সন্ধি-বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে ও উদাহরণ

  • সন্ধিতে ধ্বনির চার ধরনের মিলন হয়
  • বাংলা সন্ধি কয় প্রকার

সন্ধি : মানুষ কথা বলার সময় কথার গতি বৃদ্ধি পায়। দ্রুত কথা বলার সময় কখনো কখনো দুটো শব্দের কাছাকাছি থাকা দুটো ধ্বনির উচ্চারণ একত্রিত হয়ে যায়। ব্যাকরণে একে সন্ধি বলা হয়। যেমন: ‘আমি বিদ্যা আলয়ে যাব।” বাক্যটি বলার সময় ‘আমি বিদ্যালয়ে যাব’ হয়ে যায়। এখানে ‘বিদ্যা’- ‘-এর ‘আ’-ধ্বনি এবং ‘আলয়’-এর ‘আ’–ধ্বনি মিলে গেছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ লিখেছেন : দুটি বর্ণ অত্যন্ত নিকটবর্তী হলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য উভয়ের মিলন হয়ে এক বর্ণ বা একের রূপান্তর বা একের লোপ বা উভয়ের রূপান্তর হলে— এরূপ মিলনকে সন্ধি বলে ৷

এই সংজ্ঞার আলোকে বলা চলে : পাশাপাশি অবস্থিত দুটো ধ্বনির মিলনের ফলে যদি এক ধ্বনি সৃষ্টি হয়, তবে তাকে সন্ধি বলে। সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। দুটো ধ্বনির সন্ধিতে প্রথম শব্দের শেষ ধ্বনি এবং পরের শব্দের প্রথম ধ্বনির মিলন ঘটে। সন্ধির ফলে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়। কথা বলার সময় শব্দের উচ্চারণ সহজ হয়। ভাষা সংক্ষিপ্ত হয় এবং শুনতে ভালো লাগে ৷ সন্ধিতে ধ্বনির চার ধরনের মিলন হয় :

READ ALSO

১. উভয় ধ্বনি মিলে একটি ধ্বনি হয়।
২. একটি ধ্বনি বদলে যায়।
৩. একটি ধ্বনি লোপ পায়।
৪. উভয় ধ্বনির বদলে নতুন ধ্বনির সৃষ্টি হয়।

বাংলা সন্ধি দু প্রকার : ১. স্বরসন্ধি, ২. ব্যঞ্জনসন্ধি।

স্বরসন্ধি : স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে স্বরসন্ধি বলে। যেমন :

সোনা + আলি = সোনালি
রুপা + আলি = রুপালি
মিথ্যা + উক=মিথ্যুক
কুড়ি + এক = কুড়িক
মা + এর=মায়ের
নদী + এর = নদীর

ব্যঞ্জনসন্ধি : স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি মিলিত হয়ে যে
সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। যেমন :

See also  Completing Story class-8: A Liar Shepherd

কাঁচা + কলা=কাঁচকলা
ছোট + দা = ছোড়দা
আর + না = আন্না
নাতি + বৌ = নাতবৌ
উৎ + চারণ = উচ্চারণ
চার + টি = চাট্টি

বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ কোনো রকম পরিবর্তন ছাড়া ব্যবহৃত হয়। এগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। এসব তৎসম শব্দের সন্ধি সংস্কৃতের নিয়মেই হয়। তাই সংস্কৃতের নিয়ম মেনে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের সন্ধি ৩ প্রকার।

যথা : ক. স্বরসন্ধি, খ. ব্যঞ্জনসন্ধি ও ৩. বিসর্গসন্ধি

স্বরসন্ধি : সূত্র ও উদাহরণ

১. অ, আ ধ্বনির সন্ধি

সূত্র: অ + অ=আ ( া)
উদাহরণ: নব + অন্ন = নবান্ন, পরম + অণু = পরমাণু

সূত্র: অ + আ=আ ( া)
উদাহরণ: জল + আশয়=জলাশয়, পাঠ + আগার = পাঠাগার

সূত্র: আ + অ = আ ( া)
উদাহরণ: কথা + অমৃত=কথামৃত, আশা + অতীত=আশাতীত

সূত্র: আ + আ = আ ( া)
উদাহরণ: বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, মহা + আশয়=মহাশয়

২. ই, ঈ ধ্বনির সন্ধি

সূত্র: ই + ই = ঈ (ী )
উদাহরণ: অতি + ইত = অতীত, রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র

