কিডনি রোগের লক্ষণ ও রোগ নির্ণয়-Sign Symptoms Diagnosis of Kidney Disease

কিডনি রোগের লক্ষণ ও রোগ নির্ণয়-Sign Symptoms Diagnosis of Kidney Disease

যেহেতু কিডনি রোগের শ্রেণী বিভাগ অত্যন্ত ব্যাপক সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই এদের লক্ষণগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে কোন উপসর্গ ছাড়াও কিডনী রোগ থাকতে পারে। কিডনী রোগের সাধারণতঃ দুটো প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন লক্ষণগুলোকে ইউরিনারি ট্রাক্টের উপসর্গ এবং সাধারণ উপসর্গ। ইউরিনারি ট্রাক্টের উপসর্গ-

ক.ব্যথা বা পেইন:
ব্যথা সাধারণত খুব মৃদু বা মাঝানি হয় পেটের পিছনে মেরুদণ্ডের দুপাশে (Loin Pain) ফ্লাংকে বা পাঁজরের হাড় এবং পেটের মাঝখানে নাভির কাছে। আবার কিডনীর পাথরের বেলায় খুব তীব্র ব্যাথা অনুভব হতে পারে। আবার প্রসাবের নালী বা ইউরেটার এর ব্যাখা খুবই তাঁর এবং ইউরেটার এর নালীর গতি অনুসারে নীচের দিকে নামবে এবং টেষ্টিস ও ভালভা বা উরুর দুপাশে পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। তবে কিডিনির ক্যাপসুল বড় হতে অনেক সময় লাগে বলে অনেক সময় কিডনীর অসুখ বা পাথর হলেও ব্যাথা অনুভব নাও হতে পারে।

READ ALSO

খ. প্রস্রাবের লক্ষণ সমূহ:

১. বার বার প্রসাব হওয়া বা ফ্রিকুয়েন্সী (Frequency), তাড়াহুড়া করে প্রস্রাব করার ভাব হওয়া বা আর্জেশি (Urgency) এবং রাতে বেশী প্রসাব হওয়া বা নকচুরিয়া (Nocturia ), পরিমাণ কমে যাওয়া বা অলিগুরিয়া (Oliguria) প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা এনুরিয়া (Anuria) ইত্যাদি যা কিডনির যা জননেন্দ্রের প্রদাহের কারণেও হতে পারে। খুব বেশি প্রদাহ হলে সবসময় প্রস্রাব করার একটা ভাব হবে এবং খুব অল্প কয়েক মিলি লিটার প্রস্রাব হবে। প্রস্রাব করার ভাব এবং রাতে প্রস্রাব সাধারণতঃ মুত্রথলীর খালি করার প্রবণতার কোন রোগ বা স্নায়ুবিক দৌর্বল্যের কারণে হয়ে থাকে। ফলে প্রচুর পরিমান প্রস্রাব মুত্রথলীতে জমা থাকে যাকে রিটেনশন ( Retention) বলে। রাতে ঘন ঘন এবং বেশি প্রস্রাব হয় সাধারণত: হার্টফেইলার, রেণাল ইনকন্সিসটেন্সী, যে কোন কারণে ইডিমার মোবিলাইজেশন হলে, ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এর কারণে, হাইপারএ ডোষ্টিরিনিজম এর কারণে এবং প্রচুর পানিয় গ্রহণের কারণে।

২. প্রস্রাব করতে ব্যাথা এবং জ্বালা পোড়া (ডিজ ইউরিয়া এবং বার্নিং মুত্রথলী এবং প্রষ্টেটগ্রস্থির প্রদাহের কারণে।

৩. রাতে বার বার মূত্র ত্যাগ: ইউরিনারী ট্রাক্ট এর যে কোন রোগ বা স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগের কারণে।

৪. ধারণ অক্ষমতা বা ইনকন্টিনিয়েন্স: এটা মুত্রথলীর এনাটমিক অস্বাভাবিকতা, শারিরীক চাপ, প্রদাহ এবং স্নায়ুবিক রোগ বা ওভারডিসটেনডেট ফ্লাসিভ ব্লাডার এর কারণে হয়ে থাকে।

কিডনি রোগে প্রস্রাবের বৈশিষ্ট

ক. প্রোটিনিউরিয়া (এলবুমিনিউরিয়া): এটা রেণাল ডিজিস বা কিডনি রোগের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ, স্বাভাবিক অবস্থায় একজন লোকের প্রসাবে ১৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন প্রত্যহ ২৪ ঘণ্টায় নির্গত হতে পারে। ব্যায়াম, স্তুর জনিত রোগ, খুব বেশি উদালপতা বা ডিহাইড্রেশনের কারণে স্বাভাবিক লোকের কিডনীর রোগ ছাড়াই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী প্রোটিন নির্গত হতে পারে। খুব অল্প ক্ষেত্রে দাঁড়ানো অবস্থায় একজন স্বাভাবিক লোকের প্রোটিনিউরিয়া হতে পারে তবে আধা শোয়া বা শোয়া অবস্থায় তা চলে যাবে। ২০০ – ৫০০ মিঃ গ্রাঃ / ডি এল এর বেশি প্রোটিনিউরিয়া হলেই তা রেপাল ডিজিস বা বৃক্কের রোগের নির্দেশ করবে।

