কিডনির এনাটমী-Anatomy of Kidney

কিডনির এনাটমী-ANATOMY OF KIDNEY

কিডনি বা বৃদ্ধ হচ্ছে শরীরের দুটো অত্যন্ত জরুরী অর্গান বা অঙ্গ যা স্বাভাবিকভাবে শিরদাঁড়ার দু-পার্শ্বে পেটের ভিতর পেছন দিকে থাকে। এদের আকৃতি অনেকটা বাংলা ৫ অংকের মত। এদের কার্যকরী বা ফাংশনাল ইউনিট হচ্ছে নেফ্রন যা প্রতিটি কিডনীতে ১০ লক্ষের মত থাকে।

ভ্রুণতত্ত্ব বা এমব্রায়োলজিক্যালী পূর্ণ বয়স্ক বা প্রাপ্ত বয়স্কলোকের কিডনি বা মেটানেফ্রোন আদিম বা প্রিমিটিভ অঙ্গ প্রোনেফ্রস এবং মেটানোফ্রান এর প্রত্যাবৃত্তি বা রিগ্রেশনের মাধ্যমে তৈরি হয়। কিডনীর কালেকটিং সিষ্টেম নির্গমন নালী বা উলফিয়ান ডাই থেকে সৃষ্টি হয়।

READ ALSO

এই নালী পরবর্তীতে শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয় এবং রেগাল ক্যালিস এবং কালেকটিং টিবিউলে রুপান্তরিত হয়। কার্যকরী নেফ্রনতৈরী হয় মেটানেফ্রন থেকে এবং তা কালেকটিং সিষ্টেমের সম্প্রসারণশীল অংশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়।

সুতরাং একটি জিনিস পরিষ্কার যে কিডনীর জন্মগত দোষ বা ত্রুটি মেটানেফ্রোস, কালেকটিং সিষ্টেম বা উভয়েরই ভ্রুণগত সময়ে বাড়ন্তের ত্রুটির জন্য হতে পারে।

প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। বৃক-নালী বা ইউরেটার যখন কিডনীর হাইলাসে প্রবেশ করে এটা ফানেল এর মত একটি গহ্বর তৈরী করে যার নাম হচ্ছে পেলভিস।

এই পেলভিস থেকে ২ থেকে ৩ টা প্রধান শাখা বের হয় যাদের বলা হয় মেজর ক্যালিসেস এবং এরা প্রত্যেকে পরবর্তীতে ৩ থেকে ৪ টা উপ শাখায় বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে যাদের বলা হয় মাইনর ক্যালিসেস।

প্রতিটি স্বাভাবিক কিডনীতে প্রায় ১২ টা মাইনর ( ৮ – ১৫ টা ) ক্যালিস থাকে। একটি কিডনীকে লম্বা লম্বি ভাবে দুভাগ করলে দুটো পরিষ্কার ভাগ দেখা যায়। ( ছবি – ১) বাহিরের ১.২ থেকে ১.৫ সেন্টিমিটার

রোগের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী কিডনীর প্রধান পাঁচটি অংশ হচ্ছে :

(ক) রক্ত নালী বা ব্লাড ভেসেল
(খ) গ্লোমেরুলাই বা কৈশিকাগুচ্ছ
(গ) টিবিউলস
(ঘ) জাকসটাগ্লোমেরুলার এপারেটাস এবং
(ঙ) ইন্টারষ্টিশিরাম।