সূত্র: ই + ঈ = ঈ (ী )
উদাহরণ:পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা, অধি + ঈশ্বর = অধীশ্বর

সূত্র: ঈ + ই = ঈ (ী)
উদাহরণ: শচী + ইন্দ্ৰ = শচীন্দ্র, মহী + ইন্দ্ৰ = মহীন্দ্র

সূত্র: ঈ + ঈ = ঈ (ী)
উদাহরণ: শ্রী + ঈশ = শ্রীশ, পৃথিবী + ঈশ্বর = পৃথিবীশ্বর

৩. উ, ঊ ধ্বনির সন্ধি

সূত্র: উ + উ = ঊ
উদাহরণ:কটূ + উক্তি = কটূক্তি, মরু + উদ্যান = মরূদ্যান

সূত্র: উ + ঊ=ঊ
উদাহরণ: লঘু + ঊর্মি = লঘূর্মি, বহু + ঊর্ধ্ব = বহূর্ধ্ব

সূত্র: ঊ + উ = ঊ
উদাহরণ:বধূ + উৎসব = বধূৎসব, বধূ + উক্তি = বধূক্তি

সূত্র: ঊ+ঊ = ঊ
উদাহরণ:ভূ + ঊর্ধ্ব=ভূর্ধ্ব

৪. অ/আ, ই/ঈ ধ্বনির সন্ধি
সূত্র: অ/আ + ই/ঈ = এ (ে)

উদাহরণ: স্বব+ইচ্ছা= স্বেচ্ছা
অপ+ঈক্ষা=অপেক্ষা
মহা+ঈশ্বর=মহেশ্বর
যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট

৫. অ/আ, উ/ঊ ধ্বনির সন্ধি
অ/আ + উ/ঊ = ও (ো)

উদাহরণ:
সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়
চল + ঊর্মি = চলোর্মি
কথা + উপকথন = কথোপকথন
মহা + ঊর্মি = মহোমি

৬. অ/আ, ঋ ধ্বনির সন্ধি

উদাহরণ: অ/আ+ঋ=অর , দেব+ঋষি=দেবর্ষি, রাজা+ঋষি=রাজর্ষি

See also  তৈলচিত্রের ভূত গদ্যের-শব্দার্থ-পাঠ ও লেখক পরিচিতি

অ/আ+ঋত=আর, শীত+ঋত=শীতার্ত, ক্ষুধা+ঋত=ক্ষুধার্ত

৫. অ/আ, এ/ঐ ধ্বনির সন্ধি

সূত্র: অ/আ + এ/ঐ = ঐ (2)
উদাহরণ: জন+এক=জনৈক, তথা+এব=তথৈব, মত+ঐক্য=মতৈক্য, মহা+ঐশ্বর্য=মহৈশ্বর্য

৭. অ/আ, ও/ঔ ধ্বনির সন্ধি

সূত্র: অ/আ + ও/ ঔ = ঔ (ৌ)
উদাহরণ: জল+ওকা=জলৌকা, মহা+ওষধি=মহৌষধি

বিসর্গসন্ধি

বিসর্গ (ঃ )-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে। উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দু রকম-

র্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে র্ থাকলে উচ্চারণের সময় র্ লোপ পায় এবং র্-এর জায়গায় বিসর্গ (ঃ) হয়। উচ্চারণে র্ বজায় থাকে। যেমন : অন্তর > অন্তঃ + গত = অন্তর্গত (অতোগতো)।

স্-জাত বিসর্গ : শব্দের শেষে স্ থাকলে সন্ধির সময় স্ লোপ পায় এবং স্-এর জায়গায় বিসর্গ ( ঃ ) হয়। উচ্চারণে স্ বজায় থাকে। যেমন : নমস্ > নমঃ + কার নমস্কার ( নমোকার্ ) ।

বিসর্গসন্ধি দু-ভাবে সাধিত হয় :

বিসর্গ ও স্বরধ্বনির সন্ধি
১. বিসর্গ ( ঃ ) ও স্বরধ্বনি মিলে

২. বিসর্গ ( ঃ ) ও ব্যঞ্জনধ্বনি মিলে।

ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি স্থলে ও-কার হয়। যেমন :
ততঃ + অধিক = ততোধিক
বয়ঃ + অধিক = বয়োধিক
যশঃ + অভিলাষ = যশোভিলাষ