খ. হেমাচুরিয়া বা প্রস্রাবে রক্তের উপস্থিতি: যদিও কিডনীর রোগ ছাড়া হেমাচুরিয় হতে PTTS তথাি এর গুরুত্ব কিডনি রোগে অসামান্য। কিডনি রোগ ছাড়াও আরও যে কারণে হেমাচুরিয়া হতে পারে সেগুলো নীচে দেয়া হলো। কিডনি রোগের কারণে হেমাচুরিয়ার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো- গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, নিউপ্লাজমস, ভাসকুলার এক্সিডেন্ট, প্রদাহ, অস্বাভাবিকতা, পাথর, কোয়াগুলেশন ডিফেক্ট, ইউরিনারি ট্রাক্টে আঘাত ইত্যাদি। যদি প্রস্রাবের প্রথমে রক্ত আসে তাহলে বুঝতে হবে এটা এন্টিরিওর ইউরেথ্রা বা প্রষ্টেট গ্লান্ড থেকে আসছে। আবার প্রসাবের শেষে রক্ত আসলে বুঝতে হবে যে এটা পক্টেরিওর ইউরেথ্রা, ব্লাডার নেক, ট্রাইগোনের কোন রোগের কারণে হচ্ছে। আর সমস্ত প্রসাব জুড়েই যদি রক্ত আসে তাহলে বুঝতে হবে যে তা কিডনী, ইউরেটার বা ব্লাডারের কোন রোগের কারণে আসছে। হেমাচুরিয়ার কারণগুলো এবার বর্ণনা করা হলো।

লোকালাইজড বা স্থানীয়:

ক. ইউরেথ্রা — ট্রমা বা আঘাত, ইনফেকশন বা প্রদাহ।

খ. ব্লাডার–ইনফেকশান বা প্রদাহ, পাথর, টিউমার, ভেরিসেস, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, রেডিয়েশন ইনজুরি, প্যারাসাইটিক ইনফেকশন।

গ. ইউরেটার- ইনফেকশান, পাথর, টিউমার।

ঘ. কিডনি: গ্লোমেরুলার ডিজিজ, ইনফেকশন, পাথর, এনাটমিক অস্বাভাবিকতা, রেগাল আর্টারি বা ভেইনে থ্রম্বোসিস, নিউপ্লাজম, ট্রমা।

**সিস্টেমিক বা সামগ্রিক:

ক. এন্টিকোয়াগুলেন্ট থেরাপী।

খ. ব্লিডিং ডায়াথেসিস-হেমোফাইলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, ডিআইসি।

গ. হেমোলাইটিক ডিজিজ-হেমোগ্লোবিনিউরিয়া, হেমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোম।

ঘ. সিকেলসেল ক্রাইসিস।

ঙ. এনাফাইলাকটয়েড পারপুরা কিডনীর সম্পৃক্ততা সহ। এছাড়াও বিশেষ কতগুলো সাধারণ উপসর্গ লক্ষণ কিডনী রোগের কারণ হিসেবে সন্দেহ করা হয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো।

ক. মুখ, বিশেষতঃ, চোখের নীচে, পা, হাত, অথবা সর্ব শরীরে ফুলে যাওয়া। রেণাল বা কিডনীর রোগ হলে বেশী পরিমানে সোডিয়াম ও পানি কিডনির টিবিউলস শোষিত করে ধরে রাখার চেষ্টা করে এবং রেগাল পারসন কমে ‘যায়। ধরে রাখা পানি প্লাজমা প্রোটিনকে আরও ডাইলুট করে এবং প্লাজমার অনকোটিক প্রেসার কমিয়ে ফেলে। উপরন্ত এলুবুমিনিউরিয়া হওয়ার জন্যও অনকোটিক প্রেসার আরও কমে যায় ফলে শরীরে ইডিমা হয় বা শরীর-এ পানি জমা হয়ে ফুলে যায়। তবে শরীরের যেখানে লুজ কানেকটিভ টিস্যু আছে যেমন মুখ বিশেষতঃ চোখের পাতার নীচে এ সমস্ত জায়গায় বেশী ইডিমা হয় যার জন্য কিডনী রোগে শরীরের সর্বত্রই ইডিমা হতে পারে তবে চোখের নীচে বা মুখে এটা বিশেষ ভাবে পরিলক্ষিত হয়।

খ. উচ্চ রক্তচাপ ও রক্ত শূন্যতা। (Hypertention, Anaemia)

গ. শরীরে চুলকানি, সোরথ্রোট, খোস-পাঁচড়া। (Pruritis, Pyoderma, Sore Throat)

ঘ. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা বা বমির কারণে উদালপতা। (Diarrhoea, Vomits, Dehydration)

ঙ. কিডনি রোগের জটিলতার কারণে বিভিন্ন অঙ্গ সমূহ ।

চ. জ্বর (Fever)

ছ. শিশুদের স্বাভাবিক বাড়ন্ত না হওয়া (Retardation of growth, Failure to thrive)

**কিডনী রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা : ( Assessment of kidney function) কিডনী রোগের রোগ নির্ণয়কে ৬ টি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হচ্ছে-

ক. প্রস্রাবের পরীক্ষা (Urine Examination )

খ. রক্তের জৈব রাসায়নিক ও অন্যান্য পরীক্ষা (Biochemical tests )

গ. এক্সরে (X Ray )

ঘ. আলট্রাসাউন্ড (Ultrasound)

ঙ. রেডিও নিউক্লিউটাইডস্কেনিং (Radionucleotide Scanning )

চ. বায়োপসি (Biopsy)

ক. প্রস্রাবের পরীক্ষা:
কোন রোগীর কিডনী রোগ হয়েছে বলে সন্দেহ করলে চিকিৎসকের উচিৎ প্রথমে প্রস্রাব পরীক্ষা করা। যদিও কিডনীর ফাংশন বলতে গ্লোমেরুলার ফাংশন এবং টিবিউলার ফাংশন দুইই বুঝায়। প্রস্রাবের পরীক্ষা গুলো দিয়ে আমরা বুঝতে পারি রোগীর কিডনীর কোন রোগ আছে কিনা? কিন্তু তার কিডনীর কার্য্যকরী ক্ষমতা রোগের কারনে কতটুকু কমেছে সেটা প্রকৃতভাবে প্রস্রাবের পরীক্ষায় বুঝা যায় না। প্রস্রাবের পরীক্ষার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রোটিনইউরিয়া, হেমাচুরিয়া, প্রস্রাবে শ্বেত কনিকা বা কাষ্ট এর উপস্থিতি, ২৪ ঘন্টার প্রস্রাবের পরিমাণ ও টোটাল প্রোটিন এবং প্রস্রাবের কালচার ও সেনসিটিভিটি পরীক্ষা। খালি চোখে প্রস্রাব এর রং হেমাচুরিয়ার জন্য লাল, কাইলের জন্য দুধের মত সাদা হতে পারে। হিট টেষ্ট বা এলবুষ্ট্রীক দ্বারা প্রস্রাব পরীক্ষা করে এলবোমিন আছে কিনা তা দেখা কিডনীর রোগ থাকলে অত্যন্ত জরুরী। যেহেতু প্রস্রাবের হিট টেষ্ট এবং এলবোষ্ট্রীক ১৫০ মিঃ গ্রাঃ / লিটার প্রোটিন নির্ণয় করতে পারে। ২৪ ঘণ্টায় যেখানে ২০০ মিঃ গ্রাঃ প্রোটিন নির্গত হওয়া স্বাভাবিক সেখানে ক্লিনিয়াল পরীক্ষার জন্য উপরোক্ত টেস্ট ২টি খুব জরুরী। অনেক সময় প্রস্রাব কনসেনট্রেটেড হলে ট্রেস প্রোটিনইউরিয়াকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়।

See also  তলপেটে নাভির নিচে ব্যথার কারণ ও কি করবেন

খ. রক্তের জৈব রাসায়নিক ও অন্যান্য পরীক্ষা: কিডিনিরোগের রোগ নির্ণয় এবং এর কার্য্যকরী ক্ষমতার পরিমাণ পর্যালোচনার জন্য এই টেস্টগুলি প্রয়োজন। যেহেতু কিডনি রোগে কিডনীর স্বাভাবিক কার্য্যকরী ক্ষমতা কমে যায় সেহেতু এই টেষ্টগুলির সাহায্যে নির্গমন, শোষন এবং হেমোক্টেসিস এর বিপরীতে কিডনীর স্বাভাবিক ক্ষমতা কতটুকু কমেছে তা বুঝা যায়। এইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নীচে বর্ণনা করা হবে।

রক্তে নন-প্রোটিন নাইট্রোজেনাস পদার্থ: নন্-প্রোটিন নাইট্রোজেনাস পদার্থ সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোল ইউরিয়া, এবং ক্রিয়েটিনিন। এগুলো বিপাকের বিশেষত: এগুলো যকৃতে (লিভার) তৈরী হয় কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এ্যামোনিয়া থেকে ( জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে) এবং অর্থিনিন সাইকেল এর সাহায্যে।

ইউরিয়া তৈরী হবার পর তা গ্লোমেরুলাস দিয়ে নির্গত হয় কিছু টিবিউলস দিয়ে পুনঃশোষিত হয়।
কিডনীর রোগ ছাড়াও নীচের কারণে ইউরিয়া বা বান ( BUN) এর পরিমাণ বেশী হতে পারে যা স্মরণ রাখা উচিৎ।

প্রিরেগাল-সার্জিক্যাল শক, এডিশনস ডিজিজ, কজেক্টিভ হার্ট ফেইলার, রক্তপাত বিশেষতঃ অস্ত্রের রক্তপাত, বেশী পরিমান প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ।

পোষ্টরেণাল-ইউরিনারি ট্রাক্ট এর অবস্ট্রাকশন বিশেষতঃ প্রোষ্টেটিক গ্লান্ডের হাইপারট্রফি।

রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ বেশী হলে তাকে এ জুটেমিয়া বলে।

ক্রিয়েটিনিন-একটি নাইট্রোজেনাস পদার্থ যার ৯৮ শতাংশ মাংসপেশীতে থাকে। মাংসপেশীর সংকোচনে এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। এটা প্ৰস্রাব দিয়ে এর এনহাইড্রাইট অর্থাৎ ক্রিয়েটিনিন হিসেবে নির্গত হয়। যেহেতু ক্রিয়েটিনিন আভ্যন্তরিন বিপাকের ফলে উদ্ভুত এবং তা টিবিউলে পুনঃশোষিত হয় না এবং খাবার সংগে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই সেহেতু সঠিকভাবে নির্ণিত হলে রক্তে এর মান কিডনি রোগের রোগ নির্ণয়ের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। কিডনির রোগের ব্যাপকতা যত বাড়বে ক্রিয়েটিনিন এর মানও তত বাড়বে। এর স্বাভাবিক অনুপাত ১০ ৪১। এটা ১৫ ৪১ বেশী হয় প্রি এবং পোষ্ট রেণাল এজুটেমিয়া এবং অস্ত্রের রক্তপাতের কারণে।

ব্লাউ ইউরিয়া ও প্লাজমা ক্রিয়াটিনিন কিডনি অর্থাৎ গ্লোমারুলার ফাংশন দেখার জন্য বহুল প্রচলিত দুইটি টেস্ট।

১. ইউরিয়া এবং ক্রিয়াটিনিন সমপরিমানে বাড়তে থাকে

• ক্রনিক রেনাল ফেলিওর।
• এসটাবলিসড এ্যাকুট রেনাল ফেলিওর।

২. ইউরিয়া ক্রিয়াটিনিনের তুলনায় অনেক বেশী বেড়ে যায় নিম্নলিখিত অবস্থাতে।

•প্রোটিন খাদ্য বেশী দিলে।
• জি, আই ট্রাক্টে ব্লিডিং হোলে।
• যখন প্রোটিন ক্যাটাবলিজম বাড়ে যেমন ট্রমা, ইনফেকশন, ষ্টেরয়েড থেরাপি ডিহাইড্রেশান থাকলে।

৩. ইউরিয়া-ক্রিয়াটিনিনের তুলনায় কম হোয়ে থাকে –
প্রেগন্যান্সি, কম প্রোটিন খেলে, লিভার রোগ থাকলে এবং ওডার হাইড্রেশন থাকলে।

৪. প্লাজমা ক্রিয়াটিনিন তুলনামূলক ভাবে ইউরিয়ার চেয়ে বেশী থাকে র্যাবডোমায়োলাইসিস হলে।

গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট : ইনুলিন ক্লিয়ারেন্স হচ্ছে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট (GFR) টেষ্টের প্রধান পদ্ধতি। ৫১ Cr Edetate একটা ইনজেকশান দেওয়ার পর প্লাজমা এর পরিমান দেখে এটা মাপা হয়। ক্লিনিক্যালী ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স টেষ্ট্র করে এটা দেখা যায়। প্লাজমা ক্রিয়েটিনিন ও রক্তে ইউরিয়ার মান দেখেও এটা নিৰ্ণয় করা সম্ভব। কারণ রক্তে এদের পরিমান বাড়লে বুঝতে হবে যে ফিস্ট্রেশন রেট কম। সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মান নির্ণয় করে নীচের সূত্র ধরে এটা নির্ণয় করা সম্ভব।

জি এফ আর (GFR / mL / minute) =

(১৪০- বয়স) ওজন (কেজি)/৭২× সিরাম ক্রিয়েটিনিন

এই ফলাফল পুরুষের জন্য, নারীদের জন্য ১৪% কম হবে।

ক্লিয়ারেন্স টেস্ট: যে সমস্ত পদার্থ প্রসাব দিয়ে নির্গত হয় তার বেশীর ভাগই কিডনি রক্ত থেকে শোষন করে। সুতরাং সেই বস্তু যদি X হয় Umg যদি সেই পদার্থ প্রসাবে ১ মিনিটে কতটুকু নির্গত হল তা বুঝায় এবং এর কনসেনট্রেশন যদি Pmg /dL হয় তাহলে এক মিনিটে-
ইউ × ১০০ এম এল/পি

প্লাজমা ক্লিয়ার হবে ইনুলিন একটি পলিসাকারাইড (মলিকুলার ওয়েট $ ৫০০০) সম্পূর্ণ ভাবে গ্লোমেরুলাস দিয়ে পরিস্রাবিত হয় এবং টিবিউলস দিয়ে পুনঃশোষিত হয় না । সুতরাং ইনুলিন ক্লিয়ারেন্স একটা প্রত্যক্ষ পদ্ধতি গ্লোমেরুলার ফাংশন এবং গ্লোমেরুলার ব্লাডফ্লো দেখার। তেমনিভাবে PAHp এমাইনোহিপিপউরিক এসিড গ্লোমেরুলাই এবং টিবিউল দিয়ে নির্গত হয়। সুতরাং এই পদার্থের ক্লিয়ারেন্স দিয়েও গ্লোমেরুলার ফাংশন পরিমাপ করা যায়। তবে সাধারণতঃ ইনুলিন এবং PAH ক্লিয়ারেন্স গবেষণাগারের কাজে সীমাবদ্ধ। ক্লিনিক্যালি ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স টেষ্ট করা হয়ে থাকে। ২৪ ঘণ্টার প্রসাব নিয়ে প্রসাবে এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মান নির্ণয় করে এটা করা সম্ভব। রেনাল প্লাজমা ও ব্লাড ফ্লোর মান নির্ণয় প্রসাবে নির্গত বস্তুর উপর ভিত্তি করে এবং ফিক সূত্র প্রয়োগ করে রেনাল প্লাজমা ও ব্লাডফ্লো নির্ণয় করা সম্ভব।

কিডনি টিবিউল ফাংশন টেস্ট: কিডনিটিবিউলস এর রোগ অনেক কম হয়ে থাকে।

ক.প্রকিসম্যাল টিবিউলস এর ফাংশন টেষ্ট করতে হোলে প্রস্রাবে গ্লুকোজ, ফসফেট, এ্যামিনো এসিড ও ইউরিক এসিড বেশী নির্গত হবে। কোন রুগীর প্রস্রাবে যদি গ্লুকোজ থাকে এবং ব্লাড গ্লুকোজ স্বাভাবিক থাকে এবং তার প্রস্রাবে অ্যামিনো এসিডিউরিয়া পাওয়া যায় তাহলে তার প্রক্সিমাল টিবিউলস এর রোগ আছে বলে ধরে নেওয়া যায়

খ. ডিষ্ট্যাল টিবিউলস এর ফাংশন
ইউরিনারী কনসেনট্রেটিং এন্ড ডাইলুটিং টেষ্ট যা ১২-২৪ ঘণ্টা পানি না দিলে স্বাভাবিক ভাবে প্রস্রাবের অসমোলালিটি বেড়ে যাবে। আর পানি বেশী পরিমানে দিলে অসমোলালিটি কমে যাবে।

গ. এসিডিফিকেশান টেষ্ট : NH4CL ১০০ মিলিগ্রাম প্রতিকেজি বডিওয়েট দিলে প্রস্রাবের PH কমে ৫.৩ এ আসা উচিত না এলে বুঝতে হবে ডিষ্ট্যাল টিবিউল খারাপ আছে বা রোগগ্রস্থ হয়েছে।

