ট আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, উদ্দীপকের ছেলেটি কর্মের মধ্য দিয়ে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে চেয়েছে। নজরুল এরকম মানুষেরই সন্ধান করেছেন তাঁর প্রবন্ধে। তাই কর্মী হওয়ার ওপর তিনি অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। উদ্দীপকে বর্ণিত ছেলেটির ভূমিকাও কর্মী হিসেবে। এ বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।
৫. সৃজনশীল প্রশ্ন: সোহেল প্রায়ই বলে জেএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পাবে। এরপর বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে নজরুল ভাব ও কাজে সমান তৎপরতার । একদিন সে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হবে। মেডিকেল থেকে পাস ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছেন। কাজ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ভাব করে বড় ডাক্তার হিসেবে সারা দেশে নিজেকে এক নামে পরিচিত আত্মশক্তি হিসেবে কাজ করে, তাই ভাবকে কাজের দাসরূপে করে তুলবে। কিন্তু জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য নিয়োগ করতে বলেছেন। তাছাড়া শুধু ভাব দিয়ে কাজ আদায় | যেরূপ পড়াশোনা করা দরকার সোহেল তা করে না। অথচ করতে চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন | জিপিএ-৫ এর স্বপ্নে সে বিভোর তিনি। কারণ বিলম্ব হলে সে কাজ পরে আদায় নাও হতে পারে।
ক.গরমাগরম কার্যসিদ্ধি না করালে ভাবাবেশ কীসের মতো উড়ে যায়?
খ. ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে এদেশকে প্রাবন্ধিক ভাবপাগল দেশ বলেছেন কেনন?
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কোন দিকটিকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “উদ্দীপকে প্রকাশিত দিকটিই ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়।”— ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
৫. সৃজনশীল উত্তর:
ক. গরমাগরম কার্যসিদ্ধি না করালে ভাবাবেশ কর্পূরের মতো উড়ে যায়।
খ. এদেশের মানুষ খুব সহজেই ভাবের দ্বারা উদ্বেল হয়ে ওঠে । প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয় । বলে এদেশকে ভাবপাগল বলা হয়েছে। ভাবের দ্বারা মানুষের কোমল জায়গায় ছোঁয়া দিলেই মানুষকে কব্জা করা যায়। তাই ভাব জিনিসটার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশের মানুষকে ভাবের উচ্ছ্বাসে উদ্বেল করা সহজ। তাই প্রাবন্ধিক এদেশকে ভাবপাগল দেশ বলেছেন।
গ. ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের লেখক বলেছেন, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কেবল ভাব দিয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। কর্মশক্তি এবং সঠিক উদ্যোগ ছাড়া ভাব দ্বারা কার্যসিদ্ধি করা যায় না। তাই কেবল ভাবে মশগুল হয়ে থাকলে আত্মার শক্তি মরে গিয়ে সকল উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যায়। উদ্দীপকের সোহেলের মধ্যে ভাবে মশগুল থেকে কর্মে অবহেলা করার দিকটি দেখানো হয়েছে। সে তার বন্ধুদের কাছে বলে যে সে জেএসসিতে জিপিএ-৫ পাবে। এরপর বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ডাক্তার হিসেবে সুনাম করবে। কিন্তু এত অর্জনের জন্য যে কর্মপরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম দরকার তা সে করে না। অর্থাৎ সে ভাবে বিভোর হয়ে নিজের কর্মপরিকল্পনা নষ্ট করে আত্মার শক্তিকে নষ্ট করে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও বলা হয়েছে শুধু ভাবে মশগুল থাকলে উদ্যোগকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা যায় না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবে মশগুল হয়ে থাকার দিকটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে প্রকাশিত দিকটিই ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়’— উক্তিটি যথার্থ। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, ভাব ও কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। কর্মকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু শুধু ভাব দিয়েই মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। ভাবের দ্বারা মানুষের মনকে জাগিয়ে তোলা যায় কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও কাজের স্পৃহা ছাড়া যে কোনো ভালো উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ভাবে না মজে গিয়ে ভালো করে চিন্তা করতে হবে এবং কাজে সম্ভাবনা ও অসম্ভাবনা বিবেচনা করে কাজে নামতে হবে ।উদ্দীপকের সোহেলের কেবল ভাবে মশগুল হয়ে থাকার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তোলার দিকটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে কেবল কাজের সম্ভাবনা ও অসম্ভাবনা বিচার করে কাজে নেমে কাজের উৎসাহকে সার্থক করতে হবে যা উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে প্রকাশিত দিকটিই ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের একমাত্র দিক নয়।
৬. সৃজনশীল প্রশ্ন: আত্মোন্নতির জন্য পরিশ্রম এবং উদ্যম অপরিহার্য। সততার ভেতর দিয়ে যেমন সত্তার মহিমা উদ্ভাসিত হয়, কাজের মাধ্যমেও তেমনি সমাজে স্বনির্ভর মানুষের অফুরন্ত শক্তির প্রকাশ ঘটে। দুঃখ হয় তখন, যখন দেখি উদীয়মান যুবকের মধ্যে উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাবে মশগুল হয়ে থাকার সম্ভাবনাময় শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা পরানুগ্রহের মোহে দুয়ারে দুয়ারে দিকটি নির্দেশ করে। চাকরির জন্য মাথা কুটে মরছে।
ক. ‘ঋষি’ কাকে বলে?
খ. “সাপ লইয়া খেলা করিতে গেলে তাহাকে দস্তুরমতো সাপুরে হওয়া চাই।”- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কোন দিককে নির্দেশ করছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের মূলভাব এবং ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের মূলভাব একসূত্রে গাঁথা। মন্তব্যটির যথার্থতা প্রমাণ করো।
৬. সৃজনশীল উত্তর:
ক. ‘ঋষি’ বলা হয় শাস্ত্রজ্ঞ তপস্বী, মুনি ও যোগীকে।
খ. যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য প্রচুর দক্ষতা প্রয়োজন— এ বিষয়টির ইঙ্গিত করে আলোচ্য উক্তিটি করা
হয়েছে। ভাব ও কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। শুধু আবেগ আর ভাবনায় কোনো কাজ সমাধান করা যায় না। বাস্তব পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতায় ভাবকে কাজে পরিণত করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন। সাপুড়ে না হয়ে সাপ নিয়ে খেলা করা যেমন বিপজ্জনক, তেমনি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন ছাড়া কাজে সফলতার চিন্তা অবান্তর। সমাজ সংগঠন বা সমাজ উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির প্রচুর অভিজ্ঞতা, আন্তরিকতা ও প্রাণশক্তি থাকলেই তার আহ্বানে তরুণ সমাজ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আত্মনিয়োগ করবে। এমন চেতনা বিকাশের লক্ষ্যেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রব বিস্তৃত পি আত্মপত্তি জাগ্রত করার দিকটি নির্দেশ করছে। পার্থিব জীবনে সফলতার সোনার কাঠি পেতে হলে ভাতের সঙ্গে আত্মার শক্তি ও নিজের কর্মশক্তির সমন্বয় ঘটাতে হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অদম্য প্রাপ্তি যা করে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবনে আমাদের তারুণ্য শক্তিকে পরনির্ভরতার পরিবর্তে আপত্তি অর্জন ও প্রয়োগের প্রতি পুরারোপ করা উদ্দীপকে আধারতির জন্য পরিশ্রম ও উদ্যমকে অপরিহার্য বলা হয়েছে। সততা ও স্বনির্ভর মানুষের অন্ত শক্তির বিকাশ ঘটে। কিন্তু আমাদের উদীয়মান মূনকের মধ্যে সম্ভাবনাময় শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা পরানুগ্রহের মোহকে আঁকড়ে ধরে আছে। ভাব ও কাজ’ প্রবন্যেও লেখক আমাদের দেশের প্রাণশক্তি তরুণ সমাজকে তাদের নিজম স্পিরিটকে কাজে লাগিয়ে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। পরনির্ভরতাকে লেখক কাপুরুষতার সঙ্গে তুলনা করেছে। অনুগত করার প্রেরণা যুগিয়েছেন। স্পিরিট বা আ জাগিয়ে তুলে লেখক তরুণ সমাজকে পরানুল্লাহ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই পরনির্ভরতা নয়, আত্মশক্তি জানত করার চেতনা প্রকাশের দিক থেকে উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধটি সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. পরানুগ্রহ নয়। আত্মশক্তি বিকাশে আত্মনির্ভরতা অর্জনের মূলভাবটি উদ্দীপক ও ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে সমভাবে প্রকাশিত হয়েছে।মানুষের আত্মোন্নতির মূলে রয়েছে তার যথাযথ মশক্তির জাগরণ। কর্মশক্তির সঠিক বাস্তবায়নে মানবজীবন সফল হয়ে ওঠে। এর বিপরীতে পশ্চাৎমুখিতা বা পরনির্ভরতা মানুষের জীবনকে বিফল ও অপমানজনক করে তোলে। এমন দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জীবন ঘটেছে উদ্দীপক ও ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে।উদ্দীপকে পরিশ্রম ও উদ্যমকে আত্মোন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত বলা হয়েছে। সততা ও আত্মশক্তি বিকাশের মাধ্যমে মানুষ স্বমহিমায় উজ্জ্বল ও অফুরন্ত শক্তি লাভ করে। কিন্তু উদীয়মান যুবকের সম্ভাবনাময় শক্তি থাকা সত্ত্বেও পরানুগ্রহের মোহকে এখানে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও আত্মশক্তি বিকাশের জন্য ভাব ও কাজের বাস্তবসম্মত সমন্বয় ঘটানোর কথা বলা হয়েছে। পরনির্ভরতার পরিবর্তে উদ্যম, সততা ও কর্মনিষ্ঠায় পরিকল্পনাভিত্তিক তারুণ্যশক্তির জাগরণ কামনা করা হয়েছে এখানে। তারুণ্যশক্তি ও কর্মশক্তির বাস্তব প্রতিফলনই প্রবন্ধের মূলকথা।’ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের মূলকথা বা মূলভাবই অভিন্ন চেতনায় উদ্দীপকের মূলভাবে পরিস্ফুট হয়েছে। ব্যক্তি ও জাতির উন্নতি নির্ভর করে শক্তির জাগরণ ও কর্মনিষ্ঠার উপর। এমন অভিব্যক্তি প্রকাশের কারণে সার্থকভাবে বলা যায়, উদ্দীপকের মূলভাব ও ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের মূলভাব একসূত্রে গাঁথা।
৭. সৃজনশীল প্রশ্ন:
প্রতিরাতে জনসেবার ব্রত নিয়ে ঘুমোতে যায় অমল। কিন্তু সকালে ওঠার পর তার সে ব্রত আর বাস্তবে রূপ পায় না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠে সে। আবার সন্ধ্যা থেকে জনসেবার ভাবনা তার মাথায় চেপে বসে। (জামালপুর জিলা স্কুল)
ক. মানুষকে মাতিয়ে তোলা যায় কী দিয়ে?