রক্তনালী বা ব্লাডভেসেলস্:
যদিও দুটো কিডনির ওজন শরীরের মোট ওজনের মাত্র ০.৫% তথাপি প্রতিটি কিডনীই রক্ত চলাচলের জন্য খুব উপযোগী, কার্ডিয়াক আউটপুট এর প্রায় ২৫% তারা গ্রহণ করে। এর মধ্যে আবার কিডণীর কর্টেক্স এর ভিতর প্রায় ৯০% রক্ত চলাচল করে এবং বাকী ১০ শতাংশ মেডালা গ্রহণ করে। মানুষের বেলায় কিডনীর প্রধান ধমনী বা রেগাল আর্টারী হাইলাসে প্রধান দুটি শাখায় (এন্টেরিয়ার ও পোষ্টেরিয়ার ) বিভক্ত হয়। এই প্রধান শাখা থেকে ইন্টারলোবার আর্টারী বের হয় এবং লোবের মাঝে খান দিয়ে যায়। এরপর যখন করটেক্স ও মেডালার সন্ধিক্ষণ বা জাংশন আসে তখন এগুলো আয়েট ধমনী হিসাবে এবং পরবর্তীতে ইন্টারলোবুলার আর্টারিওলস হিসাবে করটেক্স ৩ প্রবাহিত হয়। এই ইন্টারলোবুলার আর্টারিওলাস করটেক্স এর পার্পেনডিকুলার ভাবে থাকে। ইন্টারগোবুলার আর্টারী থেকে এফারেন্ট আর্টারিওলস বের হয় এবং গ্লোমেরুলার টাট বা কৈশিকাগুচ্ছে প্রবেশ করে ২০ থেকে ৪০ টি ভাগে ভাগ হয়ে অনেক একক বা লোবিউলস তৈরী করে। এইগুলিই পুণরায় একত্রিত হয়ে ইফারেন্ট আর্টারিওলন হিসেবে গ্লোমেরুলাই থেকে বের হয়ে যায় ভাসারেকটা হিসেবে। রেগাল ভেসেল বা কিডনীর রক্তনালীর কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। যেমন এগুলো যেহেতু এণ্ড আর্টারিজ এর যত সেগুনা এর যে কোনো শাখা বন্ধ হয়ে গেলে বা অকুডেড হয়ে কিডনীর যে জায়গায় এরা র সঞ্চালন করে সেখানে ইনফারশন বা কলা বিনষ্টি করে। যেহেতু মেডালায় রক্ত সঞ্চালন অদ্ভূদ এবং সেখানে রক্ত কম হয় সেজন্য মেডালায় ইসকিমিয়া হওয়ার প্রবণতা খুব বেশী। আবার করটেক্স যেহেতু খুব ভাসকুলার সেজন্য হাইপারটেনসিভ বা উচ্চ রক্তচাপজনিত ইসকিমিয়া বা প্রতিক্রিয়া করটেক্স এ বেশী পরিলক্ষিত হয়। গ্লোমেরুলাস এ কোন রোগ হলে টিবিউলস এর উপর ও এর প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। কারণ টিবিউলস সাধারণত ইফারেন্ট আর্টারিওলস থেকে উদ্ভুত।

See also  কিডনির ফিজিওলজী-physiology of Kidney

গ্লোমেরুলাস বা কৈশিকাগুচ্ছ: (ছবি – ২ )
গ্লোমেরুলাস বা কৈশিকাগুচ্ছ হচ্ছে প্লাজমার আলট্রাফিস্ট্রেশনের জন্য একটি উপঝিল্লি সংবহন নালিকা বা ভাস্কুলার ইপিথেলিয়াল অর্গান। সংবহন-নালীর ভিতর থেকে বাহিরের ইউরিনারি স্পেশ পর্যন্ত এর ৩ টি প্রধান স্তর হচ্ছে-

(ক) ছিদ্রযুক্ত অস্তঝিল্লিক বা ফিনিস্ট্রেটেড এনডোথেলিয়াম, একটি পাতলা স্তর যার ছিদ্রের ব্যস ৭০ থেকে ১০০ ন্যানোমিটার।

(খ) একটি গ্লোমেরুলার বেসমেন্ট মেমব্রেন যার ব্যাস ৩২০ ন্যানোমিটার, এর মাঝের অংশ হচ্ছে লামিনা ডেন্সা এবং বাইরের ও ভেতরের ইলেক্টোলুসেন্স এরিয়া হচ্ছে ল্যামিনা রেয়ারা এক্সটার্না এবং ইন্টারনা,

(গ) ভিসেরাল ইপিথেলিয়াল সেল বা পোডোসাইট। পোডোসাইট একটি জটিল কোষ যা বেসমেন্ট মেমব্রেন এর ল্যামিনা রেয়ারা এক্সটারনার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং এদের ফুট প্রসেসগুলো ২০ থেকে ৩০ ন্যানোমিটার ব্যাস সম্পন্ন ফিলটারিং স্লিট দিয়ে আলাদা করা থাকে।

গ্লোমেরুলার বেসমেন্ট মেমব্রেন-এ অনেক জৈবরাসায়নিক পদার্থ থাকে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

(ক) কোলাজেন টাইপ ৪ যা গ্লোমেরুলার বেসমেন্টমব্রেন এর শুষ্ক ওজনের প্রায় ৫০ ভাগ। এর প্রধান কাজ হোল ক্যাপিলারী ওয়াল এর গঠন ধরে রাখা,