ইম্পেয়ার্ড কনসেনট্রেটিং পাওয়ার (প্রস্রাবের কনসেনট্রেশন এবং ডাইলিশন টেষ্ট ) ঃ স্বাভাবিক ভাবে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেট এর শতকরা ৯৯% পুনঃশোষিত হয় টিবিউলস দিয়ে। এর কিছু অংশ (১২.৫%) নির্ভর করে টিবিউলার ইপিথেলিয়াম এর লাইনিং সেল এর অখণ্ডতার উপর। যদি টিবিউলের এই ক্ষমতা नা থাকে তাহলে প্রস্তাব যার আইসোঅসমোটিক প্রেসার আছে ১০১০ তা বের হয়ে যাবে শরীরের পানির প্রয়োজন থাক বা না থাক। সাধারণতঃ শরীরের পানির প্রয়োজন বেশী হলে খুব কনসেনট্রেটেড প্রস্রাব (যার আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশী হবে) নির্গত হয়। আবার বেশী পানি প্রস্রাবের সংগে বের হয়ে গেলে প্রস্রাব ডাইলুটেড হবে (যার আপেক্ষিক গুরুত্ব কম হবে)। প্রথমে পানি কম খেতে বলে পরে রোগীকে বেশী পরিমানে পানি খেতে ফিজিওলজিক রেসপন্স দেখতে হয়। যদি বেশী কিডনি প্রস্রাব (যার আপেক্ষিক গুরুত্ব ১০১০ কন্সট্যান্ট) নির্গত হবে যাকে আইসোথেনিউরিয়া বলে। কিডনীর পানি নির্গমনের ক্ষমতা কমে যায় বলে বেশীর ভাগ রোগীর রাতে প্রস্রাব বেশী হয় (নকচুরিয়া)। এই পরীক্ষাটা বর্তমানে পরিবর্তিত ভাবেও করা যায় যার নাম মোজেনথাল এবং ফিসবার্গ টেষ্ট যেখানে প্রস্রাবের অসমোলারিটি বা প্রস্রাব/সিরাম এর অসমোলারিটি রেশিও বা অনুপাত দেখা হয়। যদি প্রস্রাবের অসমোলারিটি rom Osm / Kg নীচে হয় তাহলে কিডনী রোগ আছে ধরে নিতে হবে। খুব মারাত্মক কিডনী রোগে এটা ৩০om Osm / Kg নীচে নেমে যাবে। আর প্রস্রাব/সিরাম এর অসমোলারিটির স্বাভবিক অনুপাত হতে হবে ৩ঃ ০ I এর তারতম্য হলে বুঝতে হবে কিডনী রোগ আছে। সাধারণতঃ নীচে উল্লেখিত কারণে এই ইম্পোয়ার্ড কনসেনট্রেটিং পাওয়ার হতে পারে।

See also  শরীরে তিল: কেন হয়, কোথায় থাকলে কি হয়

১. কিডনির রোগ বিশেষতঃ যেখানে টিবিউলের ক্ষতি বেশী হয় যেমন পাইলোনেফ্রাইটিস।

২. একউট রেপাল সাট ডাউন থেকে অস্থায়ীভাবে উন্নতির সময়।

৩. খুব বেশী পটাশিয়াম বের হয়ে গেলে। হাইপার ক্যালসেমিয়া, ভিটামিন ভি ইনটক্সিকেশন এর জন্য।

৪. জন্মগত টিবিউলের রোগ যেমন নেফ্রোজেনিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এবং ফ্যানকোণী সিনড্রোম।

৫ অর্গানিক ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস

৬. ফাংশনাল ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বেসী পানীয় গ্রহণের কারণে

গ. এক্সরে

কিডনীর রোগ নির্ণয় ও এভালুয়েশনের জন্য এক্সরে একটা আবশ্যক সম্পদ। কিডনীর সাইজ, শেপ, পঞ্জিশন ইত্যাদি এক্সরেতে ভালমত বুঝা যায়। কিডনী রোগে অনেক ধরণের এক্সরে করা যায় যার মধ্যে নীচের গুলো প্রধান-

• প্লেন এক্সরে এবডোমেন
• ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাফি
• মিচুরেটিং সিসটোউরোথ্রেগ্রাফি
• রেনাল আর্টারীওগ্রাফি

এরমধ্যে আইভি, ইউ (IVU) বেশী প্রচলিত এবং নীচে বর্ণনা করা হলো: আইভিইউ টেস্ট কিডনি ইউরেটর এবং ব্লাডার পরীক্ষার একটি বহুল প্রচলিত এবং কার্যকরী টেস্ট। সাবধানে করলে এটি একটি নিরাপদ পদ্ধতি। এতে শতকরা ৫ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সামান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং শতকরা ০.০৫ ক্ষেত্রে খুব মারাত্মক জটিলতা প্রকাশ পেতে পারে যার তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। আই, ভি, ইউ করতে যেহেতু অনেক বড় সিরিঞ্জ দিয়ে বেশী পরিমান ঔষধ আই ভি ইউ রুটে দেয়া হয় তাই জনমনে এর জন্য একটা ভীতি আছে। রোগীদের বুঝিয়ে বলতে হবে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মোকাবেলা করার জন্য রেডিওলজিষ্টদের তৈরী থাকতে হবে। যাদের এলার্জী আছে তাদের টেষ্ট ডোজ দিয়ে নেয়া উচিৎ। যাদের ব্রঙ্কিয়াল এজমা আছে, বহুমুত্র আছে মাইলোমাটোসিস এবং সাম্প্রতিক মায়োকর্ডিয়াল ইনফ্রাকশানে আক্রান্ত রোগীদের আই ভি ইউ না করালেই ভাল। কিডনী ফেইলিওর থাকলেও আই ভি ইউ এর প্রয়োজন হলে Late films অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা পর ফিল্ম নেয়া উচিৎ।

আইভিইউ এর উপকারীতা: আইডিইউ থেকে কিডনীর সাইজ, ক্যালিসেস পাটার্ন, ইউরেটার, ব্লাডার ইত্যাদি দেখা যায়। পাথর অথবা টিউমার বোঝা যায়। যদি একদিকের ছোট কিডনী হয় তাহলে নীচের সম্ভাবনাগুলো চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।

• একদিকের পাইলোনেফ্রাইটিস
•জন্মগত হাইপোপ্লেসিয়া
•রেনাল আর্টারী ষ্টেনোসিস
•ইনফারকশন ইত্যাদি

**দুই দিকের ছোট কিডনী হলে-

•ক্রনিক গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
• ক্রনিক বাইলেটারাল পাইলোনেফ্রাইটিস
•বহুমুত্র

•নেফ্রো স্কেলেরোসিস
অনেক সময় আই ভি ইউ তে একটা কিডনী দেখা যায় না বলে অনেকে এই কিডনী ফেলে দিতে চান। এটা মোটেও ঠিক না। যখন IVUতে একটা কিডনী দেখা যায় না তখন দেখতে হবে কিডনীর সাইজ কেমন আছে। যদি কিডনীর স্বাভাবিক সাইজ হয় তা হলে অবস্ট্রাকশান (পাথর ), বহুমুত্র, যক্ষ্মা, রোগ সন্দেহ করা উচিৎ এবং পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ এবং কিছুদিন পর আই ভি ইউ রিপিট করা উচিৎ। যদি আই ভি ইউ করে কি ডনীর সাইজ বড় পাওয়া যায় তাহলে নীচের কারণগুলো চিন্তা করতে হবে।