খ. কর্মশক্তি মানুষের জন্য তাৎপর্যময় কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে অমল ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধের কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. অমলের উক্ত মতাদর্শ ব্যক্তির বাস্তবিক সাফল্যের অন্তরায় ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন করো।
৭. সৃজনশীল উত্তোর:
ক. মানুষকে মাতিয়ে তোলা যায় ভাব দিয়ে।
খ.কর্মশক্তি ছাড়া মানুষের ভাবাবেগ বাস্তবিকরূপ পায় না বলেই তা এতো তাৎপর্যময়। ভাব মানুষকে যেকোনো বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু ভাবের মধ্যে নিমজ্জিত থেকে বাস্তবিক কোনো ফললাভ হয় না। তাই প্রয়োজন হয় কর্মশক্তির; কারণ কর্ম না করলে ভাবের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একারণে ভাবের সঙ্গে মানুষকে কর্মের সমন্বয় ঘটাতে হয়। তাই কর্মশক্তি এতো তাৎপর্যময়।
গ. উদ্দীপকের অমল ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধে বর্ণিত ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। ভাব ও কাজ’ নিবন্ধের লেখক মনে করেন, মানুষের মনকে জাগিয়ে তুলতে ভাবের প্রয়োজন আছে। কিন্তু শুধু ভাবের কোনো মূল্য নেই। ভাবকে কাজে পরিণত করতে হয়। ভাবকে কাজে রূপ দিতে পারলেই কেবল লক্ষ্য অর্জিত হয়। অর্থাৎ কাজের মাধ্যমেই ভাব রূপায়িত হয় । উদ্দীপকের অমলের মাঝে ভাব ও কাজের সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যায়। সে প্রতিরাতে জনসেবার ব্রত নিয়ে ঘুমাতে গেলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকে। কাজহীন ভাবের কোনো মূল্য না থাকায় অমলের ভাবনা বাস্তবরূপ লাভ করতে পারেনি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের অমল ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধে বর্ণিত ভাবমগ্নতায় বিশ্বাসী।
ঘ.অমলের মতাদর্শ ব্যক্তির বাস্তবিক সাফল্যের অন্তরায়’— ‘ভাব ও কাজ’ নিবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ। ভাব ও কাজ’ নিবন্ধে উল্লিখিত কাজ ছাড়া ভাব মূল্যহীন। ভাব ও কাজের সমন্বয় ঘটলেই কেবল তা সার্থকতা লাভ করে। অনেক সময় কাজের চেয়ে ভাব বড় হয়ে ওঠে তখন আশানুরূপ ফল লাভ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ কাজের সঙ্গে ভাবের মিল না থাকলে হিতে বিপরীত হয়।
উদ্দীপকের অমল ভাবসমুদ্রে সাঁতার কাটছে। ভাবের সাথে তার কাজের কোনো মিল নেই। এ কারণেই রাতের বেলায় জনসেবার ব্রত নিলেও দিনের বেলায় সব ভুলে যায় সে। ভাব ও কাজের এই সমন্বয়হীনতার কারণেই তার লক্ষ্য অর্জিত হয় না। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ভাব ও কাজ এই দুইয়ের সমন্বয়ে কাজ করলেই সফলতা অর্জন করা যায়। কিন্তু উদ্দীপকের অমল সে অনুযায়ী কাজ না করায় তার লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। আলোচ্য ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
৮. সৃজনশীল প্রশ্ন. বিলেতের এক পণ্ডিত দেশভ্রমণ দ্বারা অগাধ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। গ্রিক দেশ থেকে ফিরে এসে তিনি আরম্ভ করেন মালির কাজ যা তুমি-আমি করতে লজ্জাবোধ করব। তাতে কি তাঁর জাত গিয়েছিল? যার মধ্যে জ্ঞান ও গুণ আছে, সে কয়দিন নিচে পড়ে থাকে? লোকে তাকে সম্মান করে উপরে টেনে ডোলেই।
ক. ‘কর্পূর’ শব্দের অর্থ কী?