(খ) ল্যামিনিন যার কাজ হোল এণ্ডোথেলিয়াল এবং ইপিথেলিয়াল কোষ গুলোকে বেসমেন্ট মেমব্রেন এর সংগে সংযুক্ত করে রাখা,

(গ) পলিএ নায়নিক প্রোটিওগ্লাইকেন বিশেষত হেপারিণ সালফেট যা ৫০ থেকে ৬০ ন্যানোমিটার দূরত্বে থাকে দুই ল্যামিনার মেমব্রেন এর সংগে। এরা ফিস্ট্রেশন ব্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে।

(ঘ) ফাইব্রোনেকটিল এবং সায়ালোগ্লাইকোপ্রোটিন ও (ঙ) এনট্যকটিন একটি গ্লাইকোপ্রোটিন যার প্রকৃত কাজ অজানা।গ্লোমেরুলাস এর প্রধান কাজ হচ্ছে প্লাজমা ফিস্টেশন বা পরিস্রাবন।

অন্যান্ন অর্গানের আন্তঃকৈশিকনালী বিনিময় বা ট্রান্সক্যাপিলারি এক্সচেঞ্জ এর সঙ্গে এর দুটো প্রধান তফাৎ হচ্ছে (ক) গ্লোমেরুলাস ফিলট্রেশনের সময় এলবুমিনের সমান প্লাজমা প্রোটিন বা এর চেয়ে বড় দানাগুলোকে ( ৭০,০০০ মঃ ওঃ বা ব্যাস ৩.৬ ন্যানোমিটার ) বাদ দিয়ে পরিস্রাবন করে (২) পানি এবং ছোট দানার সল্যুট এর পরিস্রাবন এর জন্য এর বিশেষ দুর্বলাত আছে।

See also  গর্ভাবস্থায় কোন পাশে ঘুমাবেন ও বাচ্চা কোন পাশে থাকে

গ্লোমেরুলাস এর আর একটি অংশ হচ্ছে মেসানজিয়াম যার আরেক নাম হচ্ছে সেন্ট্রিলোবিউলার বা এক্সিয়াল রিজিওন। মেসানজিয়াম একটি শাখা সমৃদ্ধ সমর্থন তৈরী করে এনাসটোম ক্রিং ক্যাপিলারির চারদিকে। এই মেসানক্রিয়ামের মধ্যে থাকে ষ্টিলেট মেসানজিয়াল সেল বেসমেন্ট মেমব্রেন এর সংগে সম্পৃক্ত অবস্থায় যা আসলে পজিটিভ গ্লাইকোপ্রোটিন এবং যার নাম মেসানজিয়াল ম্যাট্রিক্স।

মেসানজিয়াল ম্যাট্রিক্স বেসমেন্ট মেসব্রেন এর মত জৈব রাসায়নিক দ্রব্যাদির তৈরী। মেসানজিয়াল কোষগুলো নিউরোহরমানাল উত্তেজক এর প্রভাবে সঙ্কুচিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং ধারণা করা হয় স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় অবস্থায় এরা গ্লোমেরুলাস এর ভিতরের রক্ত প্রবাহ পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়াও এদের গ্লাসন করার বা ফাগোসাইটিক কার্যক্ষমতাও আছে।

একটি স্বাভাবিক গ্লোমেরুলাস এ মেসানজিয়াল কোষ এর সংখ্যা (২ – ৩ ) এবং এর ম্যাট্রিক্স খুব কম পরিমানে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের গ্লোমেরুলার রোগে মেসানজিয়াল কোষের সংখ্যা, মেসানজিয়াল ম্যাট্রিক্স এবং মেসানজিয়াম এ লিউকোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

টিবিউলস : ( ছবি-৩)
কিডনীর টিবিউল এর উপঝিল্লি বা ইপিথেলিয়াম বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। যেমন প্রক্সিম্যাল টিবিউলার কোষগুলো খুব উচ্চ গঠনের হয়ে থাকে এবং এর অনেক লম্বা মাইক্রোভিলাই থাকে, যেহেতু এদের সোডিয়াম অংশ, পানি, গ্লুকোজ, এমাইনোএসিড এবং প্রোটিন পুনঃ শোষনের কাজ করতে হয়। আবার যেহেতু বিষাক্ত পদার্থও পুনঃশোষিত হয় প্রষ্পিমাল টিবিউলের কোষ দিয়ে সেজন্য রাসায়নিক ক্ষত হওয়ার সম্ভাবনাও এদের বেশী থাকে।