খ. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে অ, আ, উ-ধ্বনি থাকলে বিসর্গ ও অ-ধ্বনি মিলে র হয়। যেমন :
পুনঃ + অধিকার = পুনরধিকার
প্রাতঃ + আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ + আবৃত্তি = পুনরাবৃত্তি
পুনঃ + উক্ত

পুনরুক্ত
২. বিসর্গ ও ব্যঞ্জনধ্বনির সন্ধি
ক. অ-ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে বর্গের ৩য়/ ৪র্থ/ ৫ম ধ্বনি অথবা য, র, ল, হ থাকলে বিসর্গ ও
অ-ধ্বনি স্থলে র-জাত বিসর্গে র/ রেফ (^) এবং স-জাত বিসর্গে ও-কার হয়। যেমন :

র-জাত বিসর্গ : র
অন্তঃ + গত = অন্তর্গত
অন্তঃ + ধান = অন্তৰ্ধান অন্তঃ + ভুক্ত = অন্তর্ভুক্ত
পুনঃ + জন্ম = পুনর্জন্ম পুনঃ + বার = পুনর্বার পুনঃ + মিলন = পুনর্মিলন

স-জাত বিসর্গ : ও
ক. মনঃ + গত = মনোগত
তিরঃ + ধান = তিরোধান
অধঃ + মুখ = অধোমুখ
সদ্যঃ + জাত

See also  Class 8 english grammar-Countable and Uncountable Nouns-Unit-1-Lesson-3

সদ্যোজাত
তপঃ + বন = তপোবন
মনঃ + যোগ = মনোযোগ
মনঃ + রম

মনোরম
মনঃ + হর=মনোহর
মনঃ + লোভা =
মনোলোভা

খ. বিসর্গের পরে চ/ছ থাকলে বিসর্গের স্থলে শ; ট/ঠ থাকলে ষ এবং ত/থ থাকলে স হয়। যেমন :
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
দুঃ + চরিত্র = দুশ্চরিত্র
ধনুঃ + টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয়
শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ
নিঃ + ছিদ্র = নিশ্ছিদ্র
নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
দুঃ + তর = দুস্তর
ইতঃ + তত = ইতস্তত
নিঃ + তেজ

গ. অ/আ ভিন্ন অন্য স্বরের সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে স্বরধ্বনি, বর্গের ৩য় / ৪র্থ / ৫ম ধ্বনি অথবা য, র,
ল, হ থাকলে বিসর্গ স্থলে র হয়। যেমন :
নিঃ + অবধি = নিরবধি
নিঃ + গত = নির্গত
নিঃ + বাক্ = নির্বাক
আবিঃ + ভাব আবির্ভাব

ঘ. র-জাত বিসর্গের পরে র থাকলে বিসর্গ লোপ পায় এবং প্রথম স্বর দীর্ঘ হয়। যেমন :
নিঃ + রব =নীরব
নিঃ + রোগ = নীরোগ
নিঃ + রস=নীরস

ঙ. অ/আ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে স হয়। যেমন :
নমঃ + কার = নমস্কার
তিরঃ + কার =তিরস্কার
পুরঃ + কার =পুরস্কার

চ. ই/উ ধ্বনির সঙ্গে বিসর্গ এবং পরে ক,
নিঃ + কাম = নিষ্কাম
নিঃ + ফল = নিষ্ফল
চতুঃ + পদ =চতুষ্পদ
আবিঃ + কার = আবিষ্কার
ভাঃ + কর = ভাস্কর

প, ফ থাকলে বিসর্গ স্থলে ষ হয়। যেমন :
নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ
বহিঃ + কার =: বহিষ্কার
চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ
দুঃ + পাচ্য = দুষ্পাচ্য

ছ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্ধির বিসর্গ লোপ পায় না। যেমন :
প্রাতঃ + কাল=প্রাতঃকাল
মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট
অন্তঃ + করণ=অন্তঃকরণ
শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া

জ. কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিসর্গ লোপ পেলেও সন্ধি হয় না। যেমন :
অতঃ + এর = অতএব

বিসর্গ সন্ধির কিছু ব্যতিক্রম :
অহঃ + অহ = অহরহ
অহঃ + নিশা= অহর্নিশ

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts

No Content Available

Related Posts

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?