***এক সাইডের কিডনি বড় হলে-

•এক সাইডের হাইড্রোনেফ্রোসিস
• একসাইডের সিষ্ট
•এক সাইডের টিউমার

**আর দুটো কিডনী বড় হলে চিন্তা করতে হবে

• বহুমুত্র রোগ
•পলিসিসটিক কিডনী
•বাইলেটারাল হাইড্রোনেফ্রোসিস

ঘ. আলট্রাসাউণ্ড (সনোগ্রাফি)
গত কয়েকবছরে আলট্রাসনো গ্রাফি বহুল পরিমাণে কিডনী ও অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা একটা নন ইনভ্যাসিভ টেকনিক যেটা বিপদ বা হ্যাজার্ডমুক্ত। রাডার সম ডিজাইন বা উচ্চ শক্তি সম্পন্ন সাউণ্ড ওয়েভ কাজে লাগিয়ে আলট্রাসাউণ্ড সলিড বা ফ্লুয়িড ফিল্ড অর্গানের সীমানা চিহ্নিত করণ করতে পারে। কিডনীর সাইজ, সেপ, সিসটিক কিডনী রোগ, পাথর, ক্যালসিফিকেশান খুব ভালভাবে নির্ণয় করতে পারে অন্নান্য পদ্ধতিথেকে। রেনাল বায়োপসির জন্য ভাল গাইড হিসাবে কাজ ব্লাডার ও প্রষ্টেটিক টিউমার এর জন্যও এটা ভাল।

•গামা ক্যামেরা ষ্টাডি :
এতে টেমনিটিয়াম ১৯ ডি টি পি এ ইনজেকশান দিয়ে দুটো কিডনী আলাদা অথবা একটি কিডনীর আংশিক ফাংশান বুঝা যায়। এই পদ্ধতিতে দুটো কিডনীর গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশান রেট মাপা যায়। সিরিয়াল ষ্টাড়ি করে অবষ্টাকশনের ফল বা অপারেশনের পরে এই টেষ্ট বেশ সাহায্য করে।

•সিটি স্কানিং:
যদিও ১৯৭৩ সালে ব্রেনের ইমেজিং এর জন্য প্রথম ব্যবহার হয়, এই পদ্ধতি বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং এটাকে এখন শরীরে অন্যান অংগ প্রত্যংগের রোগ নির্ণয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কিডনী রোগের বিশেষত ছোট টিউমার রোগ নির্ণয়ে খুব সাহায্য করে থাকে। তবে কিডনী রোগে আই ভি ইউ যদি ও একটু কষ্টকর তবুও বহুল ব্যবহৃত এবং কিডনী রোগের রোগ নির্ণয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

ঙ. রেডিও নিউক্লিডটাইড দিয়ে স্কানিং:
রেডিও আইসোপ ট্যাগ করা কম্পাউণ্ড (যেমন হিপিপউরেট সোডিয়াম 1131 ফ্লোরমেরেড্রিন Hg2O3, টেকনিটিয়াম 99m Tc) সেনসিটিভ ডিটেকটরস সিনটিলেশন ক্যামেরা দিয়ে রেণাল ব্লাড ফ্লো, সাইজ এবং সেপ, ইউরেটেরাল অবষ্টাকশান, ডাইলেটেড ইউরেটার এবং ব্লাডার ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করা যায়।

চ. রেগাল বায়োপসী
রেগাল ডিজিজ জানার জন্য পারকিউটেনিয়াস রেগাল বায়োপসির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। অনেকের ধারণা যে রেগাল বায়োপসী একটা ভয়ের ব্যাপার কারণ কিডনী খুব ভাসকুলার অগার্ণ এবং ৫/১ কার্ডিয়াকে আউটপুট এর মধ্যে প্রবাহিত হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো যে এর অনেক অদ্ভুত ব্যাপার আছে যা বায়োপসির পক্ষে রায় দেবে। যেমন: কিডনি একটাপেরিটোনিয়ালী থাকে, এটার সংখ্যা দুটো, মজার নীচে অবস্থিত, এটা একটা টাইট ফেসিয়াল কম্পার্টমেন্ট দিয়ে মোড়ানো থাকে ফলে বায়োপসীর ক্ষত থেকে বেশী রক্তপাত হতে দেয় না এবং সর্বোপরি এর সূক্ষ্ম এনাটমি ভাল নমুনা পেতে সাহায্য করে। ব্রাণ ও
রাসকুর মতে জাংগমান ১৯২৪ সালে প্রথম সার্জিকাল রেগাল বায়োপসি সম্পন্ন করেন। এরপর অলওয়াল ১৯৪৪ সনে রেগাল বায়োপসি করেন কিন্তু একজন রোগীর কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। ১৯৫৪ সনে পেরেজ আয়া বায়োপসি করেন। তবে আধুনিক বায়োপসির ইভারসেন এবং ব্রান ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সনের মধ্যে।

টেকনিক্যাল কনসিডারেশন:

কিডনীর বায়োপসি করার আগে নীচে বর্ণিত ফ্যাক্টর গুলো ভালমত বিবেচনা করতে হবে।

ক. এক্সরে এনাটমি: কিডনির উচ্চতা এবং গ্রন্থের স্বাভাবিক অনুপাত লাম্বার ভার্টিব্রার লেভেল ৩.৭ ০.৩৭ সেন্টিমিটার। যেহেতু কিডনি ডেন্স ফ্যাটে মোড়া থাকে সেহেতু এক্সরতে এর একটা রেডিওগ্রাফিক অপাসিটি দেখা যায়। কিডনি প্যারেনকাইমার মত কিডনির হাইলাস সাধারনত ২য় লাম্বার ভার্টিব্রার বিপরীতে থাকে। শ্বাস নেওয়ার সময় ডানদিকের কিডনী প্রথম লাম্বার ভার্টিব্রার নীচে যাবে। খুব জোরে শ্বাস নিলে কিডনী খুব বেশী হলে ৩ সেন্টিমিটার মুভ করতে পারে। কিডনির লোয়ার পোলে বা নীচের প্রাপ্ত এই বায়োপসী করার জন্য আদর্শ, কারণ হোল লোয়ার পোলে সবচেয়ে কম সংখ্যক বড় ভেসেল থাকে এবং এটা খুব কম ভাসকুলার। উপরন্তু এই পজিশনে কিডনী খুবই সাবকিউটিনিয়াসরী থাকে।

See also  কোন ভিটামিনের অভাবে চোখের সমস্যা হয়

খ. কিডিনি লোকালাইজেশনও একারেতে দেখা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় সহজ হোল একটা প্লেন এক্সরে এবডোমেন করা, জি আই ট্রাই পরিষ্কার করার পর। অনেকে অবশ্য ইনট্রাভেনাস পাইলোগ্রাম পছন্দ করেণ। তবে ইন্ট্রাভেনাস পাইলোগ্রাফি করার আগে দেখে নিতে হবে যেন বান (BUN) স্বাভাবিক থাকে বা ৬০ মিঃ গ্রাম এর উপরে না যায়। এজুটেমিক রোগী যাদের ৬০ মিঃ গ্রাম এর উপরে বান ( BUN) থাকে তাদের অনেক সময় আল্ট্রাসাউণ্ড করে কিডনী লোকালাইজেশান করা হয়।

গ. আলট্রাসাউও মেশিন দ্বারা কিডনীর সারফেসের এনাটমি মার্কিং করে আজকাল কিডিনি বায়োপিস করা হয়।

ঘ. পজিশনের তারতম্য এবং কোন ধরণের নিডল ব্যবহার করতে হবে : বিভিন্ন সার্জন বিভিন্ন অবস্থায় কিডনী বায়োপসি করেছেন। পেরেজ আয়া প্রথম লেটারাল এবং পরে প্রণ অবস্থায় সাধারণ ক্যানুলা এবং সিরিঞ্জ দিয়ে কিডনী বায়োপসি করেছেন। এর পর ইভারসন এবং রাণ বসে এবং লেটারাল অবস্থায় বায়োপসী করছেন। পারেট প্রোন অবস্থায় পেটের নীচে একটি বালুর ব্যাগ দিয়ে বায়োপসী করেছেন। তবে বর্তমানে প্রোন অবস্থায় পেটের নীচে বালিশ দিয়ে এই কিডনী বায়োপসী করা বেশী প্রচলিত। বিভিন্ন ধরণের নিডল বায়োপসীতে ব্যবহৃত হয়েছে যেমন ইভারশন নিডল, টার্ফল নিডল, ফ্রাঙ্কলিন মডিফিকেশন, ভিম সিলভার ম্যান নিডল এবং মডিফিকেশন অফ ভিম সিলভার ম্যান নিডল। তবে ভিম সিলভারম্যান নিডলই বর্তমানে বেশী প্রচলিত কিডনীর নিড়ল বায়োপসীর জন্য।

**পারকিউটেনিয়াস রেনাল বায়োপসীর জন্য কি কি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে : যখনই পারকিউটেনিয়াস রেণাল বায়োপসীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তখন নীচের জিনিষগুলো ভালভাবে খেয়াল করতে হবে।

১. রোগীর লিখিত অনুমতি, রোগীকে অপারেটিভপদ্ধতি ও এর জটিলতা বুঝানোর পর।

২. এক্সরে এবং ইনট্রাভেনাস পাইলোগ্রাফী, আলট্রা সাউণ্ড।

৩. রক্তের পরীক্ষা হেমাটোক্রিট, বিটি সিটি, প্লাটিলেট কাউন্ট, প্রথোম্বিন টাইম, বান, গ্রুপআর এইচ।

৪. একটি ট্রেতে সংযুক্ত জিনিষগুলো রাখতে হবে। একটি সার্জিক্যাল ড্রাগ, তিনটি স্টেরাইল টাউয়েল, ১০ মিঃ লিঃ একটি সিরিঞ্জ, তিনটি সুচ (১৯,২৬, ২৩ গেঞ্জি) ১টা ১১ নং ব্লেড, স্কালপেল, ভিম সিলভারম্যান নিডল, বিভিন্ন ফিকেজটিভ এর বোতল, চামড়া ষ্টেরিলাইজেশনের সলুশন, লিউকোপ্লাষ্ট, তুলা, ব্যাঙ্কে, এট্রোপিন, প্রোকেইন। (ছবি-৯)

৫. কিডনীর বায়োপসী সাধারণত রোগীর বিছানায় করাটাই শ্রেয় ( খাতে রোগী মানসিক বিপর্যন্ত না বোধ করতে পারে) কারণ অপারেশন টেবিলে বা অন্য কোন স্থানে নেওয়ার জন্য বায়োপসীর পরে রোগীকে যেন বেশী নাড়া-চাড়া করতে না হয়। রোগীকে প্রোন অবস্থায় একটা নরম বালুশ পেটের নীচে দিয়ে শোয়ান হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন রোগীর শরীর সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে, কাধ নীচের দিকে থাকে এবং মাথা যে বায়োপসী করছে তার থেকে আড়াল থাকে। কাঁধ এবং বিছানা সমান্তরাল থাকে এবং শিরছঁড়া সটান থাকে। এর পর রোগীকে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার নিয়ম বলে একুরে দেখে বায়োপসীর স্থান ঠিক করতে হবে। সাধারণত পছন্দ মত বায়োপসীর স্থান একটা ট্রাইঙ্গেল এর মধ্যে অবস্থিত হবে যার লেটারাল বর্ডার হবে সাক্রোস্পাইনালিস দিয়ে, ইনফেরিওর বর্ডার হবে শেষ রিব দিয়ে এবং উপরের বর্ডার হবে কোয়োডোটাস লাম্বোরাম দিয়ে। এই অবস্থায় বায়োপসী করার জন্য শুধুমাত্র ল্যাটিসিমাস ডরছি এবং সিরেটাস পষ্টেরিওর মাংশ ফুটা করার দরকার। একটা প্রেসার কাফ বেধে ব্লাড প্রেসার এবং পালস দেখতে হবে এবং লিখে রাখতে হবে। এরপর বায়োপসী করার স্থানের চারপার্শ্বে লোকাল দিয়ে নিতে হবে প্রকেইনইনজেকট করে। একটা ছোট লিনিয়ার ইনসিশন দিয়ে নিডল ঢুকাতে হবে এবং যতক্ষন না পর্যন্ত রেনাল ক্যাপসুল অনুভব করা যায়।