জাক্সটাগ্লোমারুলার এপারেটাস : (ছবি 8) একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অর্গান জাাটাগ্লোমারুলার এপারেটাস, গ্লোমেরুলাস এর সাথে লাগানো থাকে যেখানে এফারেন্ট আর্টারিওল গ্লোমেরুলাসে প্রবেশ করে। এর মধ্যে যে কোষগুলো থাকে তা হলো (ক) জাক্সটাগ্লোমেরুলার কোব পরিবর্তীত দানাদার, মসৃন পেশী বা মডিফাইড গ্রানুলার স্মুথ মাসল কোষ যা এফারেন্ট আর্টারিওল এর মধ্যমায় থাকে এবং যার মধ্যে রেগিন নামক হরমোন থাকে (খ) ম্যাকুলাডেন্সা-ডিষ্টাল টিবিউলের একটি বিশেষ জায়গা যেখানে টিবিউলার কোরগুলো বেশী সংখ্যায় থাকে এবং এগুলো একটু ছোট আকৃতির হয় এবং পরস্পরের সংগে বিশেষ ভাবে সংগে আরেকটা ইন্টারডিজিটেটিং ভাবে লাগানো থাকে, (গ) ল্যাসিসকোৰ বা অদানাদার কোষ, যেগুলো থাকে এফারেন্ট আর্টারিওল, ম্যাকুলাডেন্সা, গ্লোমেরুলাস এর বেষ্টনীর ভিতর।জাক্সটাগ্লোমেরুলার এপারেটাস একটি ছোট নলী বিহীন গন্থী বা এণ্ডোক্রাইন গ্লান্ড যা রেণিন নামক হরমোনের প্রধান উৎস এবং অনেক ক্ষেত্রে উচ্চচাপ জনিত রোগের কারণ।

See also  শরীরে তিল: কেন হয়, কোথায় থাকলে কি হয়

ইন্টারষ্টিশিয়াম: রেপাল ইন্টারষ্টিশিয়াম কিডনির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিক্রিয়ার প্রথম জায়গা। স্বাভাবিক কিডনীর করটেক্স এ ইন্টারষ্টিশিয়াল স্পেশ কমপ্যাক্ট থাকে এবং এর মধ্যে থাকে ছিদ্রযুক্ত বা ফিনিস্ট্রেটেড পেরিটিবিউলার ক্যাপিলারি এবং কিছু ফাইব্রোব্লাষ্ট সম কোষ। যে কোন ধরনের ইন্টারষ্টিশিয়াম এর সম্প্রসারণ তো ইডিমার জন্যই হোক বা প্রদাহের কারণে ইনফ্লামেটরী কোষ এর উপস্থিতির জন্যই হোক) হলেই ধরে নিতে হবে কিডনীর কোন রোগ হয়েছে।

কিডনীর নার্ভ সাপ্লাই :কিডনির স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো কোলিনার্জিক এবং এডেনার্জিক ফাইবার যা মেটানোমিক নার্ভাস সিষ্টেম থেকে সরবরাহ হয়। কিডনীর স্নায়ুর উৎস রেনাল প্লেক্সাস যা সিলিয়াক প্লেক্সাস থেকে উদ্ভুত। এর মধ্যে সিমপ্যাথেটিক ফাইবার থাকে (টি১০-এল ১) যা প্রধানত ভাসোমটর এবং করটেক্স ও মেডুলার রক্ত সঞ্চালণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনীর এফারেন্ট নার্ভ, টি ১০-১২ সেগমেন্টে থাকে।

লিমফেটিকস: কিডনীর লিমফেটিক্স সমূহ লেটারাল এওটিক নোডে ড্রেইন করে, যা থাকে রেনাল আর্টারির লেভেলে। ( এল-২ )

ভেনাস ড্রেইনেজ : ইন্টারলোবিউলার ভেইন দিয়ে আকুয়েট ভেইন যা পরবর্তীতে ইন্টার লোবার ভেইনে ওপেন করে। এগুলো রেনাল সাইনাস হিসাবে ইমার্জ করে রেনাল ডেইন হয় যা পরে ইনফেরিওর ভেনাক্যাভায় ড্রেইন করে।

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts

কিডনি রোগের লক্ষণ ও রোগ নির্ণয়-Sign Symptoms Diagnosis of Kidney Disease

যেহেতু কিডনি রোগের শ্রেণী বিভাগ অত্যন্ত ব্যাপক সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই এদের লক্ষণগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে কোন...

Read more

Related Posts

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?