খ. লেখক ‘স্পিরিট’ বা আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে দিকটি নির্দেশ করে তা বর্ণনা করো।
ঘ. “যার মধ্যে জ্ঞান ও গুণ আছে, লোকে তাকে সম্মান করে উপরে টেনে তোলেই”- উক্তিটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে মূল্যায়ন করো।
৮. সৃজনশীল উত্তর:
ক. কর্পূর’ শব্দের অর্থ বৃক্ষরস থেকে তৈরি পণ্যদ্রব্য বিশেষ যা বাতাসের সংস্পর্শে অল্পক্ষণের মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
খ. জীবনে মহৎ কিছু অর্জন করার জন্য লেখক ‘স্পিরিট’ আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে বলেছেন।
“স্পিরিট” বা আত্মার শক্তি মানুষের আসল শক্তি। এ শক্তির বলেই মানুষ বিশ্বকে জয় করেছে। ভাব-সাধনার মাধ্যমে প্রাপ্ত উদ্দীপনাকে কাজে রূপ দিতে হলে ‘স্পিরিট’কে সঠিক পথে চালনার বিকল্প নেই। কেবল এর মধ্য দিয়েই জীবনে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। এ কারণেই লেখক সবার মাঝে এই শক্তির জাগরণ কামনা করেছেন।
গ. উদ্দীপকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কাজের গুরুত্বের দিকটি নির্দেশ করে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কাজের গুরুত্ব প্রকাশিত হয়েছে। যে যত বড়ই হোক কাজই তাকে উন্নতি দিতে পারে। শুধু ভাব নিয়ে অলস হয়ে বসে থাকলে মানুষের সফলতা ব্যাহত হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত বিলেতের পণ্ডিত দেশভ্রমণ করে অনেক আন অর্জন করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর এ জ্ঞান নিয়ে অহংকার করেননি। গ্রিক দেশ থেকে ফিরে এসে তিনি মালির কাজ শুরু করেছিলেন। অন্যরা হয়তো এমন কাজ করতে লজ্জাবোধ করত। গর্ব করত এই ভেবে যে সে অনেক বেশি শিক্ষিত, তার দ্বারা এ কাজ শোভনীয় নয়। বিলেতের পণ্ডিত লোকটি ভাবকে প্রশ্রয় না দিয়ে কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। উদ্দীপকের এই কাজের গুরুত্বের দিকটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে। সেখানেও প্রাবন্ধিক ভাবের চেয়ে কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
ঘ. যার মধ্যে জ্ঞান ও গুণ আছে, লোকে তাকে সম্মান করে উপরে টেনে তোলেই’- উল্কিটি ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে কর্মঠ মানুষের সার্থকতা তুলে ধরা হয়েছে। যারা অহেতুক ভাবকে পরিহার করে পরিশ্রমী হয় তারা কখনো ব্যর্থ হয় না। জীবনে সফলতা তারা লাভ করবেই, এটাই চরম সত্য । উদ্দীপকেও ভাবহীন কর্মঠ মানুষের গুণকীর্তন করা হয়েছে। সেখানে বিলেতের এক পণ্ডিতের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে যিনি অনেক দেশ ভ্রমণ করে জ্ঞান অর্জন করেছেন। কিন্তু তিনি সে জ্ঞানকে ভাবের উপকরণ না করে মালির কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন 1 তার নিকট কাজটিই বড় মনে হয়েছে বলে তিনি লজ্জাবোধ করেননি। এমন মহৎ মানুষকে সমাজের সবাই সম্মান করে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের লেখক দেখিয়েছেন মানুষ অনর্থক ভাব দেখিয়ে নিজের অমঙ্গল ডেকে আনে। ভাব থাকবে, তবে তা হতে হবে যৌক্তিক। ভাব যদি মানুষকে কর্মে উদ্দীপ্ত করে তবেই ভাবে সার্থকতা। কিন্তু এটা খুব কমই পরিলক্ষিত হয় বলে মানুষের জীবনের উন্নতি সুদূর পরাহত হয়। তাই প্রাবন্ধিক নিজের বুদ্ধি, নিজের কর্মশক্তিকে জাগিয়ে তোলার কথা বলেছেন। প্রাবন্ধিক মনে করেন, কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়তে হবে। কাজে নামার পূর্বে দেখতে হবে এর ফল কেমন হবে। অর্থাৎ ভেবে-চিন্তে কাজে নামলে উৎসাহ অনর্থক নষ্ট হবে না। যিনি এভাবে কর্মে আত্মনিয়োগ করতে পারেন তিনি সফল হবেন বলে লেখক মনে করেন। এমন লোককে সবাই উপরে টেনে তুলতেও উদ্যোগী হন। আলোচ্য প্রবন্ধের এই বছর প্রশ্নোক্ত উক্তিটিকেই সার্থক করেছে।
৯. সৃজনশীল প্রশ্ন:
আমাদের বিশ্বাস মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় সুপরিকল্পিত পথেই কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। একমাত্র মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যেই বিজ্ঞানের অভাবনীয় অবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল ও মানবিক কর্মে প্রয়োগ করা যায়। আর তা সম্ভব হলেই যথার্থ মানবকল্যাণ সাধিত হবে।