রেনাল ক্যাপসুলে নিডল ঢোকার সময় শক্ত বাধা মনে হবে। তারপর রোগীকে শ্বাস ধরতে বলে আরও কিছু প্রকেন রেগাল ক্যাপসুলে ঢুকাতে হবে। এর নিডল বের করে বায়োপসী নিডল ঢুকাতে হবে রোগীর শ্বাস বন্ধ থাকা অবস্থায়। এর পর রোগীকে ২/৩বার শ্বাস নিতে বলে আবার শ্বাস রুদ্ধ রাখতে বলতে হবে এবং রোগীকে বলতে হবে এবার কিছুটা ব্যাথা অনুভব করতে পারে। এর পর ক্যানুলা ৩৬০° রোটেশনে ঘুরাতে ঘুরাতে নিডলকে উপরের দিকে এবং খুব তাড়াতাড়ি পুরা যন্ত্রটা রোগীর থেকে বের করে ফেলতে হবে। স্বাভাবিক রেনাল বায়োপসী দেখতে গেরুয়া থেকে লাল টিসু হবে যেহেতুকটিক্যাল বা কটিক্যাল মেডুলারী জাংশন এর বেশী ভাসকুলালিরিটির কারনে। খালি চোখে বা হ্যাণ্ড লেন্স দিয়ে এটা দেখা সম্ভব। অনেকের বেলায় পেরিরেণাল ফ্যাটসহ ক্যাপসুলও সনাক্তকরা যায়।

এরপর বায়োপসী স্পেসিমেন কোন উপযুক্ত ফিকজেটিভ এর মধ্যে চুবাতে হবে। এবং এরপর প্রেসার ব্যাণ্ডেজ দিয়ে বায়োপসী স্থানটুকু ঢেকে ফেলে রোগীকে চিৎহয়ে শুয়ে রাখা যাবে একটা বালিশের উপরমাথা রেখে । রোগীকে কাশি দিতে, সিগারেট না খেতে বা হাঁচি ফেলতে না করতে হবে যাতে অন্ততঃ পরবর্তী ৪ ঘন্টা পেটের মাসল টাইট হয়ে ইনপ্রেসার বেড়ে না যায় এবং আরও ২৪ ঘন্টা বিছানায় বিশ্রাম নিতে বলতে হবে। রোগীকে ভারী কোন কাজকরতে না বলতে হবে পরের ১০ দিন। তারপর রোগী স্বাভাবিক কাজ করতে পারে।

রেণাল বায়োপসীর গুরুত্ব
নেফ্রোলজীতে রেনাল বায়োপসীর গুরুত্ব অপরিসীম খার কিছু নীচে বর্ণনা করা হলো-

১. কিডনির বিভিন্ন রোগের সঠিক হিষ্টোলজীক ডায়াগনসিস এর জন্য যেমন নেফ্রোটিক সিনড্রোম ইত্যাদি। মাল্টিপল রেণাল রোগ থাকলে কোনটা কতটুকু প্রপোরশন তা দেখার জন্য যেমন : কিমেন ষ্টীল উইলসন ডিজিজ ইত্যাদি।

২. ক্রম অনুসারে রোগের প্রগনোসিস দেখার জন্য।

৩. রিভারসেল কিডনী রোগের সময় এবং ডিগ্রী দেখার জন্য।

৪. সঠিক ঔষধের থেরাপী যেমন পাইলোনেফ্রাইটিস এর কারণে হাইপারটেনশন নেফ্রোটিক সিনড্রোম, কোলাজেন ডিজিজ ইত্যাদি।

৫.খুব তাড়াতাড়ি সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য যখন অন্য ভাবে রোগ নির্ণয় সম্ভব নয় যেমন সারকরডোসিস ইত্যাদি।

৬. প্রগনোসিস দেখা।

৭. গবেষনা কাজের সুবিধার জন্য ই এম, ইমিনোফ্লোরোসেন্স সাইটোলজী ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য।

***কন্ট্রাইণ্ডিকেশান :

১. যদি একটি কিডনী থাকে।
২. ব্রিডিং বা কোয়াগুলেশন কোন ডিফেক্ট থাকে।
৩. খুব তাড়াতাড়ি যে ইউরেমিয়া প্রগ্রেস করছে।
৪. মারাত্মক ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন।
৫. জানা ম্যালীগন্যান্সী।
৬. যে রোগীদের অপারেশন করা যাবে না যেমন ৬ বৎসরের নীচে রোগীর নিউরোলজীক ডিজঅর্ডর, সাইকোসিস, সিভিয়ার রোগ, অসহযোগীতা, মারাত্মক স্কেলেটাল ডিফেক্ট।
৭. যখন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যেখানে বায়োপসী রোগীর জন্য উপকারী হবে না।

৮. রিলেটিভ কনট্রাইণ্ডিকেশন ও

•বেশী স্কুল বা বেশী মোটা হলে
•ছোট কিডনী
•অস্বাভাবিক অবস্থান
•গর্ভাবস্থা

 

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts

Related Posts

Welcome Back!

Login to your account below

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

x

Add New Playlist

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?