ক. ‘সুবর্ণ’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ভাব আর কাজের সম্বন্ধটা কেমন? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে বিশেষ দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে প্রতিফলিত বিষয় ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের একটি বিশেষ দিককে নির্দেশ করে, প্রবন্ধের
সামগ্রিকতা সেখানে অনুপস্থিত।”- যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
৯. সৃজনশীল উত্তর:
ক. সুবর্ণ শব্দের অর্থ হলো সোনা।
খ.ভাব ও কাজের মধ্যে সম্বন্ধটা খুব নিকট মনে হলেও এদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।
বস্তুজগতে ভাবের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই এটা পুষ্পবিহীন সৌরভের মতো। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু শুধু ভাব দিয়ে কোনোকিছু অর্জন করা যায় না। ভাব হলো কাজের প্রেরণা। ভাবকে কাজে রূপান্তর করার মধ্য দিয়েই ভাব পূর্ণতা পায়।
গ. উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের ভাব সাধনার মধ্য দিয়ে আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তুলে তা কর্মে রূপ দেওয়ার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। কর্মে সফলতা পেলে মানবজীবন সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে কর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কর্মপরিকল্পনা সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় সুপরিকল্পিত পথেই কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। ভাব সাধনার মধ্য দিয়ে আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তোলা যায়। তবে নিজের বিবেক বুদ্ধিকে সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানোর মধ্য দিয়েই কেবল জীবনের সার্থকতা সূচিত হয়। মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যেই বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে সৃজনশীল ও মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও ভাব সাধনার মাধ্যমে মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলে তা মহৎ কর্মে প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। তাহলেই মানব জীবন সুন্দর ও সার্থক হয়ে উঠবে। এ বিষয়টিই উদ্দীপকের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।
ঘ. ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে ভাবের সঙ্গে কর্মের সমন্বয় সাধনের তুলে ধরার পাশাপাশি আরো নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। উদ্দীপকে কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুক্তবুদ্ধির গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানবজীবনে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। এর প্রভাবে মানবজীবন সুন্দর ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে। তবে এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এর অপব্যবহার মানবজীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। মুক্তবুদ্ধি চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে পারলেই বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল ও মানবিক কর্মে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে লেখক ভাব ও কাজের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়ে কর্মস্পৃহার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একইভাবে উদ্দীপকটিতেও ভাব সাধনাকে কাজে লাগিয়ে কল্যাণময় পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক ভাবের আবেগে উদ্বেল না হয়ে, ভাবের সঙ্গে পরিকল্পিত কর্মশক্তি এবং বাস্তব উদ্যোগের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদনের কথা বলেছেন। তিনি দেশের উন্নতি ও মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণের জন্য ভাবের সঙ্গে বাস্তবধর্মী কর্মে তৎপর হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো উদ্দীপকের বক্তব্যে ফুটে ওঠেনি। এ বিবেচনায় উদ্দীপকটি প্রবন্ধের বিশেষ একটি দিককে নির্দেশ করলেও প্রবন্ধের সামগ্রিকতা সেখানে অনুপস্থিত।
১০. সৃজনশীল প্রশ্ন: অসাধ্য সাধন করেছেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি মানুষকে ভালোবেসেছেন বলেই তার কথায় সবাই কাজ করেছিল। তার কথার সঙ্গে কাজের মিল আছে বলেই মানুষ তাঁকে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন।
ক. লোকের কোমল অনুভূতিতে ঘা দেওয়া কী?
খ. ‘ দশচক্রে ভগবান ভূত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. “তার কথার সঙ্গে কাজের মিল আছে বলেই মানুষ তাঁকে ভালোবেসে আগলে রেখেছেন ” — মন্তব্যটি ‘ভাব
ও কাজ’ প্রবন্ধের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
১০. সৃজনশীল উত্তর:
ক. লোকের কোমল অনুভূতিতে ঘা দেওয়া পাপ।
খ.দশজনের চক্রান্তে সাধু ব্যক্তিও অসাধু প্রতিপন্ন হতে পারে বোঝাতে প্রাবন্ধিক প্রবাদটির ব্যবহার করেছেন। সমাজের মানুষ হুজুগের বশে অনেক সময়ই ভুলকে সঠিক ভেবে গ্রহণ করে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তিসমষ্টি সাধু ব্যক্তিকেও অসাধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মানুষের হুজুগে স্বভাবের সুযোগ নিয়ে সবাই মিলে অপপ্রচার চালিয়ে সেটিকে তারা বাস্তব রূপও দিতে চায়। অনেকের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে অসম্ভবও সম্ভব হয়— এটিই আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মহাত্মা গান্ধীর মাঝে ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত ভাবের মাধ্যমে লোকের মাঝে কর্মোদ্যম সৃষ্টির দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের মানবজীবনের উন্নতির ক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি ভাবকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। ভাবের মাধ্যমে মানুষকে মাতিয়ে তুলে তাদের মাঝে কাজের স্পৃহা সঞ্চার করা যায়। তবে লেখকের মতে, এ প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মানুষকে ভাবের কথায় জাগিয়ে তুলে সময় মতো কার্যসিদ্ধি করতে না পারলে মানুষের উৎসাহ দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝিমিয়ে পড়তে পারে। উদ্দীপকে উল্লিখিত মহাত্মা গান্ধী ছিলেন একজন মহান নেতা। তিনি নেতৃত্বের গুণে মানুষকে কাছে টানতে পেরেছিলেন। কেবল ভাবের কথায় নয়, কর্মক্ষেত্রেও সমান ব্রতী ছিলেন বলেই মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছিলেন তিনি। মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কাজে আত্মনিয়োগ করে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে বর্ণিত ভাব ও কাজের সুষ্ঠু সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে যথাযথ ফল লাভে সফল হওয়ার দিকটিই মহাত্মা গান্ধীর মাঝে প্রকাশিত হয়েছে।
ঘ. ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধে মানবকল্যাণ ও দেশের উন্নতির লক্ষ্যে ভাব ও কাজের যথাযথ সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আলোচ্য রচনায় কাজী নজরুল ইসলাম জীবনে সফলতা লাভের ক্ষেত্রে ভাব ও কাজ উভয়কেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছেন। ভাব জিনিসটা অবাস্তব উচ্ছ্বাস হলেও কাজের স্পৃহা সৃষ্টিতে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর কাজ হলো বস্তুজগতের সেই প্রক্রিয়া যা ভাবকে কাজে রূপান্তরিত করে। তাই কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনের জন্য ভাব ও কাজ এ দুয়ের মাঝে যোগসূত্র সাধন করতে হবে। উদ্দীপকে বর্ণিত মহাত্মা গান্ধী নেতৃত্বের গুণে মানুষকে দেশের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। মানুষের মাঝে তিনি আলোকিত চেতনার সঞ্চার করেছেন। সেই সঙ্গে কর্মোদ্যমী হয়ে মহৎ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। এ কারণেই মানুষ তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তার দেখানো পথে কাজ করে দেশের উন্নতি সাধন করেছে। ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধেও দেশের জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভাবের গুরুত্ব অপরিসীম হলেও কেবল ভাব দিয়ে মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব হয় না। তার জন্য প্রয়োজন হয় কর্মশক্তি ও সঠিক উদ্যোগের। ভাবের আবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি কাজের স্পৃহা সৃষ্টি করতে না পারলে ভালো উদ্যোগ নষ্ট হতে বাধ্য। অন্যদিকে যারা ভাবের সাথে সাথে কাজের বিষয়ে যত্নবান তারাই ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সাফল্য লাভ করতে পারেন। মহাত্মা গান্ধী ছিলেন এমনই দুর্লভ গুণের অধিকারী। এ কারণেই কোটি কোটি ভারতবাসী তাঁর দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এমন মহৎ কর্মের অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি মানুষের অফুরন্ত পেয়েছেন, আজও পাচ্ছেন।